কয়েক'টি কবিতা- by শামসেত তাবরেজী ও আলতাফ হোসেন

চারটি কবিতা by শামসেত তাবরেজী

কবিতা লেখার আগে ও পরে

অনুষঙ্গে ওরা মেটাফর
নৈয়ায়িক টানে জাগ্রত,
কিঞ্চিৎ যুক্তিশীলও বটে
চেনে আত্মরচিত কবর।

অনু-সঙ্গে আমিও একদিন
পুরুষতা লিখেছি মাটিতে,
লিখে পরে ভুলে গেছি যথা
ভুলে গিয়ে আবার স্বাধীন।

ঘাসে ঘষা লেগে এইরূপ
মনে হলে বিমূর্ততার
জাগ্রত মেটাফর কাঁদে,
অন্যদিকে কাঁদে নলকূপ

যেথা শুধু লোহা-মাখা পানি
অতৃপ্তের অবৈধ রসুই,
তারই তলে ঘাড় পেতে দিয়ে
জ্বরতপ্ত মাথাখানি ধুই।

৩/৮/২০০৮


খিদে

– এসো কিছু খাই, এইখানে
অন্ধকার সরিয়ে
বাটা-রসুনের গন্ধ-মাখা
বিরুয়ের ভাত

সড়ক কাঁপিয়ে যায় ট্রাক
আপাততঃ আহার না-হয় থাক?

– আমার কিন্তু খিদে ভারী
চোখে কাঁপছে
নিরঞ্জন ইলিশ
ঝোলে ডোবা…মেটাফিজিকাল

সড়ক কাঁপিয়ে যায় ট্রাক
আপাততঃ আহার না-হয় থাক?

– ট্রাক যায়? ট্রাকে ওরা অন্ধ আরোহী?

– আরে না, সামরিক বিধানের বহি!

৩/৮/২০০৮

জর্নালিজম

বলছে বেশ পাকিন্তানের কথা খুব খুব রক্তরঞ্জিত বলছে বলছে বলছে
বলছে চিনদেশের কথা যা-তা বলছে বলছে বলছে
আর আমেরিকার কথা তো বলছেই তা তা থৈ থৈ বলছে বলছে বলছে
ভারতবর্ষেরর কথা বলছে ভারতের, ইন্ডিয়ার, হিন্দুস্তানের
বলছে বলছে বলছে
বলছে বাংলাদেশের কথাও বলছে সম্ভাবনার কিন্তু অকার্যকর
বলছে বলছে বলছে
বলছে আ-কথা কু-কথা টেলিভিশনে রেডিয়োতে সংবাদপত্রে সেমিনারে
বলছে বলছে বলছে
বলছে গলায় রক্ত তুলে, কুঁদে, লাফিয়ে হাত-পা নাচিয়ে বলছে বলছে বলছে
কিন্তু কেউ-ই নেপালের কথা বলছে না এক লাইনও বলছেই না

যত্তসব রাবিশ!

৩/৮/২০০৮

দেশি রাজনীতি

ট্রপিক্যালাইজড করে নাও, হ্যাঁ, পরথমে খুলে,
ছাড়িয়ে, ভাবো না আহা কী মহান আম!

দুধে মিশে যায় যদি, যেতে দাও
দই হয়ে গেলেও-বা মন্দ কী? থার্ড ওয়ার্ল্ড না?

অত শক্ত করে কেউ চোয়াল? গাধা একটা!

প্লিজ সহজ হও, তারপর ছাড়াও
এখন একটু কি নরম লাগছে? লাগছে তো? বেশ!

