বাগবোর বিরুদ্ধে ভিনদেশি সেনা ব্যবহারের অভিযোগ

আইভরি কোস্টে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী ঘোষিত আলাসেন ওয়েতাহা প্রেসিডেন্ট লঅন্ত বাগবোর বিরুদ্ধে ভিনদেশি সেনা ব্যবহার করার অভিযোগ তুলেছেন। ফ্রান্সের বেতার সংস্থা ইউরোপ ওয়ানকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ অভিযোগ করেন তিনি। গতকাল বৃহস্পতিবার সাক্ষাৎকারটি প্রচারিত হয়। ওয়েতাহার অভিযোগ, তাঁর সমর্থকদের বিরুদ্ধে নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতা ও ধর্ষণের ঘটনায় প্রতিবেশী লাইবেরিয়ার ভাড়াটে সেনাদের ব্যবহার করছেন বাগবো।
এদিকে আবিদজানের হোটেলে গতকালই সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ওয়াতেহা বাগবোকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য আফ্রিকার দেশগুলোর আঞ্চলিক জোট ইকোওয়াসের প্রতি সামরিক বাহিনী ব্যবহার করার আহ্বান জানিয়েছেন।
গত ২৮ নভেম্বরের নির্বাচনের পর থেকে আইভরি কোস্টে অস্থিতিশীলতা চলে আসছে। পশ্চিমা বিশ্ব ও আফ্রিকার অনেক দেশ বলছে, নির্বাচনে ওয়েতাহা জয়ী হয়েছেন। কিন্তু ১০ বছর ধরে প্রেসিডেন্ট থাকা বাগবো ক্ষমতা ছাড়তে রাজি নন। নির্বাচনের পর ওয়েতাহা ও বাগবো আলাদাভাবে শপথ নেন। এর পর আবিদজান শহরের একটি হোটেলে আশ্রয় নেন ওয়েতাহা। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীর একটি ছোট দল তাঁকে নিরাপত্তা দিচ্ছে। বাগবোর সমর্থক সেনারা হোটেল অবরুদ্ধ করে রেখেছে। ইকোওয়াসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বাগবো আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আহ্বান উপেক্ষা করে ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার চেষ্টা করলে তারা সর্বশেষ উপায় হিসেবে সামরিক শক্তি ব্যবহার করতেও প্রস্তুত।
আবিদজানে হোটেলে অবরুদ্ধ অবস্থায় আলাদা সাক্ষাৎকারে ওয়াতেহা সাংবাদিকদের বলেন, ‘বাগবো যদি ক্ষমতা ছাড়তে রাজি না হন, তাহলে তাঁকে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য করার ব্যাপারে সব ধরনের শক্তি প্রয়োগ করার সুযোগ রয়েছে ইকোওয়াসের। এ ক্ষেত্রে তারা বৈধপন্থায় সামরিক বাহিনীও ব্যবহার করতে পারে।’ তিনি উল্লেখ করেন, বৈধপন্থায় সামরিক বাহিনীর ব্যবহার মানে আইভরি কোস্টের বিরুদ্ধে সামরিক বাহিনীর ব্যবহার করা নয়।
এর আগে বুধবার ইউরোপ ওয়ানকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ওয়েতাহা বলেন, ‘লঅন্ত বাগবোর হাতে রক্তের দাগ লেগে আছে। অনেক আইভরিয়ান লঅন্ত বাগবোর ভাড়াটে সেনা ও মিলিশিয়াদের হাতে নিহত হয়েছে। আমাদের কাছে এর প্রমাণ রয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত যাতে আইভরি কোস্টে একটি তদন্ত দল পাঠান, সে জন্য আমি ইতিমধ্যে জাতিসংঘের মহাসচিবের কাছে চিঠি লিখেছি।’
আইভরি কোস্টের অস্থিতিশীলতা থামাতে এবং বাগবোকে নির্বাচনের ফল মেনে ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য করার জন্য শক্ত অবস্থান নিয়েছেন বান কি মুন। জাতিসংঘের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘অন্য যেকোনো বিষয়ের চেয়ে আইভরি কোস্টের বিষয়ে ব্যক্তিগতভাবে বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছেন বান কি মুন। প্রায় প্রতিদিনই তিনি আবিদজানে জাতিসংঘ মিশনের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যোগাযোগ রাখছেন।’
বাগবো আইভরি কোস্টে মোতায়েন জাতিসংঘ বাহিনীর সাড়ে নয় হাজার সেনাকে দেশ ছেড়ে যাওয়ার নির্দেশ দিলেও বান কি মুন তা প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, ওই দেশে কোনো ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটলে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়।
আইভরি কোস্টের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সেখানে মোতায়েন জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীর জন্য আরও এক থেকে দুই হাজার অতিরিক্ত সেনা চেয়েছে জাতিসংঘ। আইভরি কোস্টে জাতিসংঘ মিশনের মানবাধিকারবিষয়ক মুখপাত্র সিমোন মুনজু বলেন, আবিদজান থেকে ৫০০ কিলোমিটার দূরে ডুয়েকোয়ে শহরে গুয়েরে ও ম্যালিনকে গোষ্ঠীর মধ্যে সহিংসতায় কমপক্ষে ১৪ জন নিহত হয়েছে। একটি ডাকাতির ঘটনায় এক নারীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে এই সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। গত বুধবারও দেশটিতে সহিংসতায় সাতজন নিহত হয়।

No comments

Powered by Blogger.