বিসিবিতে সিরিজ জয়ের উৎসব

বিসিবি অফিসের সামনে প্রকাণ্ড একটা হাতি। হাতিটা প্লাস্টিকের দড়ি দিয়ে শক্ত করে বাঁধা, পাছে ছুটে-টুটে যায়। না, ‘বাংলাওয়াশের’ উৎসব করতে কাল হাতি মিছিলের আয়োজন করেনি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। বাতাসে ফোলানো হাতিটার পেটের রঙিন লোগোই বলে দিচ্ছে, ওটা আসলে ২০১১ বিশ্বকাপের মাস্কট ‘স্টাম্পি’র প্রতিকৃতি।
বিসিবি অফিসে স্টাম্পির উপস্থিতি বাংলাদেশের ক্রিকেটের বিশ্বকাপমুখী ছবিটাই ফুটিয়ে তোলে। মাইক্রোম্যাক্স ওডিআই কাপে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের ৪-০ ব্যবধানে জয় একটা ইতিহাস। কিন্তু ইতিহাস তো সব সময় পেছনেই থাকে! ৪-০-তে সিরিজ জয়ের মতো জ্বলজ্বলে হলে সেটি কেবল ভবিষ্যতের পথচলায় বড় প্রেরণা হতে পারে। ইতিহাস আঁকড়ে বসে থাকাটা তো আর কাজের কাজ হতে পারে না। ‘বাংলাওয়াশ’ থেকে পাওয়া আত্মবিশ্বাস নিয়ে বাংলাদেশ দলকেও এখন দৃষ্টি ফেলতে হবে দূরে। সামনে জিম্বাবুয়ে সিরিজ, তারপর বিশ্বকাপ। বিসিবির অফিসের সদর দরজায় দাঁড়িয়ে থাকা স্টাম্পি বারবার মনে করিয়ে দিচ্ছে সেটা।
সিরিজ-জয়ী দল আর দলের কোচদের ডেকে কাল কথাটা মনে করিয়ে দিলেন বিসিবি সভাপতি আ হ ম মোস্তফা কামালও। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে জয় উদ্যাপন করতে এদিন জাতীয় দল এবং সিরিজ-সংশ্লিষ্টদের সৌজন্যে মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন করেছিল বিসিবি। এর আগে বোর্ড অফিসের সভাকক্ষে সভাপতি অভিনন্দন জানিয়েছেন ক্রিকেটার-কোচদের। মাশরাফি-সাকিব কেক কেটেছেন, সেই কেক তুলে দেওয়া হয়েছে সবার মুখে। পরে উৎসবের আমেজে মোড়া অভিনন্দন সভায় মোস্তফা কামাল বলেছেন, ‘এই সাফল্যের দাবিদার ক্রিকেটার এবং টিম ম্যানেজমেন্ট। আমরা তাদের সঙ্গে আছি মাত্র। ভালো পারফরম্যান্সের উদ্দেশ্যে জাতীয় দলের যেকোনো প্রয়োজন মেটাতে বোর্ড প্রস্তুত। তবে এত সাফল্যের মধ্যেও আমাদের কিছু কিছু জায়গায় উন্নতি করতে হবে। আশা করি, আমাদের বিশেষজ্ঞ কোচরা পাওয়ার প্লের ব্যাটিং-বোলিংসহ যেসব জায়গায় উন্নতি প্রয়োজন সেসব জায়গায় দৃষ্টি দেবেন।’
সপ্তাহ খানেকের ছুটি নিয়ে অস্ট্রেলিয়া যাচ্ছেন জেমি সিডন্স। এর আগে শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে দাঁড়িয়ে কাল বোর্ড সভাপতির কথারই প্রতিধ্বনি তুললেন জাতীয় দলের কোচ, ‘সিরিজ জেতায় আমরা খুব খুশি। সভাপতি ডেকে সবাইকে অভিনন্দন জানালেন, এটাও আমার ভালো লেগেছে। তবে আমাদের আরও অনেক জায়গায় কাজ করার আছে।’ অতৃপ্তির ছাপ ফিল্ডিং কোচ জুলিয়েন ফাউন্টেনের কণ্ঠেও। শেষ ম্যাচে ফসকে যাওয়া তিনটি ক্যাচ বাদ দিলে পরশু শেষ হওয়া সিরিজটায় বাংলাদেশের ফিল্ডিং হয়েছে দুর্দান্ত। ফাউন্টেন তার পরও বলছেন, ‘ফিল্ডিং এক দিনে শেখার বিষয় নয়। ধাপে ধাপে এগোতে হবে, এখন যে ফিল্ডিংটা হচ্ছে তাতে আমরা অর্ধেক এগিয়েছি বলতে পারেন। উন্নতির আরও জায়গা আছে। বিশ্বকাপের আগেই আমাদের সেসব দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করতে হবে।’
৪-০-তে জিতেও আত্মতৃপ্তিতে ডুবে না যাওয়াটাও বোধহয় এই সিরিজের একটা অর্জন। ক্রিকেটার-কোচদের আনন্দ যেমন পরিমিত, ক্রিকেট বোর্ডও যেন জাতীয় দলের কাছে আরও বড় কিছুর প্রত্যাশী। সিরিজ জয় উপলক্ষে তাই পুরস্কারে ভাসিয়ে দেওয়া হলো না দলকে। বোর্ড সভাপতি জানিয়েছেন, নিয়ম অনুযায়ী উইনিং বোনাস হিসেবে যা পাওয়ার কথা তাই পাবেন সিরিজ-জয়ী দলের সদস্যরা। সিরিজের আগে নিউজিল্যান্ড দল ছিল আইসিসি র‌্যাঙ্কিংয়ের ৬ নম্বরে। বিসিবির উইনিং বোনাসের নিয়ম অনুযায়ী র‌্যাঙ্কিংয়ের ৪ থেকে ৬ নম্বর দলের বিপক্ষে জিতলে ম্যাচ প্রতি ক্রিকেটাররা পান ১ হাজার ডলার করে এবং সিরিজ জয়ের জন্য প্রত্যেকে পান বাড়তি এক হাজার ডলার করে। বিদেশি কোচদের জন্য পুরস্কারের অঙ্কটা ম্যাচপ্রতি ২ হাজার ডলার বলে জানা গেছে। সিরিজের আগে নিউজিল্যান্ডের র‌্যাঙ্কিং ছিল ৬।
বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, এবার দলের ম্যানেজার তানজীব আহসান এবং কম্পিউটার বিশ্লেষক নাসির আহমেদকেও পুরস্কৃত করা হতে পারে। এ তো গেল ম্যাচ আর সিরিজ জয়ের পুরস্কার, উইনিং বোনাসের বাইরে পারফরম্যান্স বোনাসও পাবেন ভালো খেলা ক্রিকেটাররা। সেঞ্চুরি আর ৫ উইকেটের জন্য পারফরম্যান্স বোনাস ১ লাখ টাকা করে। ফিফটি আর ৩ উইকেটের জন্য ৫০ হাজার টাকা।
ক্রিকেটারদের জন্য আরেকটা সুখবর, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ নৈশভোজের নিমন্ত্রণ দিয়েছেন জাতীয় দলকে। কাল খবরটা জানিয়ে বোর্ড সভাপতি প্রতিশ্রুতি দিলেন, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজ জয়ের পর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে প্রতিশ্রুত অর্থ পুরস্কার এখনো পাননি ক্রিকেটাররা। আমি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে কথা বলেছি। আশা করি, দিন কয়েকের মধ্যেই ক্রিকেটাররা তাঁদের পুরস্কার বুঝে পাবেন।’
সিরিজ জয়ের আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে এসব পুরস্কার বাড়তি প্রেরণা হবে অবশ্যই। তবে সাফল্যের ধারা ধরে রাখার কাজটা করতে হবে খেলোয়াড়দেরই।

No comments

Powered by Blogger.