নিয়ন্ত্রক শক্তির সর্বোচ্চ প্রয়োগ নিশ্চিত করার নির্দেশ গভর্নরের

মুদ্রাবাজারের সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ন্ত্রক শক্তির সর্বোচ্চ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে নির্দেশ দিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আতিউর রহমান।
গভর্নর বলেছেন, ব্যাংকগুলো নিয়মনীতির মধ্যে থেকে কাজ করছে কি না, তা গভীরভাবে খতিয়ে দেখতে হবে। যেকোনো পরিস্থিতিতে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ব্যাংকিং খাতকে সুস্থ রাখার সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নিতে হবে।
অন্যদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দ্বিতীয় গভর্নর এ কে এন আহমেদ বলেছেন, সাম্প্রতিক সময়ে মুদ্রাবাজারে বড় অস্থিরতা তৈরি হয়। কলমানির সুদের হার ১৯০ শতাংশে গিয়ে ঠেকে। সংবাদপত্রে বলা হয়েছে, এই হার বিশ্বের অতীত সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। কিন্তু এ ধরনের রেকর্ড কাম্য হতে পারে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকে অনুষ্ঠিত নির্বাহী উন্নয়নবিষয়ক এক সেমিনারে গতকাল বৃহস্পতিবার বর্তমান ও সাবেক গভর্নররা এসব কথা বলেন।
সেমিনারে ‘আর্থিক সংকট এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থার দায়দায়িত্ব’ বিষয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এ কে এন আহমেদ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর মুরশিদ কুলী খান। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উপমহাব্যবস্থাপক থেকে নির্বাহী পরিচালক পর্যায়ের কর্মকর্তারা এই সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন।
আতিউর রহমান বলেন, দেশের অর্থনীতি এখন বড় ধরনের উজ্জীবনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে রপ্তানিতে ৪১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। রপ্তানি বাড়ছে বলেই আমদানিও বাড়ছে। এর প্রভাব পড়েছে মুদ্রাবাজারে। ফলে এ মুহূর্তে নিয়মনীতির মধ্যে ব্যাংকগুলো চলছে কি না, তা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তাদের গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে।
গভর্নর কর্মকর্তাদের সাহস দিয়ে বলেন, ‘আপনারা নির্ভয়ে এবং নিরপেক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করুন।’
আতিউর রহমান আরও বলেন, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো কোথায় কে কী করেছে, সে খবর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে আছে। সে বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কঠোর নজরদারি রয়েছে। কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে তাঁরা এ বিষয়গুলো গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করবেন, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন। গভর্নর বলেন, মন্দের জন্য শাসন ও ভালোর জন্য পুরস্কারের ব্যবস্থা থাকতে হবে। এ জন্য নীতি নির্ধারণে ইতিমধ্যে বেশ কিছু পরিবর্তন এসেছে, শিগগিরই আরও কিছু পরিবর্তন আনা হবে। তিনি বলেন, ‘আপনারা ব্যবস্থা নিন, অভিভাবক হিসেবে আপনাদের রক্ষা করার দায়িত্ব আমার।’
এ কে এন আহমেদ বলেন, ব্যাংকিং খাতে কোনো বিপদ বা ঝুঁকি থাকলে কেন্দ্রীয় ব্যাংককেই তা কাটিয়ে সঠিক জায়গায় নিয়ে যেতে হবে। তিনি মনে করেন, এ জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংককে অনেক সময় কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হতে পারে। বাংলাদেশ ব্যাংককে তাই শুধু সরকারের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকলে চলবে না। তাঁর মতে, দেশের ভাগ্য বদলানোর দায়িত্ব ব্যাংকারদের নয়। এ কাজের দায়িত্ব নির্বাচিত প্রতিনিধিদের।
নিজের সময়কার অভিজ্ঞতা উল্লেখ করে এ কে এন আহমেদ বলেন, গভর্নর যে-ই থাকুন কিংবা যত প্রতিভাবানই তিনি হন না কেন, সহকর্মীদের সহযোগিতা না পেলে তিনি সফল হবেন না। তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বায়ত্তশাসন যেমন দরকার, তেমনি দেশের গতি-প্রকৃতি বোঝার জন্য সরকারের সঙ্গে একটা সামঞ্জস্যও থাকতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.