দেখো, একটু পরেই হবে, ঠিকই হবে
আর যখন হবে
শীর্ষ সমুন্নত রেখে গলা ছেড়ে
গাইতে ভুলো না যেন
সংগ্রামী গান…

৩/৮/২০০৮
--------------------------
পাঁচটি কবিতা by আলতাফ হোসেন

ফিরে এসেই না দেখছি

একজন ‘আত্মীয়’ দাওয়াত খেতে ডাকলে
রাকা আর আমি
আমরা গোলাম
আমাদের খেতে দেওয়া হলো পায়েস
আমরা খেলাম
খেতে দেওয়া হলো ডিমের হালুয়া
আমরা খেলাম
খেতে দেওয়া হলো কোরবানির খাসির কলিজা
খাসির মগজ
খাওয়া বারণ খাওয়া বারণ
আমরা খেলাম

কোনো কথা না বলে কোনোই কথা না বলে

ফিরে এসেই না দেখছি এমন ফাসবিন্দারের নীরব, স্তব্ধ ছবি!

(আসলে মত হচ্ছে এই আমার যে সকল শব্দেই উদ্ধৃতিচি‎হ্ন বসবে, আর ‘আত্মীয়’ শব্দের সঙ্গে দুটো করে, কিন্তু চি‎হ্নের এমন জঙ্গল তৈরি হলে সেও এক বিচ্ছিরি ব্যাপার! পদ্য-রচয়িতা)

শুভ্রা গানে মজলাম


শুভ্রা গানে মজলাম, মরলাম
বেশ, তবে যা তোমার নাম
কেন তুমি বললে তাঁরই দান, তাঁর
কেন তুমি বললে তাঁরই দান, তাঁর

তোমার তো সুর ছিল, নিজেরই তো সুর, সব সব বোঝাবার!

পা ঝুলিয়ে

জনে জনে বলতে চেয়েছি
শোনাতে চেয়ে পায়ে ধরতে বাকি রেখেছি
খুন করতেও এমনকি
আমাকে বলেছিলেন চারজন
তিন হাজার ছত্রিশবার
তবে তারও আগে থেকে শুনে শুনে
শোনাসংখ্যা নিশ্চয় লক্ষের ঘরও পেরিয়ে থাকবে
তারপর আজই দেখতে পেলাম চিনদেশের সেই তাও-ও বলেছেন:
দুনিয়াব্যাপারে
কী করে গুরুগম্ভীর থাকি
উল্টাপাল্টা সমস্ত যেখানে

আর আমার কাজ কী
আর আমার কী গরজ

টিলায় উঠে গিয়ে পা ঝুলিয়ে বসেছি

মনেও কোরো না

মনেও কোরো না তোমরা কী বলবে তার ভাবনা আছে এই কবিতায়
একটু অপেক্ষা শুধু অক্ষরেরা নিয়ে চলে কথারা যা চায়

হাসান আজিজুল হকই ঠিক


হাসান আজিজুল হকই ঠিক। না আমাদের মৃত্যুদিন জানতে চাওয়াটা ঠিক, না আমাদের জন্মদিন জানাটা। কিন্তু তা হবার কোনো উপায়ই রাখছে না মানুষজন। সব হিসাব নিয়ে নিচ্ছে, কম্পিউটারে যাতে ভরে ফেলা যায়। ‘মাপের মধ্যে’ রাখা যায় মানুষটাকে। অথচ দেখুন না কবি রণজিৎ দাশের ব্যাপারটা, আজ দু হাজার আটে তাঁর বয়স বত্রিশ, না হয়তো বিয়াল্লিশই, অথচ তাঁর জন্ম উনিশশো ঊনপঞ্চাশে। অদ্ভুত কাণ্ড নয়?

