ব্যাখ্যা নেই সিডন্সের কাছেও

এক দল ২৮৪ রান করে ফেলার পর আরেক দল ৭৮ রানে অলআউট হলে পিচ কিউরেটরের রক্তচাপ বাড়ার কথা নয়। ফলাফলে যে উইকেটের ‘অবদান’ শূন্য, সেটা তো ২০৬ রানের ব্যবধানই বলে দেয়! কাল ম্যাচ শেষে তবু শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের কিউরেটর বদিউল আলমকে মেডিকেল রুমে ঢুকতে দেখা গেল। রক্তচাপ মাপতেই কি?
একপেশে বাংলাদেশ-দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচটাই খেলার আগে-পরে অনেকেরই রক্তচাপ বাড়াল। খেলার আগে দর্শকেরা টেনশনে থাকল—কোয়ার্টার ফাইনালে যাবে তো বাংলাদেশ? ম্যাচ শেষে সেই টেনশন স্থানান্তরিত নিরাপত্তাকর্মীদের মধ্যে। দুই দলের দুটি বাসকে মাঠ থেকে নিরাপদে হোটেলে পৌঁছে দিতে হবে। ক্ষুব্ধ সমর্থকেরা যদি আবারও ক্ষোভের ঢিল ছুড়ে মারে? স্টেডিয়াম থেকে টিম হোটেল পর্যন্ত থাকল নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তাব্যবস্থা। ক্ষুব্ধ সমর্থকদের ধোঁকা দিতে টিম বাসের সঙ্গে থাকল দুটি ডামি বাসও। স্টেডিয়ামের মূল ফটক এড়িয়ে গাড়ির বহর বের হলো দক্ষিণ দিকের ফটক দিয়ে। মাঠ থেকে হোটেল পর্যন্ত রাস্তার আশপাশের এলাকা করে দেওয়া হলো জনশূন্য। টিম বাস আর নিরাপত্তারক্ষীদের গাড়ি ছাড়া দুই পাশের রাস্তায় থাকল না আর কোনো যানবাহনও। সংযোগ সড়কগুলোতে যানজটে আটকে পড়া মানুষ যতই বিরক্ত হোক, একেবারেই ফাঁকা রাস্তায় সম্ভবত কালই সবচেয়ে দ্রুততম সময়ে মাঠ থেকে হোটেলে পৌঁছানোর অভিজ্ঞতা হলো ক্রিকেটারদের।
এর আগে ড্রেসিংরুমের টিম মিটিংয়ে জেমি সিডন্স একটা বক্তৃতা দিলেন। দুই সপ্তাহের ব্যবধানে কেন দুবার এমন লজ্জাজনক ব্যাটিং হলো জানতে চেয়েছেন কোচ। জবাব পাননি। তবে হোটেলে ফেরার আগে এই প্রতিবেদককে নিজেই দিয়ে গেলেন ব্যর্থতার ব্যাখ্যা, ‘নিজেদের ওপর বিশ্বাস নেই কারও। ম্যাচটা ছিল কোয়ার্টার ফাইনালে যাওয়ার উপলক্ষ, সেটাই যেন চাপে ফেলে দিয়েছে সবাইকে। একটার পর একটা উইকেট পড়ছিল আর চাপ চেপে বসেছিল সবার ওপর। ভালো খেলার সামর্থ্য ওদের সবারই আছে, অথচ উইকেটে গিয়ে সব গুলিয়ে ফেলল!’ এত দিন ক্রিকেট খেলার পরও কেন চাপে ভেঙে পড়া? সিডন্স নিরুত্তর, ‘আমি জানি না...।’ শাহরিয়ার নাফীস কোচের সঙ্গে একমত, বড় আসরে বড় চ্যালেঞ্জের চাপটাই নিতে পারেননি তাঁরা, ‘অকেশনটাই চাপ হয়ে গেছে। চারদিকে সবার প্রত্যাশা, জিততেই হবে—আমরা এটি নিতে পারিনি।’
বিশ্বকাপের পারফরম্যান্সের সঙ্গে বাংলাদেশের কোচ হিসেবে সিডন্সের ভবিষ্যৎ জড়িয়ে। রসিকতার ছলে সেটা মনে করিয়ে দেওয়া হলো, ‘ছুটিতে যাচ্ছেন...?’ ৭৮ রানে অলআউট হওয়ার যন্ত্রণা সত্ত্বেও কোচের পাল্টা রসিকতা, ‘...হয়তো লম্বা ছুটিতেই।’ সিডন্সের রসিকতাই সত্যি হয়ে যেতে পারে।্রআগামী জুনে চুক্তি শেষ হওয়ার পর অস্ট্রেলিয়ান এই কোচকে ‘গুডবাই’ বলার জন্য তৈরি বিসিবি। কাল বোর্ডের একজন শীর্ষ কর্মকর্তাও জানালেন, কোচ সিডন্স ও ফিজিও মাইকেল হেনরির চুক্তি অন্তত বাড়ার সম্ভাবনা নেই। বোলিং কোচ ইয়ান পন্ট, ফিল্ডিং কোচ জুলিয়েন ফাউন্টেন ও ট্রেনার গ্রান্ট লুডেনের পারফরম্যান্সে বোর্ড মোটামুটি সন্তুষ্ট হলেও পন্টের ইংল্যান্ডে ফিরে যাওয়ার গুঞ্জনটা বেশ জোরালো। সিডন্স ছাড়া দলের সঙ্গে থাকা বাকি বিদেশিদের চুক্তি শেষ হওয়ার কথা বিশ্বকাপের পরপর। তবে সাময়িক মেয়াদ বাড়িয়ে অস্ট্রেলিয়া সিরিজ পর্যন্ত তাঁদেরও রেখে দেওয়া হতে পারে।
বাংলাদেশের বিশ্বকাপ কালই শেষ। খেলোয়াড়দের হোটেল ছাড়াও শুরু হয়ে গেছে রাত থেকেই। অপেক্ষা এখন ৯ এপ্রিল থেকে শুরু অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তিন ওয়ানডের হোম সিরিজের জন্য। ২৮ মার্চ পর্যন্ত ছুটি কাটিয়ে পরদিন থেকে শুরু হবে প্রস্তুতি। তিন ম্যাচে জিতলেও ৫৮ আর ৭৮-এর হতাশা কি ভোলা সম্ভব তার আগে?

No comments

Powered by Blogger.