নতুন কোচ থাকবেন তো?

বাইরে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। হজরত শাহজালাল বিমানবন্দরে ভিআইপি লাউঞ্জে অসংখ্য টিভি ক্যামেরা। তা দেখে আশপাশের সবারই কৌতূহলী দৃষ্টি, ‘কে এলেন?’
বাংলাদেশ ফুটবল দলের নতুন কোচ নিকোলা ইলিয়েভস্কি। এসেছেন মেসিডোনিয়া থেকে, ৫৫ হাজার ৫৯৮ বর্গমাইলের বাংলাদেশের আয়তনের তুলনায় যে দেশটি অর্ধেকেরও কম (২৫ হাজার ৭১৩ বর্গমাইল)। ১৬ কোটি মানুষের দেশে চাকরি নিয়েছেন ২০ লাখ মানুষের দেশের বাসিন্দা।
তাঁকে স্বাগত জানাতে বিমানবন্দরে বাফুফের কর্মকর্তা-কর্মীরা গেলেন ফুলের তোড়া নিয়ে। বেশ হাসিখুশিই দেখাচ্ছিল কালো স্যুট পরা ভদ্রলোককে। ২৬ ঘণ্টা ভ্রমণের ক্লান্তি কাটিয়ে ঘণ্টা তিনেক বাদেই এলেন বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে আবাহনী-মোহামেডান ম্যাচ দেখতে। কী দেখলেন?
ইলিয়েভস্কি কথা বলেন গ্রিক ভাষায়। ভাঙা ভাঙা ইংরেজি জানেন। গলার স্বর খুবই নিচু। শোনার জন্য মুখের কাছে কান নিতে হয়। এ এক বড় সমস্যা। বিমানবন্দরেই সেটি ভালো করে বোঝা গেল। মাঠে আসার পর আরও। তবে তাঁর অভিব্যক্তি বলে দিল, দুই প্রধানের ম্যাচ দেখে খুশি নন। আজ আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনের আগে তেমন কিছুই বলতে চাইলেন না। তবে কাল বিমানবন্দরে নেমে যা বললেন, তাতে ‘বাংলাদেশে এসে আমি খুশি’ জাতীয় অনুভূতিই প্রকাশ পেল।
পূর্বসূরি রবার্ট রুবচিচ ২ জুন ভোর রাতে কাউকে না বলেই চলে গেছেন। নতুন কোচ হিসেবে বাফুফে যাঁকে চূড়ান্ত করেছিল, সেই মেসিডোনিয়ান কোচ জর্জি ইয়োভানভস্কিও এলেন না বাংলাদেশ দল নিয়ে পাকিস্তান যাওয়ার ভয়ে। তাঁরই স্বদেশি এবং মেসিডোনিয়া জাতীয় দলের সাবেক কোচ এসে বাফুফেকে চিন্তামুক্ত করেছে। কালকের দিনটি বাফুফের কাছে ‘কোচ নিয়ে চিন্তা মুক্তি দিবস’ হতে পারে!
কিন্তু বড় প্রশ্ন—ইলিয়েভস্কি বাংলাদেশকে বেছে নিলেন কেন? ‘জাতীয় দলের কোচ হওয়া বিশেষ কিছু। সেটি চীন, ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, বাংলাদেশ যে দেশই হোক না কেন’?—বললেন বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবলে দলের ১৫তম বিদেশি কোচ।
ইলিয়েভস্কি জানেন না, এ দেশে এসে কোচরা কাজ না পেয়ে শুয়েবসে থাকেন। কিছুদিন পর চলে যান। তাঁর বেতনটাও ঠিকমতো দিতে পারে না ফেডারেশন। কাজের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় এবং অত্যাবশ্যকীয় উপাদান চেয়ে পান না। ত্যক্তবিরক্ত হয়ে পরে চলে যেতে হয়।
৫৬ বছর বয়সী মুখে স্মিত হাসি নিয়ে বলে গেলেন, ‘আমি আপাতত এক বছরের জন্য এসেছি। তবে আশা করছি, এ দেশ আমার ভালো লাগবে এবং দীর্ঘ মেয়াদেই থাকতে পারব।’
তিনি এগিয়ে যেতে চান নিজের কোচিং দর্শন নিয়ে, ‘আমি জয়ী হতে ভালোবাসি। তবে যেতে চাই ধাপে ধাপে। আমি চাই আক্রমণাত্মক খেলতে। কোয়ালিটি এবং ক্যারেক্টারিস্টিক প্লেয়ারই আমার পছন্দ।’
খেলোয়াড়ি জীবনে স্ট্রাইকার হিসেবে শুরু করে ৮ বছর পর মিডফিল্ডার হয়ে গেছেন। অবিভক্ত যুগোস্লাভিয়ার হয়ে ১৯৮২ বিশ্বকাপ খেলেছেন। কিন্তু এখন কোচিং নিয়েই কথা বলতে বেশি আগ্রহ তাঁর, ‘মেসিডোনিয়ার হেড কোচ ছিলাম ২১টি ম্যাচে। অর্ধেকেরও বেশি জিতেছি। স্কলারির পর্তুগালের বিপক্ষে আমার মেসিডোনিয়া হেরেছে ১-০ গোলে। এরিকসনের ইংল্যান্ডের সঙ্গে ২-২ করেছি আমরা।’
বর্তমান সময়ের সেরা কোচদের মধ্যে কাকে পছন্দ? মরিনহো, ফার্গুসন না গার্দিওলা? ‘আমি নিকোলা...’ বলে প্রশ্নটি এড়িয়ে গেলেন।
ততক্ষণে বিমানবন্দর থেকে বেরোনোর তাড়া কর্তাদের [বাদল রায়, হাসানুজ্জামান (বাবলু), ইমতিয়াজ সুলতান (জনি), ছাইদ হাসান (কানন)]। বেরোনোর আগে বিশ্বকাপ প্রাক-বাছাইয়ে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৩ জুলাই ফিরতি ম্যাচে লাহোরে যেতে তাঁর আপত্তি নেই জানিয়ে দেন, ‘পাকিস্তানে যেতে আমার সমস্যা নেই।’
২৯ জুন ঢাকায় বাংলাদেশ-পাকিস্তান প্রথম ম্যাচ। আজই বিকেএসপিতে প্রাথমিক দলের সঙ্গে যোগ দেওয়ার কথা। এসেই কাজ পেলেন। কিন্তু বাফুফে কি তাঁকে ধরে রাখতে পারবে?

No comments

Powered by Blogger.