মোদি ও বিতর্ক সমান্তরাল

নরেন্দ্র মোদি
বিজেপি যেদিন নরেন্দ্র মোদিকে দলের প্রচারাভিযানের প্রধান মুখ হিসেবে তুলে ধরেছে, বিতর্ক ও সমালোচনা সেই দিন থেকেই যেন সমান্তরাল রেললাইনের মতো দলটির চিরসঙ্গী। মোদিকেন্দ্রিক শেষতম বিতর্ক, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে লেখা দেশের ৬৫ জন সাংসদের একটি চিঠি। এতে মোদিকে মার্কিন ভিসা না দিতে অনুরোধ করা হয়। তবে অন্তত আট-দশজন সাংসদ জানিয়েছেন, আট মাস আগে লেখা ওই চিঠিতে তাঁদের সই জাল করা হয়েছে। তাঁরা নিজে এতে সই করেননি। এই খবর প্রচারিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আক্রমণাত্মক বিজেপি এই ‘জুয়াচুরির’ তদন্ত দাবি করেছে। বিজেপির মুখপাত্র নির্মলা সীতারামন বলেছেন, ‘লজ্জার কথা, দেশের নেতাকে রুখতে দেশেরই কেউ কেউ এখন বিদেশের থার্ড আম্পায়ারের দ্বারস্থ।’ মোদিকে মার্কিন ভিসা না দেওয়ার আর্জি জানিয়ে চিঠিটি লেখা হয়েছিল ২০১২ সালের নভেম্বরে। ভারতীয় সংসদের উভয় কক্ষের ৬৫ জন সদস্যের সইসংবলিত ওই চিঠিতে লেখা হয়েছিল, গোধরা দাঙ্গার নায়ককে যেন যুক্তরাষ্ট্র ভিসা না দেয়। আট মাস আগে লেখা সেই চিঠিই আবারও প্রেসিডেন্ট ওবামাকে পাঠানো হয়। আশ্চর্যের বিষয়, এই চিঠির কথা এবারই প্রথম জানাজানি হলো। চিঠিটা পাঠানো হয় সেই সময়ে, যখন বিজেপির সভাপতি রাজনাথ সিং যুক্তরাষ্ট্র সফরে মোদি-মাহাত্ম্য ব্যাখ্যা করার পাশাপাশি তাঁকে ভিসা দেওয়ার জন্যও দরবার করছেন। খবরটি জানাজানি হওয়ামাত্র ক্ষুব্ধ বিজেপি নেতৃত্ব সমালোচনায় মুখর হন। প্রায় একই সময়ে সিপিএমের সাংসদ সীতারাম ইয়েচুরি, এনসিপির সঞ্জয় নায়েক, ডিএমকের একাধিক সদস্যসহ বেশ কয়েকজন দাবি করেন, তাঁরা এমন কোনো চিঠিতে সই করেননি। এ নিয়ে বিতর্ক শুরু হতেই বিজেপি গোটা বিষয়ের তদন্ত দাবি করে। বিজেপির মুখপাত্র শাহনওয়াজ হুসেন বলেছেন, ‘দেশের নেতাকে রুখতে বিদেশের কাছে এভাবে আর্জি জানিয়ে দেশেরই মর্যাদা জলাঞ্জলি দেওয়া হয়েছে।’ রাজনীতির মাঠে সুযোগ নিতে কংগ্রেসসহ অন্যান্য দল মোদির ‘সাম্প্রদায়িক চরিত্রকে’ বড় হাতিয়ার করতে চাইছে। যুক্তরাষ্ট্র তাঁকে ভিসা দেবে কি না তার চেয়েও এই মুহূর্তে বড় হয়ে উঠেছে, মোদির সার্বিক বিরুদ্ধাচরণ। আর সেই বিরুদ্ধাচরণের অন্যতম প্রধান ফলা হয়ে উঠেছে মোদিরই দলের একাংশ। দলীয় নেতৃত্ব তো বটেই, সংঘ পরিবারের প্রধান মোহন ভাগবতের স্পষ্ট সাবধানবাণীকে উপেক্ষা করে একের পর এক বিজেপি নেতা মোদির বিরোধিতা করছেন। এই তালিকায় সাম্প্রতিক সংযোজন মধ্য প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান ও অভিনেতা সাংসদ শত্রুঘ্ন সিনহা। দুজনেই সরাসরি বলেছেন, দেশ ও দলকে নেতৃত্ব দেওয়ার মতো নেতা একজনই, তিনি লালকৃষ্ণ আদভানি। ভারত সফররত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন অন্যদের পাশাপাশি মঙ্গলবার দেখা করেছিলেন বিজেপি নেত্রী সুষমা স্বরাজের সঙ্গেও। সুষমার ঘনিষ্ঠ মহলের দাবি, বাইডেনের সঙ্গে আলোচনায় বিজেপি নেত্রী ভারতীয় নাগরিকদের জন্য ভিসার কড়াকড়ি শিথিল করার বিষয়টি তুললেও মোদিকে ভিসা দেওয়ার প্রসঙ্গটি তোলেননি। সব মিলিয়ে মোদির বিষয়ে দলের একাংশের প্রকাশ্য বিরোধিতা ও বিরোধীদের আক্রমণ ভোটের অন্তত আট মাস আগে থেকেই ভারতীয় রাজনীতিকে মোদিময় করে তুলেছে।

No comments

Powered by Blogger.