সক্রিয় ২০ চক্র by সিরাজুল ইসলাম

রাজধানীতে অজ্ঞান পার্টি ও মলম পার্টির ১৫-২০টি চক্র সক্রিয়। এসব চক্রের সদস্যদের মধ্যে রয়েছে আহসান আলী, গিয়াস উদ্দিন হাওলাদার, আবদুল সালাম, শেখ আবু জাফর, জাহাঙ্গীর হোসেন, শেখ শহিদুল ইসলাম ওরফে বাবু, বোরহান শেখ,
রফিজ শিকদার, মিন্টু শিকদার, শফিকুল সমদ্দার, মিল্টন শিকদার, হুমায়ুন, আনোয়ার হোসেন, এরশাদ, সাইফুল ইসলাম, মাওলা, রিপন মৃধা, ফজলুর রহমান প্রমুখ। বিভিন্ন সময়ে এরা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হাতে গ্রেপ্তার হলেও ছাড়া পেয়ে আবারও ফিরে যাচ্ছে একই পেশায়। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সংশ্লিষ্ট সূত্র এসব তথ্য জানিয়েছে। সূত্র জানায়, কাজের বুয়া সেজে অজ্ঞান পার্টির নারী সদস্যরা ঢুকে পড়ছে রাজধানীর বাসা-বাড়িতে। টার্গেটকৃত ব্যক্তিদের নানা কৌশলে নেশা জাতীয় দ্রব্য খাইয়ে নগদ টাকাসহ সর্বস্ব হাতিয়ে নিচ্ছে তারা। তাদের খপ্পরে পড়ছে পুলিশ সদস্যরাও। তারা কখনও যাত্রী, কখনও হকার, আবার কখনও সাধারণ ক্রেতা-বিক্রেতাবেশে মিশনে অংশ নেয়। কখনও কখনও চেতনানাশক পাউডার মাখা রুমাল ঝেড়ে শ্বাস-নিঃশ্বাসের মাধ্যমেও যাত্রীকে অচেতন করে। মাঝেমধ্যে অচেতন যাত্রীকে নিজেদের আত্মীয় পরিচয় দেয়। হাসপাতালে নেয়ার নাম করে পরিবহন থেকে নামিয়ে গাড়ি আনার কথা বলে ওই যাত্রীকে রাস্তায় ফেলে দ্রুত পালিয়ে যায়। চক্রের সদস্যরা চা, কফি, জুস, ঝালমুড়ি, শরবত, ডাবের পানি, বিস্কুট, হালুয়াসহ নানা ধরনের নেশা জাতীয় দ্রব্য মেশাচ্ছে। রাজধানীর ৩টি বাস টারমিনাল ছাড়াও অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা মগবাজার, সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল, কমলাপুর রেলস্টেশন, যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা, রামপুরা, বনানী, আরামবাগ, ফার্মগেট, আসাদগেট, শাহজাহানপুর, খিলগাঁও, ফকিরাপুল বাজার,  দৈনিক বাংলা মোড়, মতিঝিল, মিরপুর ও গাবতলী এলাকায় বেশি তৎপর। অজ্ঞান ও মলম পার্টির সদস্যদের প্রধান টার্গেট নগদ অর্থ ও মূল্যবান পণ্যসামগ্রী বহনকারী সাধারণ মানুষ।
সূত্র মতে, পুলিশের তালিকায় অজ্ঞান পার্টির মোস্ট ওয়ান্টেড সদস্যদের একজন আহসান আলী। তার বয়স ৬০ বছর। কোট-টাই পরে। দেখতে নিতান্তই ভদ্রলোক। রাজধানী থেকে দূরপাল্লার বাসে উঠে পাশে যাত্রীর সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলে। তার সঙ্গে থাকে বিস্কুট। পথিমধ্যে নিজে বিস্কুট খায়। পাশের যাত্রীকে খেতে উদ্বুদ্ধ করে। কিছু বিস্কুটে থাকে নেশা জাতীয় দ্রব্য। নিজে খায় নেশামুক্ত বিস্কুট। আর অন্যকে দেয় নেশা মেশানো বিস্কুট। ওই বিস্কুট খাওয়ার ১০-১৫ মিনিটের মধ্যে যাত্রী অচেতন হয়ে পড়ে। এরপর সুযোগ বুঝে মাঝপথে অচেতন যাত্রীর টাকা-পয়সা এবং মোবাইল সেটসহ সর্বস্ব নিয়ে বাস থেকে নেমে পড়ে। গত বছরের অক্টোবরে মহাখালী বাসস্ট্যান্ডে আহসানের কাছে থাকা নেশাজাতীয় বিস্কুট বাসচালক ও হেলপাররা জোর করে তাকে খাইয়ে দেয়। কয়েক মিনিটের মধ্যেই অজ্ঞান হয়ে পড়ে সে। পরে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। জামিনে ছাড়া পেয়ে  সে আবারও নিজেকে একই পেশায় নিয়োজিত করেছে।
ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারের উপ-কমিশনার মাসুদুর রহমান মানবজমিনকে জানান, সাধারণ মানুষ আগের চেয়ে অনেক সচেতন হওয়ায় অজ্ঞান পার্টির সদস্যদের তৎপরতা কমে গেছে। ছিনতাইয়ের জন্যেই মলম পার্টির সদস্যরা সাধারণত মলম ব্যবহার করে। এর সঙ্গে কিছু কিছু সিএনজিচালকও জড়িত। তিনি জানান, রাজধানীতে অজ্ঞান বা মলম পার্টির কতগুলো চক্র জড়িত সে বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলা যাবে না। কারণ ভিক্টিমদের বেশির ভাগই শিকার হন গাড়িতে। এক্ষেত্রে কেউ ঢাকার বাইরে থেকে ঢাকায় আসার পথে। আবার কেউ ঢাকা থেকে ঢাকার বাইরে যাওয়ার পথে। অজ্ঞান বা মলম পার্টির সঙ্গে যারা জড়িত তারা এক জায়গায় অপরাধ করে আর ভুক্তভোগীরা উদ্ধার হয় আরেক জায়গা থেকে। এ কারণে অনেক সময় এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া যায় না। মাসুদুর রহমান আরও জানান, অজ্ঞান বা মলম পার্টির সদস্যরা আন্তঃজেলা চক্রের সদস্য। এসব চক্র এখন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রয়েছে। সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে এদের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে। চলমান প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই এ অভিযান চালানো হচ্ছে। মতিঝিল থানার এক এসআই জানান, মাওলা নামে একজনের নেতৃত্বে ৮-১০ জনের একটি গ্রুপ দীর্ঘদিন ধরে মতিঝিল এলাকায় মানুষকে অজ্ঞান করে সর্বস্ব লুটে নিচ্ছে। সে মতিঝিল থানা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছে একাধিকবার।

No comments

Powered by Blogger.