সিরিজ বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় শরীয়তপুরে ২ জনের মৃত্যুদণ্ড

২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট আদালত চলাকালে আদালত প্রাঙ্গণসহ শরীয়তপুরের চারটি স্থানে সিরিজ বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় শরীয়তপুরে দু’জনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেয়া হয়েছে।
শরীয়তপুর জেলা ও দায়রা জজ গতকাল দুপুরে এ রায় ঘোষণা করেন। এ সময় প্রাঙ্গণসহ পুরো আদালতপাড়া এলাকায় নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়।শ এ মামলার অপর দুই আসামি সিদ্দিকুর রহমান বাংলা ভাই ও শায়েখ আব্দুর রহমানকে ঝালকাঠির সিরিজ বোমা বিস্ফোরণ ঘটনার মামলায় মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করায় তাদের এ মামলা থেকে অব্যহতি দেয়া হয়। আসামি পক্ষের কৌঁসুলির দাবি রায়ে তারা ন্যায়বিচার পাননি।

শরীয়তপুর আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট দেশব্যাপী সিরিজ বোমা হামলা ও বিস্ফোরণ ঘটানোর মতো শরীয়তপুরের ডাক বাংলো মোড়, জেলা প্রশাসকের বাস ভবনের অদূরে, শরীয়তপুর আদালতপাড়া ও পালং বাজার মোশারফের ফলের দোকানের পেছনে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় পালং থানার এসআই বদরুজ্জামান বাদি হয়ে একটি মামলা করেন। পরে পালং থানার এসআই কামাল হোসেন মামলাটি তদন্ত করে সিদ্দিকুর রহমান বাংলা ভাই ও শায়েখ আব্দুর রহমান, শরীয়তপুর জেলার ভেদরগঞ্জ উপজেলার ছয়গাঁও গ্রামের কামরুজ্জামান স্বপন ও ডামুড্যা উপজেলার মালগাঁও গ্রামের আব্দুল মালেক ওরফে মালেক জিহাদীকে আসামি করে মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এ মামলায় ৩০ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণের মাধ্যমে রাষ্ট্রপক্ষ মামলাটি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়। শরীয়তপুরের স্পেশাল ট্রাইব্যুনালের বিচারক শরীয়তপুর জেলা ও দায়রা জজ মো: সাজেদুল করীম গত সোমবার দুপুরে এক জনাকীর্ণ আদালতে ৩৫ পৃষ্ঠার রায়ের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদি পড়ে শোনান। বিচারক রায় পড়ে শোনানোর আগে আসামি ও তাদের স্বজনদের শান্ত থাকার আহ্বান জানান। রায়ের কপিতে আসামিদের স্বাক্ষর করাতে গেলে আসামিরা রায়ের আদেশ না শুনে স্বাক্ষর করতে অস্বীকৃতি জানান। পরে বিচারক স্বাক্ষর করতে বললে আসামিরা রায়ের কপিতে স্বাক্ষর করেন। এরপর দুপুরে বিচারক জেলা ও দায়রা জজ মো: সাজেদুল করীম রায়ে আসামিদের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন। এ সময় চারজন আসামির মধ্যে কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে থাকা শরীয়তপুর জেলার ভেদরগঞ্জ উপজেলার ছয়গাঁও গ্রামের কামরুজ্জামান স্বপন ও ডামুড্যা উপজেলার মালগাঁও গ্রামের আব্দুল মালেক ওরফে মালেক জিহাদী মৃত্যুদণ্ডের আদেশ শুনে নিজেদের নির্দোষ দাবি করে কান্নায় ভেঙে পড়েন। আদালতের বাইরে থাকা আসামিদের স্বজনেরাও কান্নায় ভেঙে পড়েন।

এ মামলার বাদি পক্ষের কৌঁসুলি অ্যাডভোকেট মির্জা হজরত আলী সাঈদী বলেন, এতে ৩০ জন সাক্ষী আসামিদের বিপক্ষে আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছে।

আসামি পক্ষের কৌঁসুলি অ্যাডভোকেট কামরুল হাসান বলেন, ৩০ জন সাক্ষীর মধ্যে ২৮ জন সাক্ষী আসামিদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করেনি। রায়ে আমরা ন্যায়বিচার পাইনি। উচ্চ আদালতে আপিল করব।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি কামরুজ্জামান স্বপনের মা রিজিয়া বেগম কান্নায় ভেঙে পড়ে বলেন, আমার ছেলে ঢাকায় মাদরাসায় পড়ালেখা করত। ঘটনার দিন সে ঢাকা তা’মীরুল মিল্লাত মাদরাসায় কাস করছিল। স্বপন বাড়ি আসার পর তাকে মিথ্যা মামলা দিয়ে পুলিশ ধরে নিয়ে যায়।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অপর আসামি আব্দুল মালেকের মা কাঞ্চনমালা আদালতের রায় শোনার পর কান্নায় মাটিতে লুটিয়ে পড়ে বলেন, আমি উকিলও রাখতে পারিনি। আমি উচ্চ আদালতে মামলা করতে টাকা পাবো কোথায় আপনারা আমার ছেলেকে বাঁচান।
       

No comments

Powered by Blogger.