প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার মামলার শুনানি মুলতবি

পাকিস্তানে বিচারকদের পুনর্বহালের সরকারি প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহারসংক্রান্ত মামলার শুনানি গতকাল সোমবার মুলতবি করেছেন সে দেশের সুপ্রিম কোর্ট। সম্প্রতি দেশটির একাধিক টেলিভিশন চ্যানেলে খবর প্রচার করা হয়, গত বছরের ১৬ মার্চ বিচারকদের পুনর্বহালের ব্যাপারে জারি করা প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার করে নেবে সরকার। ওই খবরের পরিপ্রেক্ষিতে এই সুয়োমোটো মামলা করা হয়। এদিকে সরকারের সঙ্গে বিচার বিভাগের কোনো বিরোধ নেই বলে দাবি করেছেন প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ রাজা গিলানি।
ওই খবরের সত্যতা নির্ধারণে পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি ইফতিখার চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন ১৭ সদস্যের একটি বেঞ্চ কাজ করছে। গতকাল চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলে আরও সময় চেয়েছে কমিটি। পাশাপাশি ওই সংবাদ প্রতিবেদনের সংশ্লিষ্ট সাংবাদিককে ২২ অক্টোবর কমিটির সামনে হাজির হতে বলা হয়েছে। শুনানিতে ওই কমিটির এক সদস্য বিচারক জাভেদ ইকবাল জানান, একটি টেলিভিশন চ্যানেলের উপস্থাপক খবরে বলেছেন, ওই প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহারের নির্দেশনামায় ইতিমধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে স্বাক্ষর করা হয়েছে।
এর আগে আদালত এই মামলায় সরকারকে লিখিত জবাব দেওয়ার নির্দেশ দেন। পাশাপাশি আদালতের পক্ষ থেকে পরিষ্কার জানিয়ে দেওয়া হয়, কোনো সরকারি কর্মকর্তা বিচারকদের পুনর্বহালের ওই প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহারের নির্দেশে স্বাক্ষর করতে পারবেন না। এমনটি করা হলে তা হবে সংবিধান লঙ্ঘন।
গতকালের শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল মৌলভী আনোয়ারুল হকের কাছে আদালত জানতে চান, এ ব্যাপারে সরকারের কাছে চাওয়া লিখিত জবাব তিনি জমা দিতে চান কি না। অ্যাটর্নি জেনারেলের জবাব ছিল নেতিবাচক। আগের শুনানিতে সরকারের লিখিত জবাব জমা দেওয়ার জন্য আদালতের কাছে সময় চেয়েছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল।
এ ব্যাপারে জাতির উদ্দেশে রোববার রাতে এক টেলিভিশন ভাষণে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ রাজা গিলানি বলেন, বিচারকদের পুনর্বহালসংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার করবে না তাঁর সরকার। এ ব্যাপারে তাঁদের অবস্থান পরিষ্কার। তবে এ ব্যাপারে আদালতের পক্ষ থেকে লিখিত জবাব দেওয়ার যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, পরোক্ষভাবে তা নাকচ করে দিয়েছেন তিনি। গিলানি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী কিছু মুখে বা লিখিতভাবে বললে তাঁর প্রতি সবার সম্মান দেখানো উচিত।’ এই বক্তব্যের মাধ্যমে ওই প্রজ্ঞাপন বহাল রাখার ব্যাপারে তাঁর বৃহস্পতিবারের মৌখিক আশ্বাসের প্রতি ইঙ্গিত করেছেন গিলানি। পাশাপাশি গিলানি বলেছেন, সরকারের নির্বাহী বিভাগের সঙ্গে বিচার বিভাগের কোনো বিরোধের আশঙ্কা নেই। বরং নির্বাহী বিভাগ ও বিচার বিভাগ একসঙ্গে কাজ করছে।
এদিকে দেশের বর্তমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতির জন্য প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারিকে দায়ী করেছেন বিরোধীদলীয় নেতা নওয়াজ শরিফ। গত রোববার লন্ডনে এক সংবাদ সম্মেলনে নওয়াজ বলেন, ‘বিচার বিভাগকে এখনো সহজভাবে মেনে নিতে পারছেন না জারদারি। প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগেই তিনি চুক্তি ভঙ্গ করেন।’ দেশের সম্পদ যারা লুট করেছে, শুধু তাদের বিচার শুরু করলেও পরিস্থিতি অনেক ভালো থাকত বলে মন্তব্য করেন তিনি।
পাকিস্তানের সাবেক সেনাশাসক জেনারেল পারভেজ মোশাররফের সময় থেকে সরকারের সঙ্গে বিচার বিভাগের এই টানাপোড়েন শুরু হয়। প্রধান বিচারপতি পদ থেকে ইফতিখার মাহমুদ চৌধুরীকে অপসারণ করে তীব্র বিক্ষোভের মুখে পড়েন মোশাররফ; যার পরিপ্রেক্ষিতে তাঁকে ক্ষমতা হারাতে হয়। পরে নওয়াজ শরিফ ও জারদারি প্রতিশ্রুতি দেন, তাঁরা সরকার গঠন করলে মোশাররফের সময় বরখাস্ত করা বিচারকদের পুনর্বহাল করা হবে। সে অনুযায়ী প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার।

No comments

Powered by Blogger.