সিডনির মেলব্যাগ- অস্ট্রেলিয়া ডে, প্রবাসী প্রজন্মের নতুন দর্শন- অজয় দাশ গুপ্ত

গত সপ্তায় অস্ট্রেলিয়া ডে উদ্যাপনের জন্য পাওয়া বাড়তি একদিনের ছুটি উপভোগ করার আনন্দে মজেছিলাম আমরা। জাতীয় দিবস বা যে কোন ছুটির সঙ্গে এ দেশে বাণিজ্যের সম্পর্ক নিবিড়। দেশপ্রেমের ঢংই আলাদা।
জাতীয় ইসু্য, জাতীয় পতাকা, জাতীয় পরিচয়বাহী যে কোন প্রতীকের যথেচ্ছ ব্যবহার চলে এখানে। দোকানে দোকানে সাজানো পতাকাখচিত ব বন্ধনী, গেঞ্জি, এমনকি অন্তর্বাসেই তার প্রমাণ রয়েছে। হুকেয়ার্স বলে কথা, বারো জাতির মানুষ ছত্রিশ দেশ ঘুরে বসতি গেড়েছে, নাড়ির টান নেই, ফলে থাকতে থাকতে যতটা প্রেমভোগ করতে করতে অথবা উন্নয়নের ছোঁয়া পেতে পেতে যেটুকু মায়া বা যেটুকু টান, সে ভরসাতে সে বিশ্বাসে গড়ে ওঠা ভুবনে এখন দেশাত্মবোধ কিঞ্চিৎ মজবুত, শক্ত ভিডিও পেতে চাইছে সে, বলাবাহুল্য এর উৎস ও শক্তি তারুণ্য। বাংলাদেশী প্রবাসী প্রজন্মও পিছিয়ে নেই। পিছিয়ে থাকবে কোন দুঃখে? এদেশে হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, আহমেদিয়া, কাদিয়ানী, বিজেপি, কংগ্রেস বা আদিবাসী, অনাদিবাসী দ্বন্দ্ব নেই। যা ছিল তা পুরনো ও বাকি ইতিহাস। নব্য অস্ট্রেলিয়ানরা এক ছাদ, এক আকাশের তলায় এক বিশ্বাসেই বড় হয়ে উঠছে, রাগবি, ক্রিকেট, সকার, টেনিস, হকি, ফুটবল মিলে নতুন এক পরিচয় জগত। শিল্প চলচ্চিত্র মিডিয়ার ভুবনে নব্য অজি কালচার হলিউড মুখিনতা এড়িয়ে এদেশের মাটি ও শেকড়ে নিজের অস্তিত্ব খুঁজতে ব্যস্ত। আমাদের সন্তানেরা সবসময়ই মূলধারা অনুগামী। তাদের কাছে এ দিবসটির তাৎপর্য ও গুরুত্বই আলাদা, সকাল থেকে সূর্যাস্ত অবধি জাতীয় অনুষ্ঠানমালা দিবসটির বর্ণাঢ্যতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে অভ্যস্ত তারুণ্যকে নিয়ে ভয়ভীতির প্রশ্নই ওঠে না। মুশকিলটা আমাদের নিয়ে। মধ্যবয়সে বা শিাজীবন শেষে দেশত্যাগী মানুষের আকাঙ্া বিত্ত বাসনার গণ্ডি এড়াতে পারে না, যেটুকু পূরণ হলে তার অন্তগর্ত চাওয়া ধীরে ধীরে প্রকাশ্য হতে শুরু করে। থিতু হয়ে বসা বাংলাদেশী অভিবাসীরা এখন এ পর্যায়ে। যে কোন উপায়ে পরিচিতি আর নাম কেনার জন্য মরিয়া, আবারও বলি সবাই নয়, কেউ কেউ। এই কেউ কেউদের জীবনে, জীবনাচরণে অস্ট্রেলিয়া ডে' বা এই দিবসটির স্থান প্রায় শূন্যের কোঠায়। ইতিহাস ও এ দেশের রাজনীতি নিয়ে মাথাব্যথা নেই বলে নেহায়েত ভূরি ভোজন, বাঙালী আড্ডা অথবা এর ওর বাড়ি ঘুরে বেড়ানো। বন্ধের দিনটি এভাবেই হারিয়ে যায়। উৎসাহী ও এদেশের প্রতি বিশ্বস্ত, অনুগত এবং কৃতজ্ঞজনেরা হার্বার স্ট্রীটে, নীলজলে পাল তোলা স্টীমারে ঘুরে বেড়ানো, অপেরা হাউস দর্শন, চিড়িয়াখানা দেখতে যায়। খুব কম বাঙালিই দিনটিকে ঘিরে আয়োজিত এ দেশীয় অনুষ্ঠানমালার সঙ্গে একাত্ম হতে পারে। এ বছর একটি ব্যতিক্রম উপমহাদেশের জনগণকে চুম্বকের মতো টেনে নিয়ে গিয়েছিল।
