শাপলা চত্ত্বরের শহীদের রক্ত কখনো বৃথা যেতে দিব নাঃ আল্লামা শফী by আবু তালেব

যেভাবে সারা দেশের মানুষ আল্লাহর দ্বীনের ইজ্জত রাক্ষার জন্য ত্যাগ স্বীকার করেছেন, শহীদ হয়েছেন, আঘাত পেয়েছেন, আল্লাহ তাআলা নিশ্চয় দেখেছেন। ঢাকার শাপলা চত্ত্বরে আইন-শৃংঙ্খলা বাহীনির হাতে এদেশের উলামায়ে কেরাম ও তৌহিদী জনতা দেশের জন্য শহীদ হয়েছে,
ইসলাম ও ঈমানের হেফাজতের জন্য রক্ত দিয়েছে। তারা কোন গদির জন্য বা কাউকে গদিতে বসানো বা নামানোর জন্য শহীদ হয়নি। নাস্তিক্যবাদের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক আপনারা যে জিহাদ করেছেন, রক্ত দিয়েছেন। ইসলাম ও দেশ রক্ষায় ওলামায়ে কেরামের এই রক্ত ও ত্যাগ কখনো বৃথা যাবে না।  শুক্রবার (৩১ মে) দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসার শিক্ষা ভবনে মাদ্রাসার দাওরায়ে হাদীসের খতমে বুখারী ও দোয়া মাহফিলে আল্লামা শাহ আহমদ শফী উল্লেখিত অভিমত ব্যক্ত করেন।

তিনি আরো বলেন, নাস্তিক্যবাদিরা দেশে যা শুরু করেছিল, আর কিছু দিন যদি ওরা এসব করতে পারত, তবে এই বাংলাদেশে ইসলাম ও ঈমান বাকী থাকত না। মৃত্যু আমাদের একদিন অবশ্যই হবে। সুতরাং মুসলমান কখনো মৃত্যুর ভয়ে ভীত হয় না। আর সেই মৃত্যুটা যদি শাহাদাতের মৃত্যু হয়, তা তো একজন মুসলমানের জন্য অবশ্যই গর্বের বিষয়। ঈমান-আক্বীদা ও ইসলামের জন্য যে কোন পদক্ষেপ যেন শান্তিপূর্ণ ও নিয়মতান্ত্রিক হয়, সে দিকে নজর রাখবেন। কারণ, মুসলমানরা সুশৃঙ্খল জাতি। ইসলামে বিশৃঙ্খলা ও সন্ত্রাসের কোন স্থান নেই।

উপমহাদেশের অন্যতম বৃহৎ ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দারুল উলূম হাটহাজারী মাদ্রাসার দাওরায়ে হাদীস (স্নাতকত্তোর) সমাপনী বর্ষের বোখারী শরীফ এর শেষ ক্লাসের পর আখেরী মুনাজাত ও বিশেষ দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। সমাপনী ক্লাস ও দোয়া মাহফিল পরিচালনা করেন দেশের শীর্ষ আলেম হেফাজতে ইসলামের আমীর ও দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালক আল্লামা শাহ আহমদ শফী। বেলা ১১টা থেকে শুরু হয়ে আছর পর্যন্ত অনুষ্ঠিত এই দ্বীনি সমাবেশে দাওরায়ে হাদীস (টাইটেল) এর সমাপনী দরস সম্পন্ন হয়। বিকেল সাড়ে ৩টায় হাদীস শাস্ত্রের বিশুদ্ধ ও প্রধান কিতাব বুখারী শরীফের আখেরী দরস বা সমাপনী ক্লাস শেষ হয়। মাওলানা নূরুল আলম ও মাওলানা আব্দুল্লাহর পরিচালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন দারুল উলূম হাটহাজারী মাদ্রাসার মুহাদ্দিস আল্লামা হাফেজ শামসুল আলম, মাওলানা মুফতী জসীম উদ্দীন, মাওলানা ফোরকান আহমদ প্রমুখ। দাওরায়ে হাদীস বিদায়ী ক্লাসের ছাত্রদের পক্ষে বক্তব্য রাখেন তরুণ আলেম মাওলানা মুহাম্মদ রহমত উল্লাহ।

