আর্থিক বাজারে ঋণমান আবশ্যক করার সুপারিশ

পুঁজিবাজারসহ আর্থিক বাজার থেকে অর্থ উত্তোলনের জন্য বাধ্যতামূলকভাবে কোম্পানির ঋণমান নির্ণয়ের (ক্রেডিট রেটিং) সুপারিশ করেছেন এ খাতের বিশেষজ্ঞরা। এসব খাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি ঝুঁকি কমানোর লক্ষ্যে এ সুপারিশ করেছেন তাঁরা।
বেসরকারি খাতে দেশের তৃতীয় ঋণমান নির্ণয়কারী প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল ক্রেডিট রেটিংস লিমিটেডের (এনসিআর) আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে গতকাল সোমবার এ সুপারিশ করা হয়।
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আতিউর রহমান বলেন, ব্যাংকিং খাতের মান নির্ণয়ের আন্তর্জাতিক কমিটি ব্যাসেল-২-এর শর্তানুযায়ী, ব্যাংকগুলোকে ঋণগ্রহীতা প্রতিষ্ঠানের মান বা রেটিং জেনে বিনিয়োগ করতে হবে। বর্তমানে দেশে ছোট-বড় ২০ হাজারের মতো কোম্পানি রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের সবাই হয়তো রেটিং করবে না। এ ক্ষেত্রে যাদের রেটিং থাকবে না ঋণ পেতে তাদের অন্যদের চেয়ে বেশি খরচ করতে হবে।
রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এনসিআরের চেয়ারম্যান খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী ফারুক খান। বিশেষ অতিথি ছিলেন ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি এ কে আজাদ।
এ ছাড়া এনসিআরের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মমিন উল্লাহ পাটোয়ারী ও পাকিস্তান ক্রেডিট রেটিং এজেন্সি (পাকরা) লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শাহজাদ সেলিম উপস্থিত ছিলেন।
ফারুক খান বলেন, আর্থিক খাতে জবাবদিহি ও স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে নতুন এ ক্রেডিট রেটিং প্রতিষ্ঠান গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে সক্ষম হবে। ঋণখেলাপি কমাতেও এ ধরনের প্রতিষ্ঠান ভূমিকা রাখবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
আতিউর রহমান বলেন, চলতি বছর আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন দুটি রেটিং প্রতিষ্ঠান (মুডিস ও স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড পুওর) বাংলাদেশের সার্বভৌম ঋণমান নির্ণয় করার পর বিষয়টি ব্যাপকভাবে আলোচনায় এসেছে।
গভর্নর বলেন, এর মাধ্যমে দেশের অর্থনীতির স্বাস্থ্য সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়, যার সুফল এরই মধ্যে ব্যবসায়ীরা পেতে শুরু করেছেন। এখন আন্তর্জাতিক ঋণপত্র খুলতে ব্যবসায়ীরা দরকষাকষি করতে পারেন। কারণ ভারতের পর দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভালো রেটিং বিবি(-) অর্জন করেছে বাংলাদেশ।
গভর্নর বলেন, এ অর্জন এক দিনে সম্ভব হয়নি। দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিকতা এ অর্জনে বড় ভূমিকা রেখেছে। আর ধারাবাহিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রেখেছে অভ্যন্তরীণ চাহিদা বৃদ্ধি।
আতিউর রহমান বলেন, এ ধারা অব্যাহত থাকলে ৮ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি অর্জনের স্বপ্ন খুব বেশি দিন অধরা থাকবে না।
এ কে আজাদ বলেন, পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতার জন্য ক্রেডিট রেটিং খুবই দরকার। কারণ সাম্প্রতিক সময়ে দেশের পুঁজিবাজার অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বাজারকে স্থিতিশীল করতে সরকারকে দ্রুততার সঙ্গে পদক্ষেপ নিতে হবে।
এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি বলেন, বিকল্প বিনিয়োগের ক্ষেত্র না থাকায় সাধারণ মানুষ জমি, সম্পদ বিক্রি করে শেয়ারবাজারে আসছে। তাই বিকল্প বিনিয়োগের ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে হবে। এ জন্য বিদ্যুৎ-সংকট মোকাবিলায় কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে সরকারকে।
ইব্রাহিম খালেদ বলেন, এখন মানুষ তথ্য না জেনে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করছে। কোম্পানি রেটিং বাধ্যতামূলক করা হলে রেটিং এজেন্সিগুলো তাদের তথ্য দিতে পারবে। কুঋণ কমাতেও এ প্রতিষ্ঠানগুলো কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবে বলে তিনি মনে করেন।
উল্লেখ্য, দেশে বর্তমানে ক্রেডিট রেটিং এজেন্সি অব বাংলাদেশ (ক্র্যাব) এবং ক্রেডিট রেটিং ইনফরমেশন অ্যান্ড সার্ভিসেস লিমিটেড (ক্রিসল) নামে দুটি ঋণমান নির্ণয়কারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.