বিশেষ সুবিধা দিয়ে পুঁজিবাজারে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যাংকগুলোর লোকসান কমাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক by আশরাফুল ইসলাম

বিশেষ সুবিধা দিয়ে পুঁজিবাজারে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যাংকগুলোর লোকসান কমাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। পুঁজিবাজারে ব্যাংকের নিজস্ব বিনিয়োগে যে পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তার বিপরীতে প্রচলিত তিন মাসের প্রভিশন সংরক্ষণের বাধ্যবাধকতার ক্ষেত্রে বিশেষ ছাড় দেয়া হবে।
এখন ব্যাংকগুলো পাঁচ কিস্তিুতে প্রভিশন সংরক্ষণ করবে। আর এ প্রভিশন সংরক্ষণ না করে সমপরিমাণ অর্থ আয় হিসেবে দেখাতে পারবে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক। এতে অনেক ব্যাংকই বছর শেষে নিট লোকসানের হাত থেকে বেঁচে যাবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি সূত্র। ২০১০ সালে শেষের দিকে পুুঁজিবাজারের ধস শুরু হওয়ার পর অনেক ব্যাংক শেয়ার ছেড়েছিল। এতে ওই বছরে ব্যাংকগুলো অস্বাভাবিক মুনাফা করেছিল। পুঁজিবাজারে মুনাফার অংশ থেকে নগদ লভ্যাংশ দিতে ব্যাংকগুলোর ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছিল। এতে ব্যাংকগুলোর হাতে রিটেইন আর্নিং অর্থাৎ বাড়তি অর্থ ছিল।

তবে পুঁজিবাজারে লোকসানের ধারা অব্যাহত থাকায় ২০১১ সালে ব্যাংকগুলোর মুনাফার প্রবৃদ্ধি কমে যায়। যেসব ব্যাংকের বাজারে বেশি শেয়ার ছিল তাদের মুনাফার হার ২০১০ সালের তুলনায় ২০১১ সালের তুলনায় অস্বাভাবিক হারে কমে যায়। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী ২০১০ সালের পুঁজিবাজারের মুনাফা লভ্যাংশ দিতে না পারায় তা ব্যাংকগুলোর আশীর্বাদ হিসেবে দেখা দেয়। ২০১১ সাল শেষে ব্যাংকগুলো পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে যে পরিমাণ লোকসান দেয়, তার প্রভিশন সংরক্ষণ করে আগের বছরের রিটেইন আর্নিং দিয়ে। সূত্র জানিয়েছে, ওই সময় কোনো কোনো ব্যাংকের মুনাফা থেকে ১০০ কোটি টাকা পর্যন্ত প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হয়েছে।

কিন্তু ২০১২ সালেও পুঁজিবাজারে পতনের ধারা অব্যাহত থাকে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক পরিসংখ্যান মতে, ২০১০ সালের ডিসেম্বরে ব্যাংকগুলোর পুঁজিবাজারে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার শেয়ার ছিল। কিন্তু বাজার দর কমতে কমতে ২০১১ সালের ডিসেম্বরে এসে তা ১২ হাজার কোটি টাকায় নেমেছে। গত ডিসেম্বর শেষে তা আরো কমে ৯ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। ফলে গেল বছরে ব্যাংকগুলো যে পরিমাণ লোকসান করেছে তার প্রভিশন রাখতে গিয়ে মুনাফায় কুলাচ্ছে না। এতে ব্যাংকগুলোর নিট লোকসান বেড়ে যাচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক বিষয়টি আঁচ করতে পারে গত বছর সেপ্টেম্বর শেষের মুনাফার চিত্র দেখে। সেপ্টেম্বরের হিসাব থেকে দেখা যায়, প্রভিশন শেষে বেশির ভাগ ব্যাংকের প্রকৃত মুনাফা নেতিবাচক হয়ে গেছে এবং তাতে পরিষ্কার হয়ে যায় যে, বছর শেষে বেশির ভাগ ব্যাংকের মুনাফা নেতিবাচক হয়ে যাবে।

প্রচলিত নীতিমালা অনুযায়ী, ব্যাংকগুলোর লোকসানের অংশ মুনাফা থেকে প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হয়। ক্ষেত্র বিশেষে লোকসানের শতভাগ প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হয়। আর প্রভিশন সংরক্ষণ করতে গেলে মুনাফা কমে যায়; মুনাফা কম হলে এক দিকে সরকারের রাজস্বর পরিমাণ কমে যায়। কারণ ব্যাংকগুলো যে পরিমাণ পরিচালন মুনাফা করে তার সাড়ে ৪২ শতাংশ করপোরেট ট্যাক্স হিসেবে আদায় করে সরকার। মুনাফা কমে গেলে সরকারের করপোরেট ট্যাক্সও কমে যাবে। অপর দিকে ব্যাংকগুলোকে বছর শেষে ডিভিডেন্ড কম দিতে হবে।

ব্যাংকগুলোকে ব্যাপক ভিত্তিতে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার হাত থেকে বাঁচানোর জন্য একটি উপায় বের করে দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। যেসব ব্যাংক পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ওই সব ব্যাংকের তিন মাসের প্রভিশন সংরক্ষণের ওপর বিশেষ ছাড় দেয়া হয়। অর্থাৎ বছর শেষে তারা তিন মাসের প্রভিশন সংরক্ষণ না করে পরে পাঁচ কিস্তিুতে পরিশোধ করতে পারবে।
       

No comments

Powered by Blogger.