রাজনৈতিক অপরাধীরা বাদ- ভারতের সাথে বন্দিবিনিময় চুক্তি মন্ত্রিসভায় অনুমোদন

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে প্রস্তাবিত বন্দিবিনিময় চুক্তির খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। তবে রাজনৈতিক অপরাধে আশ্রয় নেয়া ও ন্যূনতম এক বছরের কম অর্থাৎ লঘুদণ্ডে দণ্ডিত অপরাধীদের ক্ষেত্রে এই চুক্তি প্রযোজ্য হবে না।
এ ছাড়া ছোটখাটো অপরাধ করে যারা ভারতে আশ্রয় নেবে তাদের ক্ষেত্রেও এটা প্রযোজ্য হবে না। গতকাল সোমবার সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ প্রস্তাবে চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে এ বৈঠকে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

ভারতের সাথে বাংলাদেশের বন্দিবিনিময় চুক্তির প্রস্তাব অনুমোদন ছাড়াও মুক্তিযোদ্ধা গণকর্মচারী অবসর আইন-২০১৩, পল্লী সড়ক রণাবেণ নীতিমালা, মাতৃদুগ্ধ বিকল্প শিশুখাদ্য বিপণন নিয়ন্ত্রণ আইন-২০১৩ নীতিগত অনুমোদন  দেয়া হয়। মন্ত্রিসভার বৈঠকে ২৮ এপ্রিলকে জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস ঘোষণার প্রস্তাবও অনুমোদন দেয়া হয়েছে। তবে আরো যাচাই-বাছাইয়ের জন্য যুব সংগঠন নিবন্ধন ও নিয়ন্ত্রণ আইন-২০১৩ ফেরত পাঠানো হয়েছে। বৈঠকে বর্তমান সরকারের চার বছরের কর্মকাণ্ড এবং বিগত বিএনপি সরকারের চার বছরের কর্মকাণ্ডের তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরা  হয়। এ ছাড়া সভায় ২০১২ সালের চতুর্থ ত্রৈমাসিক (অক্টোবর-ডিসেম্বর) প্রতিবেদন তুলে ধরা হয়েছে।

বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব মোশাররাফ হোসাইন ভূইয়া সাংবাদিকদের বলেন, ফৌজদারি মামলায় এক বছরের ঊর্ধ্বে দণ্ডপ্রাপ্তরা বন্দিবিনিময় চুক্তির আওতায় পড়বে। তিনি বলেন, অপহরণ, খুন, হত্যা, অস্ত্র মামলার আসামিরা এ আইনের আওতায় পড়বে। তবে এক বছরের নিচে সাজাপ্রাপ্তরা এ চুক্তির আওতায় পড়বে না। এর মধ্যে রয়েছে ছিঁচকে  চোরসহ অন্যান্য লঘুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। ইতঃপূর্বে বাংলাদেশ থাইল্যান্ডের সাথে এ ধরনের একটি চুক্তি স্বার করেছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

ভারত বাংলাদেশের মধ্যে বন্দিবিনিময় চুক্তির গুরুত্ব তুলে ধরে  মোশাররাফ হোসাইন ভূইয়া বলেন, এর আগেও বেশ কয়েকবার  বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে মন্ত্রী ও সচিবপর্যায়ের বৈঠক হয়েছে। সম্প্রতি ভারতের মন্ত্রিসভা বন্দিবিনিময় চুক্তির একটি খসড়া অনুমোদন করেছে।

উল্লেখ্য, আগের বৈঠকের ধারাবাহিকতায় গতকাল সোমবার  হোটেল রূপসী বাংলায় দু’দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠক এবং বন্দিবিনিময় চুক্তিসহ দু’টি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

পল্লী সড়ক রণাবেণ নীতিমালা সম্পর্কে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আমাদের যোগাযোগ কাঠামোয় গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে পল্লী সড়ক। এর আয়তন প্রায় তিন লাখ কিলোমিটারের বেশি। এ ছাড়া ১১ লাখ ৮৩ হাজার মিটার ব্রিজ ও কালভার্ট রয়েছে। এগুলো রণাবেণ জরুরি। তাই এ নীতিমালা করা হয়েছে।

মাতৃদুগ্ধ বিকল্প শিশুখাদ্য বিপণন আইন প্রসঙ্গে সচিব বলেন, বাজারের প্রচলিত দুধ বিপণন ও বাজারজাতকরণ নিয়ন্ত্রণ করতে এই আইন অনুমোদন করা হয়েছে। এতে অপরাধের বিচার দুই বছর থেকে বাড়িয়ে তিন বছর এবং অর্থদণ্ড পাঁচ হাজার টাকা থেকে পাঁচ লাখ টাকা করা হয়েছে। ১৯৮৪ সালের আইনে এ সাজা ছিল, যা এখন পর্যন্ত বহাল রয়েছে। গণকর্মচারী অবসর আইন সম্পর্কে সচিব বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের অবসরের সময়সীমা ৫৯ থেকে বাড়িয়ে ৬০ বছর করা হয়েছে একটি আদেশের মাধ্যমে। কিন্তু বিধি হলো, কোনো আদেশের ৯০ দিনের মধ্যে তা আইন করতে হবে। তাই এটি মন্ত্রিসভায় নীতিগত অনুমোদন পেয়েছে। এর পর চূড়ান্ত হয়ে রাষ্ট্রপতির অনুমতিক্রমে তা সংসদে যাবে।
       

No comments

Powered by Blogger.