ভারতীয় ক্রিকেটারদের বিশ্বাস

বীরেন্দর শেবাগকে তাড়াতাড়ি সাজঘরে ফেরাতে পারাটা যেকোনো বোলারেরই চরম প্রার্থিত। কিন্তু এবারের বিশ্বকাপে প্রতিপক্ষ বোলারদের খুব বেশি আনন্দে ভাসতে দেননি ভারতের এই বিধ্বংসী ওপেনার। গ্রুপ পর্বের পাঁচ ম্যাচ খেলেই ৬৫.৪০ গড়ে করে ফেলেছেন ৩২৭ রান। যতক্ষণ ব্যাট হাতে উইকেটে থেকেছেন, রীতিমতো তটস্থ থাকতে হয়েছে সব বোলারকেই। এই বিধ্বংসী চেহারার জন্য তাঁরা দোষারোপ করতে পারেন শেবাগের জার্সিটাকে। এই জার্সির কারণেই নাকি এত ভালো ফর্মে ফিরতে পেরেছেন শেবাগ। অনেকেই হয়তো লক্ষ্য করেছেন, অন্য সব খেলোয়াড়ের জার্সিতে একটা নির্দিষ্ট নম্বর থাকলেও শেবাগের জার্সিটা নম্বরবিহীন। আর এটাই নাকি তাঁর সৌভাগ্যের প্রতীক।
এর আগে শেবাগের জার্সিতে ৪৪ নম্বরটা থাকত। কিন্তু বিশ্বকাপ শুরুর আগ দিয়ে এক জ্যোতিষীর পরামর্শক্রমে নম্বরবিহীন জার্সি পরে মাঠে নামার সিদ্ধান্ত নেন ভারতের এই ড্যাশিং ওপেনার। এ ধরনের কুসংস্কারে শুধু শেবাগই নন, বিশ্বাস করেন ভারতের অন্য অনেক ক্রিকেটাররাও। ভারতীয় অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনির জার্সি নম্বর ৭, কারণ তাঁর জন্মদিন ৭ জুলাই। যুবরাজ সিংও তাঁর জন্মদিন (১২ ডিসেম্বর) মিলিয়েই পছন্দ করেছেন তাঁর জার্সি নম্বরটা (১২)। এ ছাড়া ভারতীয় এই অলরাউন্ডার, তাঁর মায়ের পরামর্শে হাতে একটা কালো সুতা বেঁধে মাঠে নামেন এবং বিশ্বাস করেন যে এটা তাঁকে যেকোনো অপশক্তির হাত থেকে দূরে রাখবে।
ভারতের ব্যাটিং লাইনের আরেক স্তম্ভ বিরাট কোহলিও স্বীকার করেছেন তাঁর কুসংস্কারের কথা। কলকাতা টেলিগ্রাফকে দেওয়া এক সাক্ষাত্কারে তিনি বলেছেন, ‘আগে, আমি যে গ্লাভস পরে বেশি রান করতে পারতাম, সব সময় সেটা পরেই মাঠে নামতাম। কিন্তু এখন আমি স্বাচ্ছন্দ্যটাকেই বেশি প্রাধান্য দিই। তবে এখনো আমি একটা কালো সুতা পরে মাঠে নামি।’ পেসার জহির খানও অকপটে জানিয়েছেন তাঁর বিশ্বাসের কথা। প্রতিটা গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের আগে একটা হলুদ রুমাল সঙ্গে রাখেন ভারতের এই বাঁ-হাতি পেসার।
এই কুসংস্কারের তালিকায় আছে সর্বকালের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান শচীন টেন্ডুলকারের নামও। ব্যাট হাতে মাঠে নামার আগে তিনি সব সময় প্রথমে বাঁ পায়ে প্যাড পরেন। আর ব্যাট নিয়ে তাঁর খুঁতখুঁতে স্বভাবের কথা তো অনেকেরই জানা। শুধু লিটল মাস্টার নিজে নন। তাঁকে ঘিরে অনেক কুসংস্কার আছে তাঁর পরিবারের—এমনকি সমর্থক-ভক্তদেরও। টেন্ডুলকার যখন ব্যাটিং করেন, তখন নাকি তাঁর পরিবারের কেউ টিভিতে খেলা দেখেন না। এই ভয়ে যে এতে তিনি দ্রুত আউট হয়ে যেতে পারেন। সমর্থকদের অনেকে ভারতের খেলা দেখার আগে ক্রিকেটারদের সুস্বাস্থ্য কামনা করে দুধ পান করেন। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে এ জাতীয় নির্দেশনা রেডিওর মাধ্যমেও দেওয়া হয়। দিল্লির একটি গবেষণা সংস্থার কর্মী প্রিতম সিনহা বলেছেন, ‘ভারতের খেলা দেখার সময় আমি শুধু আমিষজাতীয় খাবার খাই—মাছ, মুরগি বা খাসির মাংস। এটা ভারতের পক্ষে সৌভাগ্য বয়ে আনে এবং সব অপশক্তিকে দূরে রাখে বলেই আমার বিশ্বাস।’

No comments

Powered by Blogger.