বছর শেষ হতে এখনো পুরো একটা দিন বাকি। কিন্তু গতকাল বৃহস্পতিবারই দেশের শেয়ারবাজারের বছরের সমাপ্তি ঘটেছে। আজ শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় গতকাল ছিল শেয়ারবাজারে বছরের শেষ লেনদেন।
শেষ দিনটি বিনিয়োগকারীদের জন্য এককথায় ভালো কেটেছে। কারণ, এদিন দুই স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত বেশির ভাগ শেয়ারের দাম বেড়েছে। বেড়েছে মূল্যসূচক, বাজার মূলধন ও লেনদেনের পরিমাণ। আর এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে ব্যাংক, মিউচুয়াল ফান্ড ও অব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতের শেয়ার।
বাজার বিশ্লেষকেরা বলছেন, প্রতিবছরের শেষ দিনে ব্যাংক ও অব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর হিসাব চূড়ান্ত করা হয়। বিনিয়োগকারীদের একটা বড় অংশের ধারণা, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ থেকে এসব প্রতিষ্ঠান এবার অনেক ভালো মুনাফা করবে। আর এ প্রত্যাশা থেকেই তাঁদের অনেকেই এ দুটি খাতের প্রতি বেশি ঝুঁকে পড়েছেন।
অন্যদিকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিটে বিনিয়োগের জন্য ঋণসুবিধা দেওয়ার ক্ষেত্রে সব ধরনের আইনি জটিলতা দূর করার সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) সিদ্ধান্তে এ খাতটির প্রতিও আগ্রহী হয়ে উঠেছেন অনেক বিনিয়োগকারী।
এসইসির বিভিন্ন বিধিনিষেধের কারণে এ খাতটি এত দিন একরকম অবহেলিত ছিল। তবে গত বুধবার মিউচুয়াল ফান্ডের বিপরীতে ঋণসুবিধা উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্যও বাজারে আসতে আগ্রহী কোম্পানিগুলোর বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে দরপ্রস্তাবের (বিডিং) মাধ্যমে শেয়ারের মূল্য নির্ধারণী প্রক্রিয়ায় অংশ নেওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে। এর ফলে সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিটি মিউচুয়াল ফান্ডের নামে পৃথকভাবে দরপ্রস্তাবের মাধ্যমে শেয়ার কিনতে পারবে। এতে স্বল্প সময়ে ফান্ডগুলো অধিক মুনাফা করার সুযোগ পাবে।
মূলত এসব বিবেচনায় গতকালের বাজারে ব্যাংক ও অব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি মিউচুয়াল ফান্ডগুলোর মূল্য ও লেনদেন বেড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। গতকাল ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) দাম বৃদ্ধির শীর্ষ ১০টি শেয়ারের তালিকায় আটটি ছিল মিউচুয়াল ফান্ড।
বাজার পরিস্থিতি: ডিএসই ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) উভয় জায়গায় গতকাল লেনদেনের শুরু থেকেই মূল্যসূচক বাড়তে থাকে। প্রথম এক ঘণ্টায় ডিএসইতে সাধারণ মূল্যসূচক ১২০ পয়েন্টের মতো বেড়ে যায়। এর পরের তিন ঘণ্টা সূচক খুব সামান্য ওঠানামা হলেও সামগ্রিকভাবে বাজার স্থিতিশীল ছিল। ডিএসইতে গতকাল সাধারণ মূল্যসূচক ৭৫ পয়েন্ট বেড়ে আট হাজার ২৯০ পয়েন্ট ছাড়িয়ে গেছে। আর সিএসইর সাধারণ সূচক ১৫০ পয়েন্ট বেড়ে ২৩ হাজার ৪৪৮ পয়েন্ট হয়েছে।
ডিএসইতে গতকাল ২৪৬টি কোম্পানির শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে ১৮৬টিরই দাম বেড়েছে। কমেছে মাত্র ৫৮টির আর অপরিবর্তিত ছিল দুটির দাম। ডিএসইতে গতকাল মোট এক হাজার ৭৮৩ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে, আগের দিনের চেয়ে যা ৩০৪ কোটি টাকার মতো বেশি।
সিএসইতে লেনদেন হয়েছে ১৮৯টি কোম্পানির শেয়ার। এর মধ্যে ১৩৫টি কোম্পানির দাম বেড়েছে, কমেছে ৫১টির এবং অপরিবর্তিত ছিল তিনটি কোম্পানির শেয়ারের দাম। লেনদেন হওয়া শেয়ারের মোট মূল্য ১৭৯ কোটি টাকা।
লেনদেন সামান্য বাড়লেও বাজারে এখনো তারল্য ঘাটতি রয়েছে বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউসের নির্বাহীরা। এ কারণে তাঁরা গ্রাহকদের চাহিদা অনুযায়ী ঋণ সরবরাহ করতে পারছেন না। আর ঋণ না পেয়ে গ্রাহকেরা প্রতিদিনই নির্বাহীদের ওপর চাপ সৃষ্টি করছেন। তবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ধারণা, জানুয়ারির মাঝামাঝি সময় থেকে এ সংকট ধীরে ধীরে কাটতে শুরু করবে।

No comments

Powered by Blogger.