বিজেপির বিভক্তির সুযোগে পার পেয়ে যাচ্ছে কংগ্রেস!

২০০৮ সালের আস্থা ভোটের সময় অর্থ দিয়ে ভোট কেনার অভিযোগ সম্পর্কিত উইকিলিকসের ফাঁস করা তথ্যে বড় ধরনের হোঁচট খেয়েছে ভারতের ক্ষমতাসীন জোটের প্রধান দল কংগ্রেস। তবে পার্লামেন্টে সামান্য হই-হট্টগোল ছাড়া এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে পারছে না প্রধান বিরোধী দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, বিজেপি নেতৃত্ব বিভক্ত হয়ে পড়েছে।
বিজেপি ভালোভাবেই জানে, পার্লামেন্টে নতুন করে আস্থা ভোট হলে তাতে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া তাদের জন্য কঠিন হবে। পাশাপাশি দলের নেতৃত্বও এ মুহূর্তে কোনো বিষয়ে একমত হতে পারবে না।
বিজেপির নেতৃত্বাধীন জাতীয় গণতান্ত্রিক মোর্চায় (এনডিএ) একসময় শরিক দল ছিল ২৪টি। কিন্তু এখন এনডিএ মানে-বিজেপি, জনতা দল-ইউনাইটেড (জেডি-ইউ) এবং আকালি দল। এর মধ্যে গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে নিয়ে আবার জেডি-ইউর সঙ্গে বিজেপির মতবিরোধ আছে। অটল বিহারি বাজপেয়ি দলের শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে সরে যাওয়ার পর বিজেপি আগের মতো শরিক দলে টানতে পারছে না।
লোকসভায় বিজেপির নেতা সুষমা স্বরাজ এবং দলের রাজ্যসভার নেতা অরুণ জেটলির মতবিরোধের মধ্য দিয়েই মূলত বিজেপিতে ভাঙনের সুর বেজে ওঠে। বিতর্কিত আমলা পি জে টমাসকে সেন্ট্রাল ভিজিল্যান্স কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার বিষয়টি বিজেপি কীভাবে মোকাবিলা করবে, তা নিয়ে একমত হতে পারেননি এই দুই নেতা। থমাসের ওই নিয়োগ অবৈধ ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট।
সুষমা স্বরাজ বিষয়টিকে ততটা গুরুত্বের সঙ্গে নিতে চাননি। কিন্তু জেটলির অবস্থান ছিল বিপরীত। এ নিয়ে দুজনের মধ্যে দূরত্ব বাড়তে থাকে। জেটলিকে দলের সভাপতি নিতিন গাদকারি সমর্থন দিলে অনেকটা একা হয়ে পড়েন সুষমা।
এর আগে কংগ্রেসের সভাপতি সোনিয়া গান্ধীর পরিবারের বিরুদ্ধে বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগ তোলায় তাঁর কাছে দুঃখ প্রকাশ করেন সাবেক উপপ্রধানমন্ত্রী ও বিজেপি নেতা এল কে আদভানি। একই সঙ্গে আদভানি জানান, ১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ঘটনা বিজেপির গ্রহণযোগ্যতায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
এ ছাড়া বিজেপি নেতা কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী বি এস ইয়াদিরাপ্পার দুর্নীতির অভিযোগ নিয়েও বিভক্ত হয়ে পড়েছে বিজেপি নেতৃত্ব। বিষয়টিকে অনৈতিক মনে করলেও বেআইনি নয় বলে মনে করেন গাদকারি। গাদকারির এই অবস্থানের কারণে কংগ্রেসের দুর্নীতির বিরুদ্ধে বিজেপির প্রচারণা অনেকটা ঢিলে হয়ে যায়। বিজেপির মধ্যে এই বিভক্তির কারণে একের পর এক দুর্নীতির অভিযোগ সামাল দেওয়া কংগ্রেসের জন্য সহজ হয়ে যায়।
তার পরও কংগ্রেস যে খুব স্বস্তিতে আছে, তা নয়। ডিএমকের সঙ্গে মিত্রতা হুমকির মুখে রয়েছে। এ ছাড়া পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচনও তারা তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে জোটগতভাবে করতে পারবে কি না, তা অনিশ্চিত। কেননা, পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলের সঙ্গে আসন ভাগাভাগি কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।
দিল্লির ক্ষমতায় থাকার জন্য কংগ্রেস যেমন আঞ্চলিক দলগুলোর ওপর নির্ভরশীল। তেমনি আঞ্চলিক দলগুলোর জন্যও এটা সত্য যে কংগ্রেস ছাড়া তারা কেন্দ্রীয় ক্ষমতার ভাগ পাবে না। তবে কংগ্রেসকে এটা মনে রাখতে হবে, শরিকদের দুর্নীতির কারণে তারাও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কংগ্রেসের ধর্মনিরপেক্ষতা এখনো প্রশংসার যোগ্য। কিন্তু একের পর এক দুর্নীতির কেলেঙ্কারি তাদের সেই নৈতিক অবস্থানকে ধ্বংস করে দেবে।

No comments

Powered by Blogger.