বা, ধরুন সদ্যপ্রয়াত সংবাদ সম্পাদক বজলু(র রহমান) ভাইয়ের কথা। তাঁর জন্মতারিখের সঙ্গে প্রকৃত বয়সের কোথায় ছিল বলুন সঙ্গতি? প্রকৃত বয়স বলতে ছুটে বেড়াচ্ছিলেন যেমন তিনি…
এইরকমই সব। সঙ্গতি থাকছে না।
এ কথাটা হচ্ছে অন্য মূল কথাটির বাইরে। মানে যে কথায় সচরাচর বলা হচ্ছিল, সারারাত্র নৌকা বাইয়া, রাত পোহাইলে দেখি চাইয়া গো, আমার যেইখানের নাও সেইখানেতেই আছে…
============================
শামসেত তাবরেজী
জন্ম
ঢাকা, ৫ এপ্রিল

পেশা
বিজ্ঞাপনী সংস্থায় চাকরি

বই
উদ্বাস্তু চিরকুট (১৯৯৩)
আবাগাবা (২০০১)
আম্রকাননে মাভৈ কলের গান (২০০৭)

প্রকাশিতব্য পদ্যের বই
হে অনেক ভাতের হোটেল

shamsettabrejee@gmail.com
============================
আলতাফ হোসেন
কবি, গদ্যলেখক

জন্ম
কিশোরগঞ্জ, ১৯৪৯

প্রকাশিত বই

সজল ভৈরবী, শব্দ প্রকাশনী, চট্টগ্রাম ১৯৭২
লাজুক অক্টোপাস, সাহানা, ঢাকা ১৯৭৭
ভূমধ্যসাগরে অন্ধ ঘূর্ণি যা বলুক, মুক্তধারা, ঢাকা ১৯৮৭
সঙ্গে নিয়ে চলে যাই পাহাড়চূড়োয়, নিত্যপ্রকাশ, ঢাকা ১৯৯৪
বলি যে তারানা হচ্ছে, দিব্যপ্রকাশ, ঢাকা ২০০০
তারপর হঠাৎ একদিন মৌমাছি, প্রত্ন, ঢাকা ২০০২
পাখি বলে, পাঠসূত্র, ঢাকা, ২০০৮
কী ফুল ঝরিল বিপুল অন্ধকারে, যেহেতু বর্ষা, ঢাকা, ২০০৮
ইমেইল
altaf_khokon@yahoo.com
============================
গদ্য কবিতা- 'ব্রহ্মাণ্ডের ইসকুল' by শামীম রেজা  কবিতা- 'আমার গ্রীষ্মকাল' by কাজল শাহনেওয়াজ  কবিতা- 'পাঁচটি কবিতা' by মুজিব ইরম  কবিতা- 'পাগলের হাসি ও অন্যান্য কবিতা' by মহাদেব সাহা   কবিতা- 'যেভাবে ঘরের কিসসা রচিত হয়' by ওমর কায়সার   কবিতা- 'বীতকৃত্য ও অন্যান্য কবিতা' by মাসুদ খান   কবিতা- 'পাঁচটি কবিতা' by সরকার আমিন   কবিতা- 'কাঁদতে আসিনি ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি'   পাঁচটি কবিতা' by অবনি অনার্য  কবিতা- 'ছুটপালক' by সব্যসাচী সান্যাল  গদ্য কবিতা- 'লীলা আমার বোন' by নান্নু মাহবুব   কবিতা- 'উৎসর্গ' by অসীম সাহা  তিনটি কবিতা' by বদরে মুনীর  কবিতা- 'সেরগেই এসেনিন বলছে' by আবদুল মান্নান সৈয়দ  কবিতা-মোহাম্মদ রফিক এর কপিলা থেকে ও অঙ্গীকার  কবিতা- 'সেতু' by বায়েজীদ মাহবুব  উপন্যাস- 'রৌরব'  by লীসা গাজী »»»   (পর্ব-এক) # (পর্ব-দুই) # (পর্ব-তিন) # (পর্ব-চার শেষ)   গল্প- 'পান্নালালের বাস্তু' by সিউতি সবুর   গল্প- 'গোপন কথাটি' by উম্মে মুসলিমা  আহমদ ছফার অগ্রন্থিত রচনা কর্ণফুলীর ধারে




bdnews24 এর সৌজন্যে
লেখকঃ শামসেত তাবরেজী ও আলতাফ হোসেন

এই কবিতা'সমুহ পড়া হয়েছে...
free counters

No comments

Powered by Blogger.