টেন্ডুলকারের বছর

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ৩২ হাজারের বেশি রান। এই জীবনে ২২ গজে যতবার দৌড়েছেন, যদি উপায় থাকত, শচীন টেন্ডুলকার মনে হয় কেবল দৌড়েই পৌঁছে যেতেন চাঁদে! তবে ৫ ফুট ৫ ইঞ্চি উচ্চতার ছোট্ট মানুষটি অনেক আগেই পৌঁছে গেছেন ক্রিকেটীয় অর্জনের এভারেস্টে। ২০১০, টেন্ডুলকারকে নবরূপে চেনার বছর!
বছরটায় ফিরে তাকালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে চোখে পড়বে অনেক টুকরো ছবি। দারুণভাবে বছর শুরু করেও শেষে অস্ট্রেলিয়ার পতন। স্পট ফিক্সিং নিয়ে তুলকালাম। নিত্যনতুন বিতর্ক আর অঘটনের জন্ম দিয়ে চলা পাকিস্তান ক্রিকেটের। বিতর্কে নাম লেখানো আইপিএলের, ক্ষমতাচ্যুত ললিত মোদি। ইংল্যান্ডের প্রথম কোনো বিশ্বকাপ ট্রফি জেতা। দিলীপ ট্রফির ফাইনালে ইউসুফ পাঠানের ডাবল সেঞ্চুরিতে ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেটে সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জেতার বিশ্ব রেকর্ড। হাশিম আমলার অক্লান্ত ব্যাট...অনেক কিছুই।
কিন্তু সব ছাপিয়ে উজ্জ্বল তিনি। ভারতের ক্রিকেট-দেবতা টেন্ডুলকার!
জানুয়ারিতে সবচেয়ে বেশি টেস্ট ইনিংস খেলার রেকর্ড ভেঙে যাত্রা শুরু করেছিলেন। পরের মাসে গোয়ালিয়রে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ক্রিকেট ইতিহাসের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে করলেন ডাবল সেঞ্চুরি। এরপর ওয়ানডে ক্রিকেট থেকে বিশ্রামে যাওয়া টেন্ডুলকারের যাবতীয় অর্জন ছিল টেস্ট আঙিনায়। ক্যারিয়ারের অস্তলগ্নেই যেন মধ্যগগনের সূর্য তিনি। ২৩ ইনিংসে ৭৮.১০ গড়ে ১৫৬২ রান। ৭টি সেঞ্চুরি, ৫টি ফিফটি। বছরের শেষটা টেন্ডুলকার করেছেন টেস্টে তাঁর ৫০তম সেঞ্চুরি দিয়ে। অবিশ্বাস্য, অকল্পনীয়, অভাবিত, অভূতপূর্ব!
ব্যক্তিগত অর্জনে টেন্ডুলকারের পরেই আমলা। টেস্টে ১৪২২ রান করেছেন বীরেন্দর শেবাগ, জোনাথন ট্রট (১৩২৫) আর অ্যালিস্টার কুকের রানও (১২৮৭) তাঁর চেয়ে বেশি। কিন্তু টেস্ট-ওয়ানডে মিলে আমলার চেয়ে ধারাবাহিক ছিলেন না আর কেউই। দুই ধরনের ক্রিকেটে তাঁর মোট রান ২৩০৭। ১০টি সেঞ্চুরি, ৮টি ফিফটি।
দলগত অর্জনে বছরটা ছিল ইংল্যান্ডের। ওয়েস্ট ইন্ডিজের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে শিরোপা জেতে ইংল্যান্ড। তাদের প্রথম কোনো বড় ট্রফি। ওয়ানডেতেও ইংল্যান্ড ছিল ধারাবাহিক। ১৭ ওয়ানডের ১২টিই জিতেছে। আর টেস্টে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজ ড্র করে আসার পর বাংলাদেশে জিতেছে। পরের সিরিজে বাংলাদেশকে আতিথ্য দিয়ে হোয়াইটওয়াশ করেছে ২-০-তে। পাকিস্তানের বিপক্ষে জিতেছে ৩-১-এ। এরপর চলতি অ্যাশেজের কথা তো সবার জানা।
ইংলিশদের ক্রিকেটাসন যখন শক্ত হচ্ছে, সেই সময়ই অস্ট্রেলিয়ার পতন অব্যাহত। বছরের শুরুতে পাকিস্তান ও নিউজিল্যান্ডকে টেস্টে হোয়াইটওয়াশ করলেও ফিরতি সিরিজে পাকিস্তানের সঙ্গে ড্র করেছে। এরপর ভারতের কাছে ধবলধোলাই। র‌্যাঙ্কিংয়ে নেমে গেছে পাঁচে।
ক্রিকেটে বিতর্কের শুরুটা হয়েছিল বছরের গোড়ায় অস্ট্রেলিয়া-পাকিস্তান সিডনি টেস্ট থেকেই। যে ম্যাচে দারুণ সুবিধাজনক অবস্থানে থেকেও হারে পাকিস্তান। ওই সফরের ১০ ম্যাচের প্রতিটিতেই হারা পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের ওপর শাস্তির খড়্গ নেমে আসে। ইউসুফ, ইউনুস, শোয়েব মালিক—তিন সাবেক অধিনায়ক হন বরখাস্ত। সাত ক্রিকেটারকে করা হয় জরিমানা। রাগে-হতাশায় আরেকবার অবসর নিয়ে ফেলেন ইউসুফ।
দলকে নেতৃত্ব দিতে চার বছর পর টেস্ট ক্রিকেটে ফেরেন শহীদ আফ্রিদি। কিন্তু লর্ডসে অস্ট্রেলিয়ার কাছে পরাজয়ে আবারও অবসরে যান। অধিনায়ক হন সালমান বাট। হেডিংলিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জয় দিয়েই শুরু করেন বাট। কিন্তু প্রশংসার স্রোতে ভাসলেন সামান্য সময়। নিউজ অব দ্য ওয়ার্ল্ড ফাঁস করে দেয়, অধিনায়ক বাটের পরামর্শে ইচ্ছাকৃত নো বল করেছেন মোহাম্মদ আসিফ আর মোহাম্মদ আমির। ওই সিরিজের পর থেকে এই তিন ক্রিকেটার সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ।
ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়েছেন অ্যান্ড্রু ফ্লিনটফ। টেস্ট ক্রিকেটকে বিদায় দিয়েছেন সর্বোচ্চ উইকেটের মালিক মুত্তিয়া মুরালিধরন। তবে বিদায় নেওয়ার আগে ঠিকই স্পর্শ করে গেছেন ৮০০ উইকেটের চূড়া।

No comments

Powered by Blogger.