বাংলাদেশ ব্যাংক ও সরকারি ব্যাংকের জন্য অভিন্ন বেতনকাঠামো আসছে by সৈয়দ সামসুজ্জামান নীপু

প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ ব্যাংক ও সরকারি নিয়ন্ত্রণাধীন ব্যাংকের জন্য একটি অভিন্ন বেতনকাঠামো অনুমোদন করতে যাচ্ছে সরকার। এই বেতনকাঠামো অর্থমন্ত্রীর পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করা হয়েছে।
স্বতন্ত্র বেতনকাঠামো বিবেচনার করতে সচিব কমিটির আগামী বৃহস্পতিবারের বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে। পরে তা চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য আবারো প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হবে। তবে এই বেতনকাঠামোর বাইরে রাখা হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, ডেপুটি গর্ভনর ও নির্বাহী পরিচালকদের বেতন ও ভাতাদি। তাদের বেতনকাঠামো ‘কেস বাই কেস’ ভিত্তিতে বর্তমানে যেভাবে নির্ধারিত হয়, সেভাবেই নির্ধারিত হবে।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও  অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ১১টি স্কেলে এই বেতনকাঠামো তৈরি করা হয়েছে। কাঠামো অনুযায়ী মহাব্যবস্থাপকের (জিএম) প্রারম্ভিক মূল বেতনের প্রস্তাব করা হয়েছে ৫২ হাজার টাকা। ইনক্রিমেন্টসহ একপর্যায়ে তা বেড়ে ৬৪ হাজার টাকা হবে। (৫২০০০-২০০০-দ্ধ৬-৬৪০০০) একইভাবে উপমহাব্যবস্থাপক প্রারম্ভিক বেতন ৪২ হাজার টাকা (৪২০০০-১৭০০-দ্ধ৮-৫৫৬০০)। সহকারী মহাব্যবস্থাপক প্রারম্ভিক বেতন ৩৪ হাজার টাকা (৩৪০০০-১৫০০-দ্ধ১০-৪৯০০০)। সিনিয়র প্রিন্সিপিল অফিসের মূল প্রারম্ভিক বেতন ২৬ হাজার টাকা (২৬০০০-১৩০০-দ্ধ১৪-৪৪২০০)। প্রিন্সিপাল অফিসার প্রারম্ভিক মূল বেতন ২০ হাজার টাকা (২০০০০-১২০০-দ্ধ১৬-৩৯২০০)। সিনিয়র অফিসার মূল বেতন ১৬ হাজার টাকা (১৬০০০-১১০০-দ্ধ১৬-৩৩৬০০)। অফিসার ১৩ হাজার টাকা (১৩০০০-১০০০-দ্ধ৭-২০০০০-ইবি-১১০০দ্ধ১১-৩২১০০)। জুনিয়ার অফিসার (শিক্ষানবিস) ১০ হাজার টাকা (১০০০০-৮০০-দ্ধ৭-১৫৬০০-ইবি-১০০০দ্ধ১১-২৬৬০০)। সহায়ক কর্মচারী (গ্রেড-১) আট হাজার টাকা (৮০০০-৭০০-দ্ধ৭-১২৯০০-ইবি-৮০০দ্ধ১১-২১৭০০) সহায়ক কর্মচারী (গ্রেড-২) ছয় হাজার ৫০০ টাকা (৬৫০০-৬০০-দ্ধ৭-১০৭০০-ইবি-৭০০দ্ধ১১-১৮৪০০)। সহায়ক কর্মচারী (গ্রেড-৩) প্রারম্ভিক মূল বেতন পাঁচ হাজার টাকা (৫০০০-৫০০-দ্ধ৭-৮৫০০ইবি-৬০০দ্ধ১১-১৫১০০)।

সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ব্যাংক ও সরকারি মালিকানাধীন ব্যাংকের বেতনকাঠামোতে সংস্কার আনার জন্য একটি কমিটি গঠন করেছিল সরকার। কমিটি বাংলাদেশ ব্যাংক ও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকে স্বতন্ত্র বেতনকাঠামো তৈরি করে তা পাঠানোর জন্য বলে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক ও সরকারি ব্যাংক থেকে যে বেতনকাঠামো পাঠানো হয়, তা গ্রহণ করেনি এ কমিটি। এর পরিবর্তে সচিব কমিটি ব্যাংকিং খাতের জন্য (বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক বাদে) একটি স্বতন্ত্র বেতন স্কেলের সুপারিশ করে এবং এই সুপারিশ সরকারি বেতন স্কেলের সাথে সম্পর্কিত।

এ ব্যাপারে অর্থ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বেতন স্কেলটি সরকারি বেতন স্কেলের সাথে সংশ্লিষ্ট না হয়ে বাজারে ব্যাংকিং খাতের জন্য যেসব বেতন স্কেল আছে, সেগুলো দেয়া প্রয়োজন। এর জন্য বেসরকারি কয়েকটি বাণিজ্যিক ব্যাংকের বেতনকাঠামো নিয়ে নতুন একটি স্কেল বা কাঠামো তৈরি করা হয়েছে। এতে বেশ কিছু বিষয়ে পরিবর্তন আনা হচ্ছে। এগুলো হলো বাসস্থানভাতা ও তার মধ্যেই থাকবে বাসস্থানের রক্ষণাবেক্ষণ ভাতা। স্বাস্থ্যভাতার মধ্যেই ওষুধের জন্য প্রাপ্যতা অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। আপ্যায়নভাতা থাকলেও লাঞ্চ বা অন্যান্য আপ্যায়নের জন্য স্বতন্ত্র কোনো ভাতা থাকবে না। শুধু নিম্ন বেতনের কর্মচারীদের জন্য শিক্ষাভাতা দেয়া হবে। সর্বোচ্চ দুই সন্তানের জন্য ২১ বছর পর্যন্ত এ শিক্ষাভাতা দেয়া হবে। সব পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী বাড়িভাড়া ও রণাবেণের জন্য মূল বেতনের ৬৫ শতাংশ অর্থ পাবেন। আপ্যায়নভাতা পাবেন মূল বেতনের ১০ শতাংশ। যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারী ব্যাংকের গাড়ি ব্যবহার করেন না, তারা যাতায়াতভাতা হিসেবে পাবেন মূল বেতনের ১০ শতাংশ। এ ছাড়া মহাব্যবস্থাপক থেকে প্রিন্সিপাল অফিসার পর্যন্ত প্রত্যেকে মাসে চিকিৎসাভাতা হিসেবে তিন হাজার টাকা পাবেন। সিনিয়র অফিসার থেকে সাধারণ কর্মচারী পর্যন্ত চিকিৎসাভাতা পাবেন এক হাজার ৫০০ টাকা। সিনিয়র অফিসার থেকে সাধারণ কর্মচারী পর্যন্ত প্রত্যেকে সন্তানদের শিশুভাতা হিসেবে প্রতি মাসে ৫০০ টাকা করে পাবেন।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বর্তমানে সরকারি কর্মচারীদের বছরে ১২টি মাসিক বেতন এবং দু’টি উৎসবভাতা দেয়া হয়। ব্যাংকগুলোতেও একই নীতি বহাল থাকবে। এ ছাড়া ব্যাংকের কর্মচারীরা ব্যাংকের নিয়মানুযায়ী বোনাস পাবেন; অর্থাৎ শুধু মুনাফা করলে একটি নির্দিষ্ট হিসাবে বোনাস দেয়া হবে এবং এ বোনাস দেয়ার সময় বিশেষ বিবেচনায় নির্ধারিত নীতিমালা অনুযায়ী প্রণোদনা বা শাস্তি দেয়া যেতে পারে। আরো বলা হয়েছে, বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, ডেপুটি গভর্নর এবং বাণিজ্যিক ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালকের জন্য বেতন যেভাবে ‘কেস বাই কেস’ ভিত্তিতে নির্ধারণ করা হয়, সেই পদ্ধতি বহাল থাকবে।

No comments

Powered by Blogger.