‘আনলাকি’ নাজমুল

ধারণাটা তাঁর আগে থেকেই ছিল। এবার সেটা হয়ে গেল বদ্ধমূল। নাজমুল হোসেন এখন মনেপ্রাণে বিশ্বাস করেন, তিনি আসলেই ‘আনলাকি’। কপাল যদি না-ই খারাপ হবে, এক মাস দলের সঙ্গে থেকেও কেউ ছয়-ছয়টা ম্যাচে শুধু দর্শক হয়ে বসে থাকে?
বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের ১৫ ক্রিকেটারের ১৪ ক্রিকেটারই খেলার সুযোগ পেয়েছেন, পাননি শুধু নাজমুল। সান্ত্বনা হিসেবে দলের অনেকেই ‘ব্যাডলাক’ বলেছেন। নাজমুল হাসেন। কথাটা যে নতুন শুনছেন না!
নাজমুলের ক্যারিয়ারজুড়েই আসলে ‘ব্যাডলাক’ ছেয়ে আছে। তাঁর দলে থাকাটা বেশির ভাগ সময় নির্ভর করে কারও ইনজুরির ওপর। দলে থাকলেও খেলার নিশ্চয়তা পাননি কখনোই। এমনও হয়েছে, খেলার আগের রাতে জানতেন পরদিন খেলবেন, সকালে মাঠে গিয়ে শোনেন দলে তাঁর জায়গা হয়নি।
এই অভিজ্ঞতা এবারের বিশ্বকাপেও হয়েছে। অনুশীলনে চোট পেয়েছিলেন শফিউল ইসলাম। আয়ারল্যান্ড ম্যাচের আগের রাতে আর সবার মতো নাজমুলও জানতেন পরদিন খেলছেন। কিন্তু সকালে মাঠে গিয়ে ওয়ার্মআপ করার সময় শুনলেন, বাদ পড়ার আগে শফিউলের ফিটনেস টেস্ট হবে। অতীত অভিজ্ঞতা নিকট ভবিষ্যৎটা ভেসে ওঠে নাজমুলের চোখের সামনে। তাহলে আরও একবার ঘটতে যাচ্ছে ঘটনাটা! ‘দল ঘোষণার ৫-৭ মিনিট আগে শুনলাম শফিউলের ফিটনেস টেস্ট হবে। তখনই বুঝে গেছি আমার আর খেলা হচ্ছে না। এই অভিজ্ঞতা তো আর নতুন নয়’—কালই হবিগঞ্জ চলে যাওয়া নাজমুল টেলিফোনে কথাগুলো বলার সময় হাসলেন। দুঃখের হাসি।
বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের উত্থান-পতন মাঠের বাইরে বসেই দেখেছেন। ইংল্যান্ডের সঙ্গে জেতার পর ড্রেসিংরুমে অন্য সবার সঙ্গে উল্লাসে মেতেছেন, আবার ওয়েস্ট ইন্ডিজ আর দক্ষিণ আফ্রিকা বিপর্যয়ের পর হয়েছেন শোকবিহ্বল। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৫৮ রানে অলআউট হওয়াটা নাজমুলের চোখে একটা দুর্ঘটনা। তবে মেনে নিতে পারছেন না দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৭৮ রানেই গুঁড়িয়ে যাওয়াটাকে, ‘৫৮ রানের ঘটনাটা আসলে কিছু বুঝে ওঠার আগেই হয়ে গেছে। এক ম্যাচে ও রকম হতেই পারে। কিন্তু কাল (পরশু) ৭৮ রানে অলআউট হওয়ার পর আমরা উপলব্ধি করলাম, আসলে আমাদের ব্যাটিংই খারাপ হচ্ছে। বড় জুটি হচ্ছে না, কেউ দায়িত্ব নিতে পারছে না।’ কেন এই বিপর্যয়? পানি টেনে বিশ্বকাপ কাটিয়ে দেওয়া নাজমুলও একমত কোচ-অধিনায়কের সঙ্গে, ‘কোয়ার্টার ফাইনালে উঠতেই হবে—এই চাপ থেকেই সম্ভবত এটা হয়েছে। জিততেই হবে চাপটাই বেশি ভারী হয়ে গিয়েছিল।’
একটা ম্যাচও যেহেতু খেলেননি, নাজমুল চাইলে ব্যর্থতার দায় না-ই নিতে পারেন। বলে দিতে পারেন, ‘আমার আর কী দোষ! আমাকে তো খেলালোই না!’ শত হতাশার পরও সে পথে যাচ্ছেন না এই পেসার, ‘অন্যদের আমার চেয়ে ভালো মনে হয়েছে বলেই খেলানো হয়েছে। আমি খেললেও ফলাফল এ রকমই হতে পারত।’
তাই বলে ভাববেন না দেশের মাটির বিশ্বকাপে একটি ম্যাচও খেলতে না পারায় নাজমুলের হতাশা নেই। বরং কাল এই প্রতিবেদকের ফোনটা পেয়েই বলেছেন, ‘জানি, কেন ফোন করেছেন...আমার ক্ষেত্রে এ রকমই হয়। আমি আনলাকি। ভালো খেলতাম, না খারাপ খেলতাম সেটা পরে, দেশের মাটিতে বিশ্বকাপ হলো আর আমি কিনা একটা ম্যাচও খেলতে পারলাম না, সেটাই দুঃখ।’ দল জিতলে তবু জয়ের আনন্দে ঢেকে রাখতে পেরেছেন হতাশা, তবে হারের পর দুঃখটা আরও বেড়েছে।
সামনে অস্ট্রেলিয়া সিরিজ। বিশ্বকাপ খেলতে না পারার হতাশা ভুলতে সেদিকেই তাকিয়ে আছেন নাজমুল। তবে আবারও তাঁকে ‘আনলাকি’ হয়েই থাকতে হবে না, সেই নিশ্চয়তা কী!

No comments

Powered by Blogger.