বিকাল সাড়ে ৩টায় হাদীস শাস্ত্রের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ও বিখ্যাত গ্রন্থ সহীহ বুখারী শরীফের আখেরী দরস আরম্ভ হয়। দরসের শুরুতে আখেরী হাদীসের পুরো সনদসহ মতন পাঠের পর হযরত আল্লামা শাহ্ আহমদ শফী (দা.বা.) ছাত্রদের উদ্দেশ্যে হাদীসের উপর বিশদ আলোচনা করেন। আলোচনায় হাদীসের বিশুদ্ধ কিতাব বুখারী শরীফ ও বুখারী শরীফের রচয়িতা ইমাম আবু আব্দিল্লাহ মুহাম্মদ ইবনে ইসমাঈল বুখারী (রাহ.)এর কিছু বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, ইমাম বুখারী (রাহ.) দীর্ঘ ১৬ বছর পর্যন্ত সিয়াম সাধনার মাধ্যমে ১,০৮০ জন উস্তাদ থেকে অর্জনকৃত ৬ লক্ষ হাদীস থেকে বাচাই করে ৭,২৭৫টি হাদীস সংকলন করেছেন। প্রত্যেক হাদীস লেখার পূর্বে গোসল করে দুই রাকাত নামায আদায় করে আল্লাহ্ তাআলার দরবারে এই দোয়া করতেন, হে আল্লাহ! হাদীস যদি ভুল হয়, তাহলে শুদ্ধতা অন্তরে ঢেলে দিন। রওজায়ে আক্বদাসের পাশে বসে ৩,৩৮৮টি বাব (অধ্যায়) নির্ধারণ করেছেন। আল্লামা শাহ আহমদ শফী এ ব্যাপারো আরো বিস্তারিত বক্তব্য রাখেন।

খতমে বুখারী ও দোয়া মাহফিলে অন্যান্যদের মাঝে আরো উপস্থিত ছিলেন হাটহাজারী মাদ্রাসার প্রবীণ শিক্ষক মাওলানা কাতেব সুলায়মান আরমান, মাওলানা শফিউল আলম, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহীম (বীর প্রতিক), স্থানীয় সংসদ সদস্য ব্যরিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদসহ শীর্ষ পর্যায়ের ইসলামী নেতৃবৃন্দ, উলামা-মাশায়েখ, বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সরকারী-বেসরকারী কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী, প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাংদিকসহ প্রায় অর্ধ তৌহিদী জনতা শরীক হন। খতমে বুখারী ও দোয়া মাহফিল চলাকালীন সুবিশাল শিক্ষাভবন, আশপাশের অন্যান্য শিক্ষাভবন, ছাত্রাবাস ও মাদ্রাসা ক্যাম্পাসে তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না।

দরস ও হিদায়াতী বয়ান শেষে আল্লামা শাহ্ আহমদ শফী বিদায়ী ছাত্র, উপস্থিত মুসল্লী এবং দেশ ও মুসলিম জাতির কল্যাণ ও শান্তির জন্য বিশেষ মুনাজাত পরিচালনা করেন। মুনাজাতে আল্লামা শাহ আহমদ শফী গুরুতর অসুস্থ প্রখ্যাত মুহাদ্দিস আল্লামা হাফেজ মুহাম্মদ জুনায়েদ বাবুনগরীর সুস্থতার জন্য দোয়া করা হয়। মুনাজাত পরিচালনার সময় ‘আমীন’ ‘আমীন’ রবে সমগ্র জামিয়া ক্যাম্পাসে কান্নার রোল পড়ে যায়। বিদায়ী ছাত্ররা মা-হারা সন্তানের ন্যায় অঝোরে কাঁদতে থাকে।

No comments

Powered by Blogger.