ম্যাচের আগে অনেক হিসাব

আউটডোরের নেটে ব্যাট করে ইনডোরে যাচ্ছেন বোলিং মেশিনের সামনে দাঁড়াতে। প্র্যাকটিসে এত যাঁর ক্ষুধা, সেই তামিম ইকবাল নাকি কালও ব্যাটিংয়ের সময় হাতে ব্যথা অনুভব করেছেন! অবিশ্বাস করার উপায় নেই। মাঠের বাইরে থাকার প্রায় পুরো সময়টাই তো চোটের জায়গায় চেপে রাখছেন আইসব্যাগ!
অনুশীলন শেষ করে দুপুরে টিম বাসে ওঠার সময়ও একই দৃশ্য, হাতে আইসব্যাগ চেপে ধরা। কিন্তু মুখে আত্মবিশ্বাস, ‘খেলতে সমস্যা হবে না আশা করি।’ টিম ম্যানেজমেন্ট তামিমের কথায় পুরো আস্থা রাখছে বলে মনে হচ্ছে না। কোচ জেমি সিডন্স নইলে কেন প্রস্তুত থাকতে বলবেন আরেক বাঁহাতি ব্যাটসম্যান শাহরিয়ার নাফীসকে! আজ সকালে যদি তামিমের খেলার মতো অবস্থা না থাকে, তাহলে দলে ঢুকে যাবেন শাহরিয়ার। তবে ওপেনার হিসেবে নয়, তিন নম্বরে। ইমরুল কায়েসের সঙ্গে ইনিংস শুরু করতে নামবেন জুনায়েদ সিদ্দিক। টপ অর্ডারে এই অদল-বদলটা প্রয়োজন হবে না তামিম খেললে। যত দূর জানা গেছে, খুব বেশি সমস্যা না হলে ব্যথানাশক ইনজেকশন নিয়ে হলেও ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচটা খেলে ফেলতে পারেন বাঁহাতি এই ওপেনার।
দলে এই একটা অদল-বদলই ঘটতে পারে আজ। নইলে সাত নম্বরে মোহাম্মদ আশরাফুলকে রেখেই করা হয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচের একাদশ। কাল সংবাদ সম্মেলনে সাকিব অবশ্য ১২ জনের দল জানালেন। ১২তম খেলোয়াড় মাহমুদউল্লাহ। ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলে বাঁহাতি ব্যাটসম্যান আছেন কয়েকজন। যদি ওনাকে (মাহমুদউল্লাহ) নিই, উনি হয়তো পাওয়ার প্লেতে বল করতে পারেন। তবে এখনো কিছু চূড়ান্ত হয়নি’—সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক।
তামিমের সমস্যাটুকু বাদ দিলে আজকের ম্যাচের আগে প্রতিপক্ষ ছাড়া আর কিছু নিয়েই ভাবছে না বাংলাদেশ। কোয়ার্টার ফাইনালের লক্ষ্য পূরণে যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ এই ম্যাচটা! যদিও সাকিব বলেছেন, ‘এমন না যে ম্যাচটা আমাদের জিততেই হবে। তবে হ্যাঁ, আমাদের ভালো খেলতে হবে। জিতলে সেটা হবে খুবই ভালো। তাতে আমরা আরও একধাপ এগিয়ে যাব কোয়ার্টার ফাইনালের দিকে।’
মিরপুরের উইকেটে স্পিনাররা টার্ন পাচ্ছে না বলে হতাশা আছে কোচ জেমি সিডন্সের। তবে সাকিবের দর্শন এখানে ভিন্ন, ‘উইকেট নিয়ে খুব বেশি আলোচনা হচ্ছে। আমি চাই না এত বেশি আলোচনা হোক। উইকেট যেমনই হোক, সেটা দুই দলের জন্যই সমান। এমন না যে আমাদের সময় বল বেশি ঘুরবে, ওদের সময় ঘুরবে না। কাজেই এ নিয়ে বেশি মাথা ঘামানোর দরকার আছে বলে মনে হয় না।’
ওয়ানডে র্যাঙ্কিংয়ে এখন ওয়েস্ট ইন্ডিজের এক ধাপ ওপরে বাংলাদেশ। দুই দলের সর্বশেষ মুখোমুখি হওয়ার স্মৃতিটাও বাংলাদেশের জন্য সুখপ্রদ। নিজেদের মাঠের বিশ্বকাপ ম্যাচে, তাই বাংলাদেশকে ফেবারিটও বলে দেওয়া যেতে পারে। সাকিব অবশ্য ২০০৯-এর সিরিজ জয়ের সঙ্গে মেলাতে চাচ্ছেন না আজকের ম্যাচটিকে, ‘ওদের দলে এখন কিছু সিনিয়র খেলোয়াড় আছে যারা ওই সিরিজে ছিল না। তারুণ্য এবং অভিজ্ঞতার সম্মিলনে ওরা ভালো দলই। জিততে হলে আমাদের সেরা খেলাই খেলতে হবে।’ তবে মনের কোণে ২০০৯ যে একেবারেই নেই তা নয়, ‘... যতই ওদের সিনিয়র ক্রিকেটাররা আসুক, মনে কিন্তু ব্যাপারটা আসে যে গত সিরিজে আমরা ওদের দেশে গিয়ে ওদের হারিয়ে এসেছি। সিনিয়ররা ফিরে আসায় দলটা হয়তো এখন শক্তিশালী, তবে এবার আমাদের হোম কন্ডিশনে খেলা...এই জিনিসটাই অন্য সব পার্থক্য ঘুচিয়ে দেবে আশা করি।’
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আয়ারল্যান্ডের নাটকীয় জয়ের পর ‘বি’ গ্রুপের পরিস্থিতিটা কী দাঁড়াল, সাকিব এখনই মাথা ঘামাতে রাজি নন সেটা নিয়েও, ‘আয়ারল্যান্ডের জয় “বি” গ্রুপের লাইনআপ বদলে দিয়েছে। দ্বিতীয় পর্বের সুযোগ এখন সবার জন্যই সমান হয়ে গেছে। তবে আমি বলব, আমাদের সুযোগ সৃষ্টি হবে ইংল্যান্ডকে হারাতে পারলেই। এ ছাড়া আয়ারল্যান্ডের জয় আর কীভাবে আমাদের সাহায্য করবে, আমি জানি না।’
বিশ্বকাপের শুরু থেকেই একটা বিশ্বাস নিয়ে এগোচ্ছে সাকিবের দল। বিশ্বাসটা নিজেদের সামর্থ্যের প্রতি। অন্যের ব্যর্থতার ছিদ্রপথ দিয়ে আসা সাফল্যের আলো দেখার চেয়ে আলোটা জ্বালাতে চান নিজেরাই। আয়ারল্যান্ডের পর ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচেও জ্বলবে সেই আলো?

No comments

Powered by Blogger.