কপাল বটে! by আসিফ আহমেদ

একজন সংসদ সদস্য গ্রেফতার হয়েছেন সাংবাদিক পেটানোর অভিযোগে। তার অপরাধ ক্যামেরাবন্দি হয়ে রয়েছে। তিনি এবং তার সঙ্গীরা মিলে যখন একটি টিভি চ্যানেলের সাংবাদিক ও ক্যামেরাম্যানদের হেনস্তা করছিলেন, তখন তা টিভির ক্যামেরায় ধরা পড়ে।
বিষয়টি বুঝতে পারলে তিনি হয়তো এটা মুছে ফেলার ব্যবস্থা করতেন। তবে সবকিছু মুছে ফেলা যায় না। মেজর জিয়াউর রহমান ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ চট্টগ্রামের বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার যে ঘোষণা পাঠ করেছিলেন, তাতে বলা ছিল_ মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষ থেকে এ ঘোষণা প্রদান করা হচ্ছে। জিয়াউর রহমান যখন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান ও রাষ্ট্রপতি, তখন তার অতিউৎসাহী অনুসারীদের কেউ কেউ বলছিলেন_ যেখানে এ ঘোষণার যত টেপ রয়েছে তা থেকে 'বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষ থেকে' কথাটি মুছে ফেলা হোক। কিন্তু সব দেশে সবসময়ই কিছু বুঝ-বিবেচনার লোক থাকে। তারা বলেছিলেন, 'টেপ না হয় মুছে ফেলা গেল, কিন্তু মানুষের মন থেকে বঙ্গবন্ধুর কথা কীভাবে মুছে ফেলবেন?'
সাংবাদিক পিটিয়েছেন সংসদ সদস্য গোলাম মাওলা রনি। তিনি সরকারি দল করেন। বয়সে প্রবীণ মোটেই নন। এই টেলিভিশনই তাকে জনপ্রিয় করেছে। গত কয়েক মাস ধরে মধ্যরাতের টক শোতে তিনি আওয়ামী লীগকে তুলাধোনা করছেন। এমনকি প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত তার সমালোচনার টার্গেট। তাকে প্রায় সব টিভি চ্যানেল সমাদর করে ডেকেছে। সরকারি দল যেসব ভুলত্রুটির জন্য অভিযুক্ত, তিনি সেগুলোকে সঠিক মনে করেছেন। ফলে পাবলিকের বাহবা পেতে সমস্যা হয়নি।
প্রধান বিরোধী দল বিএনপি তাকে নিয়ে সন্তুষ্ট ছিল। কিন্তু এখন মনে হয় না সন্তুষ্ট হবে। তাদের একটি সোর্স ধরা খেয়েছে। বিএনপি আমলেও এমন ঘটনা আমরা দেখেছি। একবার গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বিএনপির একটি অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখার সময় বক্তব্য শর্ট করার জন্য সভাপতি ঘণ্টা বাজালে তিনি বলে ওঠেন, 'ঘণ্টা বাজাইয়েন না। যেভাবে ম্যাডাম দেশ চালাচ্ছেন, তাদের দলের বিদায় ঘণ্টা পাবলিক বাজাইয়া দেবে।' গোলাম মাওলা রনি কেন যে বুঝলেন না, যে টিভি তাকে 'জনপ্রিয়তা' দিয়েছে, তার সাংবাদিকদের ওপর হামলা করা একেবারেই উচিত নয়। এমনটিও হতে পারে যে তিনি মনে করছিলেন, তাকে আর পায় কে!
আওয়ামী লীগ অবশ্য বাহবা নিতে চেষ্টা করছে এটা বলে যে, অন্যায় করলে দলের সংসদ সদস্যকেও ছাড়া হয় না। কিন্তু কেবল গোলাম মাওলা রনিই কি অন্যায় করেছেন? কেবল এই একজনই কি সাংবাদিক পেটাচ্ছেন? চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ ক্যাডাররা সাংবাদিক সমিতির অফিসে তালা দিয়েছে। কারা এ কাজ করেছে সেটা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানে। পুলিশও জানে। কিন্তু কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। গোলাম মাওলা রনি গ্রেফতার হওয়ায় মনে হতে পারে যে, তিনি ক্ষমতাসীনদের সমালোচনা করছেন বলেই সুযোগ পেয়ে তাকে ফাঁসিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ কথা সঠিক নয়, বরং অন্যায় করেছে বলেই তাকে শাস্তি প্রদান করা হচ্ছে_ সেটা প্রমাণ করার দায়ভার পুরোপুরিই শাসক দল এবং সরকারের ওপর বর্তায়।
বাংলাদেশে যারা ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে কোনো না কোনোভাবে যুক্ত থাকে, তাদের একটি অংশ মন্দ কাজ করে। কেউ কেউ বেশি মন্দ কাজ করে। সুযোগ পেলে ভোটের সময় জনগণ তাদের শাস্তি দেয়। তবে বেশিদিন এ অন্যায়ের বিষয়টি মানুষ মনে রাখে না। গোলাম মাওলা রনির অন্যায় নিয়ে অনেকে এখন সোচ্চার। তবে এমনটি অসম্ভব নয় যে বেশিদিন তার কথা মনে থাকবে না। তার মুক্তির দাবিতে পোস্টার পড়বে, মিছিল-হরতাল হবে। সড়ক অবরোধ করা হবে। এক সময় তিনি হয়তো আবির্ভূত হবেন কারা নির্যাতনভোগকারী নেতা ও নিপীড়িত মানুষের দরদি কণ্ঠস্বর হিসেবে। কপাল বটে এ দেশের মানু

No comments

Powered by Blogger.