যে কাউকেই আমরা হারাতে পারি

সাকিব আল হাসান
নিউজিল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করার পর থেকে একের পর এক অভিনন্দন পাচ্ছি। শেষ ম্যাচটার পরই প্রধানমন্ত্রী ফোন দিয়ে বললেন, তিনি আমাদের পুরো খেলা দেখেছেন। বাংলাদেশ দলকে জিততে দেখে তাঁর খুব ভালো লেগেছে। আমার মাধ্যমে পুরো দলকে অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
আজ (কাল) সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ আমাকে ফোন করেছেন। উনি আমার সঙ্গে কথা বলতে চান। প্রধানমন্ত্রীর ওখানে অনুষ্ঠান আছে বলে কাল (আজ) হয়তো পারব না। পরশু (কাল) ওনার সঙ্গে দেখা হতে পারে। এ ছাড়া বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) সভাপতিও আমাদের সবাইকে ডেকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। আমি এসব অভিনন্দনকে দলের জন্য ইতিবাচকই বলব। একটু হলেও বাড়তি অনুপ্রেরণা জোগায় এসব। সবাই অনেক খুশি, সবারই চাওয়া আমরা আরও ভালো করি...এমন প্রত্যাশায় অনুপ্রাণিত হওয়ার মতো অনেক কিছু থাকে।
ভালো খেললে অভিনন্দন পাব, এটাই স্বাভাবিক। তার পরও আমাদের কাজ করার মতো অনেক জায়গাই আছে এখনো। আমরা যেভাবে এগোচ্ছি, আমার মনে হয় সঠিক পথেই আছি। আরও শক্ত একটা জায়গায় যেতে হয়তো কিছুদিন সময় লাগবে। তবে সে জন্য খুব বেশি কিছু করার দরকার নেই। যে পথে আছি, সে পথে থাকলেই হবে।
নিউজিল্যান্ডকে ৪-০-তে সিরিজ হারানোর পর দলের একটা বিশ্বাস আরও জোরালো হয়েছে—আমরা চাইলে সবাইকেই হারাতে পারি। বাংলাদেশ দল যদি তার সেরা খেলাটা খেলতে পারে, বড় যেকোনো দলকেই হারানোর সামর্থ্য আমাদের আছে।
শুনেছি, বাংলাদেশের বাইরেও এখন বাংলাদেশ দল নিয়ে বেশ আলোচনা। বিশ্বকাপে বাংলাদেশ একটা কিছু ঘটিয়ে ফেলবে বলে মনে করছে অনেকে। আমার আইপিএলে ভালো দাম পেয়ে খেলার সম্ভাবনার কথাও উঠছে। সত্যি বলতে কি এসব কথা আমার মধ্যে কোনো ভাবান্তর ঘটায় না। আশপাশে অনুপ্রাণিত হওয়ার অনেক কিছুই আছে। কাজেই কে কী বলল, সেসব ভেবে অনুপ্রাণিত হওয়ার দরকার পড়ে না।
আমি বলব, ক্রিকেট খেলাটাই আমার কাছে সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা। আমি খেলে মজা পাই...এটা আমার ভালো লাগে। সবচেয়ে বড় প্রেরণা তো এটাই! খেলাটা পছন্দ হয়, এ কারণে খেলি। মাঠে না গেলে ভালো লাগে না, ক্রিকেট না খেললে ভালো লাগে না। খেলার আগে খালি অপেক্ষায় থাকি, ইস্! ম্যাচটা কখন হবে? এর চেয়ে বড় অনুপ্রেরণা আর কী আছে? আমি জানি, অনেক দিন ক্রিকেট খেলতে হলে আমাকে ভালো খেলতে হবে।
আর বিশ্বকাপ নিয়েও আমরা এখনই চিন্তা শুরু করছি না। তার আগে জিম্বাবুয়ে সিরিজ আছে। নিউজিল্যান্ডকে সহজে হারানোর পর অনেকে ভাবতে পারেন জিম্বাবুয়েকে বুঝি আমরা উড়িয়েই দেব। ব্যাপারটা এত সহজে হয়ে গেলে ভালো হতো, কিন্তু সহজ তো নয়! জিম্বাবুয়ে এখন খুব ভালো ক্রিকেট খেলছে। হোম সিরিজে ওদের বিপক্ষে জিততে হলে আমাদেরও খুব ভালো ক্রিকেটই খেলতে হবে। বিশ্বকাপ নিয়ে এখনই না ভেবে আগে অবশ্যই জিম্বাবুয়েকে নিয়ে চিন্তা করতে হবে। বিশ্বকাপের আগে এই সিরিজের ফলাফলটা আমাদের জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। ওদের সঙ্গে ভালো ক্রিকেট খেললে দলের আত্মবিশ্বাস আরও বেড়ে যাবে। আর সিরিজটা ভালো না হলে বিপরীত হওয়ার আশঙ্কা। কাজেই প্রতিপক্ষ জিম্বাবুয়ে বলে আয়েশে গা ভাসানোর সুযোগ নেই। বরং এই সিরিজই আমাদের জন্য বেশি চাপের। আমি চাই, সবাই চাপটা ভালোভাবে সামলাক।
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে জয়ের পর আমাদের কাছে সবার প্রত্যাশা বাড়বে বুঝতে পারছি। তবে দর্শক-সমর্থকদের প্রত্যাশা তো আর সব সময় পূরণ করতে পারব না আমরা। আমাদের নিজেদেরও কিছু লক্ষ্য থাকে, থাকবে। আমরা যেটা করা সম্ভব বলে মনে করি, সেটা তো অবশ্যই করব।
জিম্বাবুয়ে সিরিজের আগে জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা জাতীয় লিগের ওয়ানডে টুর্নামেন্ট খেলবে। সবার জন্য খুব ভালো ম্যাচ প্র্যাকটিসের সুযোগ এটা। তবে আমার আপাতত জাতীয় লিগে খেলার ইচ্ছা নেই। ইংল্যান্ড সফর, কাউন্টি ক্রিকেট এরপর নিউজিল্যান্ড সিরিজ—টানা খেলার মধ্যেই তো ছিলাম এত দিন। জাতীয় লিগে ঢাকা ভেন্যুর ম্যাচগুলোই হয়তো খেলব। তবে সবার আগে চাই দুই সপ্তাহের বিশ্রাম। এই সময়টাতে দেশেই থাকব, শুধু ক্রিকেট থেকে দূরে। বিশ্রাম মানে পুরোপুরিই বিশ্রাম।

No comments

Powered by Blogger.