বড় পরাজয়ে শেষ সিরিজ জয়ের স্বপ্ন্ন

ব্রিস্টলের সুখস্মৃতি এভাবে ধুয়েমুছে গেল এজবাস্টনে গিয়ে? সিরিজ জয়ের সম্ভাবনা মিটিমিটি উঁকি দিয়েও হারিয়ে গেল হতাশার আড়ালে! দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ৫ রানের জয়ের পর কালকের শেষ ম্যাচটা ইংল্যান্ডের মতো বাংলাদেশের জন্যও ছিল সিরিজ জয়ের হাতছানি। ইংল্যান্ডের ৭ উইকেটে ৩৪৭ রানের জবাবে ৪৫ ওভারে ২০৩ রানে অলআউট হয়ে বাংলাদেশের সে আশা অপূর্ণই থেকে গেল। ১৪৪ রানের বিশাল হার, সঙ্গে হয়ে গেল সিরিজ পরাজয়ের আনুষ্ঠানিকতাও।
বৃষ্টির কারণে খেলা শুরু হলো ৪৫ মিনিট দেরিতে। টসে জিতে ইংলিশ কন্ডিশনে আগে বল করার সুযোগটাই লুফে নিয়েছিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। ইনিংসের প্রথম ওভারের চতুর্থ বলেই ওপেনার ক্রেইগ কিসওয়েটারকে বোল্ড করে সিদ্ধান্তের সপক্ষে একটা উদাহরণও দাঁড় করালেন নিজেই। কিন্তু এরপর? ইংল্যান্ড ইনিংসের বাকিটাকে বলতে পারেন কেবলই অ্যান্ড্রু স্ট্রাউস-জনাথন ট্রট শো। দলের ১ রানে প্রথম উইকেট পড়ার পর ৪০ ওভার একসঙ্গে থেকে ২৫০ রানের জুটি গড়েছেন দুজন, যা ওয়ানডেতে যেকোনো জুটিতে ইংল্যান্ডের সর্বোচ্চ রান। বাংলাদেশের বিপক্ষেও যেকোনো উইকেটে সর্বোচ্চ রানের জুটি এখন এটাই। ইংল্যান্ডের পক্ষে সর্বোচ্চ রানের আগের জুটিটি ছিল ২২৬ রানের, ২০০৪ সালে লর্ডসে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সেই কীর্তির মালিক স্ট্রাউস আর অ্যান্ড্রু ফ্লিনটফ। আর বাংলাদেশের বিপক্ষে আগের সর্বোচ্চ রানের (২২৫) জুটিটি ছিল কেনিয়ার দীপক চুদাসামা ও কেনেডি ওটিয়েনোর।
ওয়ানডেতে চতুর্থ সেঞ্চুরি আর ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের ইনিংস খেলে নতুন রেকর্ডেও নাম লিখিয়েছেন অধিনায়ক-ওপেনার স্ট্রাউস। ১৪০ বলে ৫ ছক্কা আর ১৬ বাউন্ডারিতে ১৫৪ রান করে স্ট্রাউস রুবেলের বলে সাকিবের ক্যাচ হয়েছেন ইনিংসের ৪.৩ ওভার বাকি থাকতে। মাশরাফির বলে সাকিবেরই ক্যাচ হয়ে ওয়ানডেতে প্রথম সেঞ্চুরি পাওয়া ট্রট ফিরে গেছেন এর ৫ ওভার আগে। ইংল্যান্ড ইনিংসে ছোটখাটো একটা ধস নামিয়েছিল ওই আউট। ট্রটকে ফেরানোর পরের বলে লুক রাইটের কট বিহাইন্ডে জেগেছিল মাশরাফির হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা। কিন্তু সর্বনাশ যা হওয়ার তা তো আগেই হয়ে গেছে। ইয়ান বেলের জায়গায় দলে আসা রবি বোপারা কেবল কফিনে শেষ পেরেকটাই ঠুকলেন। ৪৫.৩ ওভারে দলীয় ২৮৩ রানে স্ট্রাউস ফিরে যাওয়ার পর উইকেটে এসে মাত্র ১৬ বলে করেছেন অপরাজিত ৪৫ রান, এর মধ্যে ২৬ রানই শফিউলের শেষ ওভারে। তিন ছক্কা আর এক বাউন্ডারিসহ মোট ২৮ রান দিয়েছেন শফিউল ওই ওভারে। ইংল্যান্ডের শেষ ৫ ওভারে উঠেছে ৬৬।
বাংলাদেশের সিরিজ জয়ের স্বপ্ন ততক্ষণে ভেঙেচুরে শেষই বলা চলে। মাথার ওপর চেপে বসা রানের বোঝা সামলানোই কঠিন হয়ে পড়েছিল ব্যাটসম্যানদের জন্য। দলের ২৪ রানের মধ্যেই দুই ওপেনারকে হারানো সেটারই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হবে হয়তো। কোমর আর পিঠের ব্যথার কারণে শুরুতে এ ম্যাচে খেলাটা অনিশ্চিত থাকলেও শেষ পর্যন্ত মাঠে নেমে তামিম ইকবাল করলেন ১৬ রান, আরেক ওপেনার ইমরুল কায়েস ৪। জুনায়েদ সিদ্দিক ও জহুরুল ইসলামের সাময়িক প্রতিরোধের পরও উইকেট হারানো নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়ায় বাংলাদেশ ইনিংসে। ১২৪ রানে ৭ উইকেট পড়ার পর অষ্টম উইকেটে মাহমুদউল্লাহ-রাজ্জাকের ৫৬ রানের জুটিতে বাংলাদেশের হারটাই কেবল বিলম্বিত হয়েছে, সিরিজ জয়ের স্বপ্ন পাখা মেলতে পারেনি।
সাফল্য-ব্যর্থতার ইংল্যান্ড সফর শেষে বাংলাদেশ দলের পরবর্তী মিশন আয়ারল্যান্ড। ১৫ জুলাই বাংলাদেশ-আয়ারল্যান্ড দুই ওয়ানডের সিরিজের প্রথম ম্যাচ।

No comments

Powered by Blogger.