সীমান্তচুক্তি অনুস্বারে পররাষ্ট্র্রমন্ত্রীর শেষ চেষ্টা- দ্বারে দ্বারে ঘোরা স্বাধীন দেশের জন্য মর্যাদাকর নয়

সীমান্তচুক্তি ও প্রটোকল অনুস্বারের শেষ চেষ্টায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি গতকাল তিন দিনের সফরে দিল্লি গেছেন। ভারতের সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশ-ভারত স্থলসীমান্ত চুক্তির জট ছাড়াতে ভারতের প্রধান বিরোধী দল বিজেপির সাথে আলোচনায় বসবেন ডা: দীপু মনি।
দেশটির বিরোধী দলগুলোর বিরোধিতার মুখে ঝুলে থাকা এই চুক্তি বাস্তবায়নে শেষ চেষ্টা চালাচ্ছেন তিনি। আগামী ৫ আগস্ট থেকে শুরু হতে যাওয়া রাজ্যসভার বর্ষাকালীন অধিবেশনে বিলটি আবারো উত্থাপন করবে ক্ষমতাসীন কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ জোট সরকার। বিলটি পাস হতে পার্লামেন্টে দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের ভোট প্রয়োজন হবে। কিন্তু কংগ্রেস জোটের সেই সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই বলে বিজেপিকে এই বিলে সমর্থন দেয়ার আহ্বান জানাবেন দীপু মনি। ১৯৭৪ সালে স্বাক্ষরিত স্থলসীমান্ত চুক্তি ও ২০১১ সালে স্বাক্ষরিত এসংক্রান্ত প্রটোকল বাস্তবায়ন করতে হলে ভারতের সংবিধানে সংশোধনী আনতে হবে। কিন্তু কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন জোট সরকার রাজ্যসভায় বিল উত্থাপনের উদ্যোগ নিলেও বিজেপি ও আসাম গণপরিষদের বিরোধিতার মুখে একদফায় তা ব্যর্থ হয়েছে। স্থলসীমান্ত চুক্তি ও প্রটোকল বাস্তবায়ন হলে ভারতের ভূখণ্ডে বাংলাদেশের সাত হাজার ১১০ একর আয়তনের ৫১টি ছিটমহল ও বাংলাদেশের ভূখণ্ডে ভারতের ১৭ হাজার ১৬০ একর আয়তনের ১১১টি ছিটমহল বিনিময় হবে। কিন্তু এ বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে বিজেপি বলছে, ছিটমহল বিনিময় হলে ভারতকে প্রায় সাত হাজার একর জমি বেশি হারাতে হবে। কংগ্রেস নেতারা মনে করছেন, স্থলসীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য এটাই শেষ সময়। কারণ, বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকার ও ভারতে মনমোহন সরকার উভয়েই দুই দেশের মধ্যকার যেকোনো ধরনের অমীমাংসিত বিষয় মীমাংসা করতে চায়। কিন্তু তারা বিরোধী পক্ষকে রাজি করার দায়িত্ব নিচ্ছে না। ছিটমহল বিনিময় চুক্তি বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে স্বাক্ষরিত দ্বিপক্ষীয় চুক্তি। এই চুক্তি বাংলাদেশের পক্ষ থেকে অনুমোদনের দায়িত্ব¡ বাংলাদেশ সরকারের। আর ভারতের পক্ষে অনুমোদনের দায়িত্ব সে দেশের সরকারের। কিন্তু বাংলাদেশ যেভাবে ভারতের বিরোধী রাজনৈতিক দলের দ্বারে দ্বারে এই চুক্তি অনুমোদনের জন্য দেনদরবার করছে, তা স্বাধীন দেশের জন্য মোটেই মর্যাদাকর নয়। এর আগে এই ইস্যু এবং তিস্তা নদীর পানি বণ্টনের ব্যাপারে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকারকে রাজি করাতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে অনেক দেনদরবার করেও কোনো ফল হয়নি। সরকারের সাথে সরকারের চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য বিরোধী দল বা রাজ্য সরকারের কাছে তদবির কোনোভাবেই কাক্সিত হতে পারে না। এটি স্বাধীন দেশ হিসেবে বাংলাদেশের জন্য মর্যাদাকরও নয়। আমরা আশা করব, বাংলাদেশ সরকার ভারতের সাথে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক রক্ষার ক্ষেত্রে সমমর্যাদার বিষয়টি নিশ্চিত করবে। একবার বাংলাদেশ তার মর্যাদাকে ভারতের রাজ্যপর্যায়ে নামিয়ে আনলে তা একটি দৃষ্টান্ত এবং এ দেশকে হেয় করার সুযোগ হয়ে দাঁড়াতে পারে। চুক্তি করে তাতে অনুমোদন না দেয়ার কারণে বাংলাদেশ এর আগে বেরুবাড়ি দিয়েও তিনবিঘা করিডোর পায়নি। এ কারণে বাংলাদেশকে এবার ভারতের অনুমোদনের শর্তসাপেক্ষে ছিটমহল বিনিময় বাস্তবায়ন কার্যকর করতে হয়েছে। বৃহৎ প্রতিবেশী দেশ হিসেবে যে উদারতার পরিচয় দেয়ার প্রয়োজন ছিল, তা ভারত দিতে না পারার কারণে এটি হয়েছে। দুই দেশের মধ্যে টেকসই আস্থার সম্পর্ক নির্মাণের জন্য বিনিময় ছাড়া সুবিধা নেয়ার সঙ্কীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি ভারতের থাকা উচিত নয়। বাংলাদেশেরও উচিত সব সময় জাতীয় স্বার্থের বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দেয়া।


No comments

Powered by Blogger.