হকিতে রক্তারক্তি কাণ্ড

বাংলাদেশের ঘরোয়া হকিতে মারামারি, সংঘর্ষ হবে না এটা ভাবাই ভুল। হকিস্টিক নিয়ে প্রতিপক্ষের খেলোয়াড় বা আম্পায়ারের উদ্দেশ্যে তেড়ে যাচ্ছেন কেউ, রক্তারক্তি হচ্ছে—এসব নিয়মিতই ঘটে। ঢাকা ব্যাংক বিজয় দিবস হকির ফাইনালে কাল আবার দেখা মিলল এমন দৃশ্যের।
সোনালী ব্যাংকের স্ট্রাইকার রাসেল মাহমুদের (জিমি) স্টিকের আঘাতে মাথা ফাটল মুক্তবিহঙ্গের ফারুকের। হাসপাতালে নেওয়ার পর মাথায় পাঁচটি সেলাই পড়েছে ফারুকের, করা হয়েছে সিটি স্ক্যান।
প্রথমার্ধ ছিল গোলশূন্য, ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধেই চড়তে থাকে উত্তেজনার পারদ। ৪০ মিনিটের সময় চন্দনের পেনাল্টি কর্নার গোলে এগিয়ে যায় মুক্তবিহঙ্গ। পিছিয়ে পড়া সোনালী ব্যাংকের খেলোয়াড়েরা গোল শোধের জন্য মরিয়া হয়ে ওঠেন। ৫০ মিনিটের সময় একটি ফাউলকে কেন্দ্র করে গোলমালের সূত্রপাত। ইচ্ছাকৃতভাবে দেরি করছে মুক্তবিহঙ্গ—এই অভিযোগে ফারুকের হাতে থাকা বল কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন রাসেল। কিন্তু বল দিতে দেরি করায় রাসেল তর্ক শুরু করেন ফারুকের সঙ্গে। একপর্যায়ে ফারুক প্রথমে রাসেলের বাঁ পায়ে স্টিক দিয়ে আঘাত করেন। প্রত্যুত্তরে রাসেল স্টিক দিয়ে ফারুকের মাথায় বাড়ি দেন। রাসেল অবশ্য দাবি করেছেন আঘাতটা অনিচ্ছাকৃত, ‘আমি ইচ্ছে করে মাথায় আঘাত করিনি। হাত ফসকে স্টিক বেরিয়ে গেছে।’ ওই সময় দুই দলের খেলোয়াড়দের মধ্যে খণ্ড খণ্ড উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। সঙ্গে যোগ দেন কর্মকর্তারাও। লাল কার্ড দেখেন রাসেল। মাঠ ছাড়তে নারাজ জাতীয় দলের স্ট্রাইকারকে পরে বুঝিয়ে-সুঝিয়ে ডাগ-আউটে নিয়ে যান ফেডারেশনের কর্মকর্তারা।
মাঠ যখন রণক্ষেত্র, তখন দর্শক যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী আহাদ আলী সরকার, ফেডারেশন সভাপতি এয়ার মার্শাল জিয়াউর রহমান। গুরুতর অসুস্থ স্ত্রীকে নিয়ে হাসপাতালে থাকায় ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক খোন্দকার জামিলউদ্দিন আসতে পারেননি।
প্রায় মিনিট পনেরো পর শুরু হয় খেলা। ১০ জনের দলে পরিণত হয়েও সোনালী ব্যাংক দারুণ লড়েছে। ৫৬ মিনিটে নান্নুর রিভার্স হিটে সমতায় ফেরে জাতীয় দলের খেলোয়াড়সমৃদ্ধ সোনালী ব্যাংক (১-১)। নির্ধারিত সময়ের খেলা ড্র হওয়ার পর টাইব্রেকারে গড়ায় ম্যাচ। এতে ৩-২-এ জিতে চ্যাম্পিয়ন হয় মুক্তবিহঙ্গ। এর আগে গ্রুপ পর্বে সোনালী ব্যাংকের কাছে ৫-৩ গোলে হেরেছিল মুক্তবিহঙ্গ।
খেলা শেষে যখন উৎসবে ব্যস্ত মুক্তবিহঙ্গ, মাঠের এক কোণে দাঁড়িয়ে বিমর্ষ রাসেল মাহমুদ বললেন, ‘ফারুক ভাই আমাকে আগে আঘাত করল। অথচ আম্পায়ার আমার দোষটাই দেখলেন। আমার যে রক্ত বের হয়নি।’ খেলা দেখতে এসেছিলেন জাতীয় দলের সাবেক স্ট্রাইকার আরিফুল হক (প্রিন্স)। ঘটনা দেখে ক্ষুব্ধ আরিফুল জানালেন, ‘এ দেশের হকি অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। যাও বা দু-একটা টুর্নামেন্ট হয় তাতেও এই মারামারি দেখে হকির প্রতি মানুষ মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।’ মুক্তবিহঙ্গের অধিনায়ক ও জাতীয় দলের সাবেক খেলোয়াড় খোকনের কাঠগড়ায় রাসেল, ‘জিমির মতো খেলোয়াড়ের কাছ থেকে আমরা এমন আচরণ আশা করিনি।

No comments

Powered by Blogger.