আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা ওবামার

আফগানিস্তান থেকে পর্যায়ক্রমে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার করা হবে। আগামী এক বছরের মধ্যে অতিরিক্ত ৩৩ হাজার সেনা দেশটি থেকে ফিরিয়ে নেওয়া হবে। ১০ হাজার মার্কিন সেনা ফিরিয়ে নেওয়া হবে এ বছরই। এর মাধ্যমে শুরু হবে আফগান যুদ্ধের সমাপ্তি। গত বুধবার টেলিভিশনে দেওয়া ১৪ মিনিটের ভাষণে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এসব ঘোষণা দেন।
প্রায় ১০ বছরের টানা যুদ্ধে বিধ্বস্ত আফগানিস্তানে এখন এক লাখেরও কিছু বেশি মার্কিন সেনা মোতায়েন রয়েছে। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের সন্ত্রাসী হামলার জের ধরে আফগান অভিযানে নামে যুক্তরাষ্ট্র। তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের নির্দেশে মার্কিন বাহিনী আফগানিস্তানের তালেবান সরকার উৎখাত করে। ঘটনার জন্য দায়ী বলে পরিচিত জঙ্গিগোষ্ঠী আল-কায়েদার মূল আশ্রয়স্থল ছিল আফগানিস্তান। ওসামা বিন লাদেনসহ শীর্ষ জঙ্গি নেতারা তালেবান সরকারের প্রশ্রয়ে থেকেই বিশ্বব্যাপী জঙ্গি তৎপরতায় লিপ্ত ছিলেন।
মার্কিন বাহিনীর টানা সেনা অভিযানে সংগঠনটির সদস্যরা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। আল-কায়েদার জঙ্গিরা প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তানে আশ্রয় নেয়। গত মাসে পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদে মার্কিন বাহিনীর বিশেষ অভিযানে ওসামা বিন লাদেন নিহত হন।
আফগান যুদ্ধকে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য সবচেয়ে দীর্ঘ ও ব্যয়বহুল যুদ্ধ বলে মনে করা হয়। মার্কিন সেনাদের প্রাণহানি, অঙ্গহানি ও সামরিক ব্যয়ের কারণে আফগান যুদ্ধের বিরুদ্ধে মার্কিন জনমত প্রবল হয়ে ওঠে।
আফগান যুদ্ধের দ্রুত সমাপ্তি টানার অঙ্গীকার করে নির্বাচিত হয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। এর আগে ইরাক যুদ্ধের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তির ঘোষণা দেন তিনি।
আগামী বছরের মধ্যে ৩০ হাজার মার্কিন সেনা দেশে ফিরলেও ৭০ হাজারের বেশি সেনা থেকে যাবে আফগানিস্তানে। ২০১৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সেখানে মার্কিন সেনারা আক্রমণাত্মক সামরিক অভিযানে থাকবে বলে মনে করা হচ্ছে। এর মধ্যে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটিতে সরকারকাঠামো দাঁড় করানোর চেষ্টা যুক্তরাষ্ট্রের থাকবে। ইরাকের মতো সেখানকার পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতি ঘটবে বলে মার্কিন বিশেষজ্ঞরা মনে করেন না।
ওবামা বলেন, এখন দেশের দিকে নজর দেওয়ার সময় এসেছে। অর্থনৈতিক অস্থিরতা, চরম বেকারত্ব, শিল্প-বাণিজ্যে অচলাবস্থা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে এখন উদ্বেগ বিরাজ করছে। ২০১২ সালে পুনর্নির্বাচনে জয়ী হতে ওবামা এখন পরিস্থিতির দ্রুত উন্নয়নে পদক্ষেপ নিচ্ছেন বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা।
এদিকে ন্যাটোর সদস্য ফ্রান্সও যুক্তরাষ্ট্রের মতো একই সময়ে আফগানিস্তান থেকে তাদের সেনা প্রত্যাহার করবে। গতকাল বৃহস্পতিবার দেশটির প্রেসিডেন্ট নিকোলা সারকোজির কার্যালয় থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের সমানুপাতে তারাও একই সময়সীমার মধ্যে আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহার করবে।
তালেবানের প্রতিক্রিয়া: আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারে ওবামার ঘোষণাকে ‘প্রতীকী পদক্ষেপ’ বলে অভিহিত করেছে তালেবান। গতকাল সংবাদমাধ্যমে ই-মেইলে পাঠানো এক বিবৃতিতে তালেবান মুখপাত্র তারিক গজনিওয়াল বলেন, আফগানিস্তান থেকে এ বছর ১০ হাজার মার্কিন সেনা সরিয়ে নেওয়া হবে একটি প্রতীকী পদক্ষেপ। যুদ্ধের কারণে ক্লান্ত আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও মার্কিন জনগণকে এভাবে কখনো সন্তুষ্ট করা যাবে না।
যুক্তরাষ্ট্রের নিন্দা করে তারিক গজনিওয়াল আরও বলেন, তারা যুদ্ধ শেষ করার কথা বলে বারবার দেশের মানুষকে ধোঁকা দেয় এবং ভিত্তিহীন বিজয়ের দাবি করে।

No comments

Powered by Blogger.