শ্যাওড়াপাড়ায় জোড়া খুন: নেপথ্যে নারী, টাকা, না অন্য কিছু! by ইমরান আলী

রাজধানীর শ্যাওড়াপাড়ায় শুক্রবার জুম্মার নামাজের সময় সংঘটিত জোড়া খুনের ঘটনায় রহস্য আরও ঘনীভূত হয়েছে। খুনের মোটিভ সম্পর্কে এখনও ধোঁয়াশায় পুলিশসহ নিহতদের আত্মীয় স্বজন।
এদিকে হত্যাকাণ্ডস্থল শ্যাওড়াপাড়ার শামীম সরণির ফ্ল্যাটে একটি ওড়না পাওয়া যাওয়ায়, এ ঘটনার সঙ্গে নারী ঘটিত বিষয় জড়িত কী না তা নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। আবার ওই ফ্ল্যাট থেকে টাকা ও কম্পিউটারের সিপিও খোয়া যাওয়ায় এটা সাধারণ ডাকাতির কোনো ঘটনা কী না, তা নিয়েও সন্দেহ দেখা দিয়েছে।

শুক্রবার দুপুরে শ্যাওড়াপাড়ার শামীম সরণির ৫২২ নং বাড়ির দ্বিতীয় তলার ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার করা হয় দুই যুবক রাজীব (২৮) ও খায়রুল বাসারের (৩০) লাশ।
shorapara
মাথায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাতের পর শ্বাসরোধের মাধ্যমে তাদের হত্যা করা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানিয়েছে পুলিশ।

ফ্ল্যাটের অন্যান্য বাসিন্দাদের দাবি, তার‍া শুক্রবার জুম্মার নামাজ পড়তে বেরিয়েছিলেন। তবে  রাজীব ও বাসার থেকে যান ফ্ল্যাটে। পড়ে নামাজ পড়ে এসে তারা ওই দুইজনকে মৃত অবস্থায় খুঁজে পান।

ঘটনাস্থলে কথা হয় নিহত বাসারের চাচা মোস্তফা কামালের সঙ্গে। তিনি দাবি করেন, প্রবাসী বোনের স্বামীর পাঠানো টাকা লুটের জন্যই হত্যা করা হয়েছে বাসারকে। আর রাজীব ঘটনার শিকার। এছাড়া ঘটনাস্থলে ওড়না পাওয়া যাওয়ায় হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে কোনো নারীর সংশ্লিষ্টতা আছে বলেও ধারণা করেন তিনি।

মোস্তফা কামাল বাংলানিউজকে বলেন, বাসারের বাড়ি শরীয়তপুর জেলার সদর থানার দেওভোগ গ্রামে। তার বাবার নাম মনির উদ্দিন দেওয়ান।

বাসার বেসরকারি গ্রিন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ করে কোকোলা কোম্পানিতে চাকরিরত ছিলেন। রাজীব সহ আরও ৫ জনের সঙ্গে শ্যাওড়াপাড়ার শামীম সরণির ৫২২ নম্বর বাড়ির দ্বিতীয় তলার ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকতেন তিনি।

বাসারের বোন ফারজানা ইসলাম তপির স্বামী মো. আপেল দুবাই প্রবাসী উল্লেখ করে মোস্তফা কামাল জানান, বৃহস্পতিবার ভগ্নিপতি আপেল দুবাই থেকে ৭ লাখ টাকা বাসারের কাছে পাঠায়। এ টাকার মধ্যে দেড় লাখ টাকা নিয়ে বাড়ি যাওয়ার কথা ছিল বাসারের।

কামালের সন্দেহ এ টাকার কথা ওই ফ্ল্যাটের বাসিন্দাদের কেউ না কেউ জানতো। টাকার লোভেই এ হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়। আর এ কাজে ব্যবহার করা হয় কোনো নারীকে।

তিনি বলেন, বাসার ও রাজীব একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হওয়ায় সুবাদে তার‍া পরস্পরের বন্ধু ছিলেন। প্রায় সবসময়ই তারা একসঙ্গে থাকতেন। সঙ্গত কারণে রাজীবও এই ঘটনার শিকার হয়ে থাকতে পারে বলে সন্দেহ পোষণ করেন তিনি।
shorapara-g-
কামাল জানান, খুনীরা টাকা ও ওই ফ্ল্যাটে থাকা কম্পিউটারের সিপিও নিয়ে গেছে।

এদিকে ওই বাড়ির মালিক সাইদুর রহমান চৌধুরী বাংলানিউজকে জানান, করিম নামের একটি কাঠের দোকানের কর্মচারীও ওই ফ্ল্যাটের বাসিন্দা। জুম্মার নামাজের পর বাসায় ফিরলে করিম তাকে জানান, ফ্ল্যাটের দরজা খোলা যাচ্ছে না। পরে তিনি গিয়ে দেখতে পান ফ্ল্যাটের দরজা সামনে থেকে আটকানো। পরে বাসায় প্রবেশ করে লাশ দেখে তিনি পুলিশে খবর দেন। পুলিশ এসে লাশ দুটি উদ্ধার করে।

তিনি জানান, ৪ তলা বাড়ির দ্বিতীয় তলা ব্যাচেলরদের ভাড়া দেওয়া ছিলো। সেখানে মেস করে ৭ জন থাকতেন। রাজীব সবার থেকে ভাড়া তুলে তাকে দিতেন। কী কারণে এ হত্যাকাণ্ড ঘটতে পারে তা তিনি জানেন না।

এদিকে খুনের ঘটনায় পুলিশ ৩ জনকে আটক করে জিজ্ঞাস‍াবাদ করছে। এরা হলেন ওই ফ্ল্যাটের বাসিন্দা করিম, ফজলু ও মিলন। অপর দুই জন ঘটনার দিন ফ্ল্যাটে ছিলেন না বলে জানা গেছে।

এ ব্যাপারে তেজগাঁও জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা এ বিষয়ে তদন্ত করবো। তদন্তের আগে ঠিক কী কারণে এই হত্যাকাণ্ড ঘটতে পারে, সে বিষয়ে মন্তব্য করা ঠিক হবে না।”

তবে ফ্ল্যাটের বাসিন্দা করিম, ফারুক ও মিলনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সিনিয়র সহকারী কমিশনার বাকি বিল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, “এই খুনের ঘটনায় ৪ জনের বেশি ব্যক্তি জড়িত থাকতে পারে। যে সমস্ত কারণগুলো পাওয়া যাচ্ছে তা বিবেচনায় নিয়ে তদন্ত করা হবে।”

No comments

Powered by Blogger.