স্থানীয় প্যারামাটা পার্কে অতিথি হয়ে এসেছিলেন অস্কার জয়ী এ আর রহমান। জনশ্রুতি ছিল পার্কের ফটক বারোটার কাঁটা পেরুলেই বন্ধ হয়ে যাবে। ফলে বাঙালী অবাঙালী নির্বিশেষে ছুটেছিলেন, কেউ কেউ সকালবেলার প্রাতরাশ সেরে অপো করেছেন, "কখন আসবেন কবি, কখন আসবেন কবি। সুরে জাদুকর যখন মঞ্চে তখন সন্ধ্যা উত্তীর্ণ। তাতে কি লাখো মানুষত জেগে, লাখো হৃদয় অপোয়। এ আর রহমানের আগমনের কারণ দুটো, অস্ট্রেলিয়া ডে উপল েমাসব্যাপী অনুষ্ঠানের অতিথি হওয়া, অন্যটি রাজনৈতিক। মেলবোর্নভিত্তিক বর্ণদাঙ্গায় আহত, নিহত ও সন্ত্রস্ত ভারতীয়দের উদ্বেগ প্রশমনে সংস্কৃতির এস্তেমাল। এই দাঙ্গা ভারতীয় যুবা তথা পড়ুয়াদের মনে ভয়াবহ আতঙ্ক ও ক্রোধের সঞ্চার করেছে। এ আর রহমান সে উষ্ণ তে সুরের বারিধারা। আয়োজক অস্ট্রেলিয়ানরা সেটা জানতেন। এত গেল প্রাক্ কথন। খোদ অস্ট্রেলিয়া ডে'র সন্ধ্যায় এই শহরে জানামতে প্রথমবারের মতো ভোজসভা আর আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল দ্বিধাবিভক্ত সিডনি আওয়ামী লীগের একাংশ, মুক্তিযোদ্ধা হারুন আজাদ, তরুণ নেতা, শামীম আল নোমান, মোসলেহ উদ্দীন খুসবু, শাহ আলম_ এদের দেশের পাঠক বা সিডনির বাইরের কারো চেনার কথা নয়। ধরে নেয়া যেতে পারে এই নামগুলো যে কোন প্রবাসী বাঙালীর। যারা মূলধারার সঙ্গে একাত্ম হয়ে নৃতাত্তি্বক বাঙালিত্ব প্রকাশে উৎসাহী। আওয়ামী লীগ দেশে যেমন বিদেশেও তার প্রতিচ্ছবি বহুদা বিভক্ত। আওয়ামী লীগ করলে অনেক লাভ, মুক্তিযুদ্ধের নাম ভাঙ্গানো সহজ, জাতীয় দিবসগুলোর ওপর খবরদারি করা যায়। বঙ্গবন্ধু পরিষদের আন্তর্জাতিক ব্যাপ্তি ও যশের ভাগী হওয়া যায়। প্রগতিশীল পরিচয় দেয়াটাও কঠিন ঠেকে না দীর্ঘকালের আন্দোলন সংগ্রাম বঙ্গবন্ধু থেকে শেখ হাসিনা পর্যন্ত বিস্তৃত প্রোপটের কারণে প্রবাসে এ দলটির শাখা নিয়ে হুলস্থুল বেঁধেই আছে। সিডনির অবস্থাও বেগতিক, খিস্তি খেউড়, অর্ধোশাদ, ্যাপাদের দৌরাত্ম্য আছে। সরস্বতী পুজোর অনুষ্ঠানে এমনই এক কথিত প্রবাসী আওয়ামী নেতাকে দেখলাম শালীনতা বর্জিত ভাষায় হুঙ্কার ছাড়তে। অপরাধীরা কেউ শিাবিদ, কেউ প্রফেশনাল, কেউ লেখক কেউবা নিরীহ দেশপ্রেমী, এত বাকবিতণ্ডা, জ্বলন্ত আগ্নেয়গিরির ওপর দাঁড়িয়ে অস্ট্রেলিয়া যে উদ্যাপনে তাই ঘরে বসে থাকতে পারিনি। এ দেশে বা প্রবাদের যে কোন দেশে সে দেশের মূলধারার সঙ্গে একাত্ম হতে না পারলে কোন কিছুই মূল্য লাভ করতে পারবে না। অস্ট্রেলিয়া ডে বা এই দিবসটি একদিকে যেমন উৎসবের, অন্যদিকে আদিবাসী এ্যাবরজিনালদের জন্য প্রচণ্ড শোকের। আমাদের জাতীয় দিবসগুলোর কথা ভাবুন, রক্তমাখা, বেদনাদীর্ণ, সংগ্রামমুখর অথচ গৌরবের। এমন একটি দিনের প্রাতিষ্ঠানিক স্মরণ এদেশের প্রতি ভালবাসা ও কৃতজ্ঞতারই বহিপর্্রকাশ নয় কি?
ঢট্রথলর্যটটনমহ দর্মবটধফ.ডমব

No comments

Powered by Blogger.