স্বল্প মূলধনের কোম্পানির প্রতি ঝোঁক উদ্বেগ বাড়াচ্ছে

ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে আসছে দেশের শেয়ারবাজার। গত কয়েক দিনের লেনদেন বিশ্লেষণ করে এ রকমই অভিমত দিয়েছেন বাজার বিশ্লেষকেরা।
তবে স্বল্প মূলধনের অপেক্ষাকৃত দুর্বল মৌলভিত্তির কোম্পানির শেয়ারের দাম আবারও যেভাবে বাড়ছে, তাতে কিছুটা উদ্বিগ্ন তাঁরা। তাঁদের মতে, এসব শেয়ারের দাম বাড়ার প্রবণতা দেখে মনে হচ্ছে, বিনিয়োগকারীরা বাজারের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি থেকে খুব একটা শিক্ষা নেয়নি।
যোগাযোগ করা হলে প্রাইম ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আখতার হোসেন সান্নামাত প্রথম আলোকে বলেন, বাজারে কিছুটা স্থিতিশীলতার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। তবে সামগ্রিক স্থিতিশীলতার বিষয়টি নির্ভর করবে বাজারের পুনর্গঠন কীভাবে হচ্ছে, তার ওপর। অর্থাৎ পুঁজিবাজারের আইন-কানুনে কী ধরনের পরিবর্তন আসছে, বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা এসইসিকে কতটা শক্তিশালী করা হচ্ছে, বাজারের ব্যাপারে অর্থ মন্ত্রণালয়, সংসদীয় কমিটি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের ভূমিকা কতটুকু বাজারবান্ধব করা হবে, তার ওপর।
স্বল্প মূলধনের কোম্পানির প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ প্রসঙ্গে সান্নামাত বলেন, এটা তো সব সময়ই হয়ে আসছে। কারণ, এসব শেয়ারের মূল্য নিয়ন্ত্রণ করা তুলনামূলক সহজ। তা ছাড়া শেয়ারের অভিহিত মূল্য দুই রকম থেকে যাওয়ায় সাধারণ বিনিয়োগকারীরা অনেক সময় মনস্তাত্ত্বিক কারণেও ১০ টাকার শেয়ারের দিকে ঝুঁকছে। এ ক্ষেত্রে তারা কোম্পানির ব্যবসায়িক কার্যক্রমের দিকে খুব একটা মনোযোগী নয়। এ অবস্থায় বাজারের সব শেয়ারের অভিহিত মূল্যে সমতা আনার পক্ষে মত দেন তিনি। তিনি বলেন, নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দিয়ে এ কাজটি করে ফেলা উচিত, যেন কেউ কারসাজির সুযোগ নিতে না পারে।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গতকাল রোববার সপ্তাহের প্রথম দিন দাম বাড়ার তালিকায় থাকা ২০টি কোম্পানির প্রায় সবই ছিল তুলনামূলক কম মূলধনের। এর মধ্যে দুটি ছাড়া বাকি কোম্পানিগুলোর শেয়ারের অভিহিত মূল্য ১০ টাকা। এসব কোম্পানির শেয়ারের দাম সর্বনিম্ন ৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। অথচ এর মধ্যে বেশ কয়েকটি কিছু দিন আগেও লভ্যাংশ না দিতে পারার কারণে ‘জেড’ শ্রেণীতে ছিল। আবার এর মধ্যে ১০টি কোম্পানির মূল্য-আয় অনুপাত বা পিই ৪০-এর বেশি। এসইসির নির্দেশ অনুসারে, ঝুঁকির মাত্রা বিবেচনায় পিই ৪০-এর বেশি, এমন প্রতিষ্ঠানের শেয়ার কেনাবেচায় ঋণসুবিধা পাওয়া যায় না।
বাজার পরিস্থিতি: গতকাল দেশের দুই স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের দাম বেড়েছে। এদিন ব্যাংকিং খাত ছাড়া জ্বালানি, প্রকৌশল, অব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বিমা, খাদ্য, ওষুধ, বস্ত্র ও বিবিধ খাত ছিল বেশ চাঙা। তবে মিউচুয়াল ফান্ড খাত ছিল কিছুটা মিশ্র।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) গতকাল দিনের লেনদেন শেষে সাধারণ মূল্যসূচক ৫৮ পয়েন্ট বেড়ে ছয় হাজার ৪৭০ পয়েন্টে দাঁড়ায়। আর চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক ১২৪ পয়েন্ট বেড়ে ১৮ হাজার ১২০ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। এদিন স্টক এক্সচেঞ্জটিতে মোট ১৯৮টি প্রতিষ্ঠানের লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দাম বেড়েছে ১৩৫টির, কমেছে ৫৭টির এবং অপরিবর্তিত ছিল ছয়টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম। সিএসইতে গতকাল ১৫৬ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে।
ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে এক হাজার ৫২৪ কোটি টাকার। প্রায় তিন মাস পর স্টক এক্সচেঞ্জটির লেনদেন আবার দেড় হাজার কোটি টাকা ছাড়াল। ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ২৫৭টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দাম বেড়েছে ১৮৮টির, কমেছে ৫৯টির এবং অপরিবর্তিত ছিল ১০টির।
এসইসিতে ডিএসইর নবনির্বাচিত কমিটি: ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের নবনির্বাচিত জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আহসানুল ইসলামের নেতৃত্বে চার সদস্যের এক প্রতিনিধিদল গতকাল এসইসির চেয়ারম্যান জিয়াউল হক খোন্দকারের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। এ সময় এসইসির সদস্য মো. আনিসুজ্জামান, নির্বাহী পরিচালক ফরহাদ আহমেদ, এ টি এম তারিকুজ্জামান ও রোকসানা চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। প্রতিনিধিদলে ছিলেন ডিএসইর নবনির্বাচিত সহসভাপতি মো. শাহজাহান এবং দুজন নবনির্বাচিত পরিচালক আজিজুর রহমান ও মিজানুর রহমান খান।

No comments

Powered by Blogger.