কান্নাই নিয়তি ডাচদের

কিছু কমলা জার্সি এলোমেলো পড়ে আছে মাটিতে, বিয়ারের বোতলগুলো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে এখানে-ওখানে। কোনোটা আধ-খাওয়া, কোনোটার ছিপিই খোলা হয়নি। কিছু মানুষ হাঁটুতে মাথা গুঁজে যেন ভাবছিল—কী থেকে কী হয়ে গেল!
ছন্নছাড়া অবস্থাটা ফাইনালের শেষ বাঁশি বাজার পর হল্যান্ডের আমস্টারডাম স্কয়ারের। বড় পর্দায় খেলা দেখতে আমস্টারডাম স্কয়ারে জড়ো হয়েছিলেন প্রায় ১ লাখ ৮০ হাজার ডাচ-সমর্থক। ম্যাচের প্রায় পুরোটা সময় নেচে-গেয়ে আর পান করে কেটেছে তাঁদের। উৎসব করতে করতেই ম্যাচের শেষ দিকে হল্যান্ডকে গোল খেয়ে বসতে দেখল তাঁরা। উৎসবটাও উধাও হয়ে গেল খেলা শেষের মিনিট তিনেক আগেই।
এরপর শেষ বাঁশি বাজল, পরাজয়ের শোক ছেয়ে ফেলল পুরো আমস্টারডাম স্কয়ারকে। পরাজয়ক্লান্ত অবসন্ন মন নিয়ে কেউ কেউ হাঁটুতে মাথা গুঁজে বসে পড়লেন সেখানেই। কেউ হাতে থাকা বিয়ারের বোতল, কেউ গায়ের কমলা জার্সিটা ছুড়ে ফেলে চলে গেলেন হতাশা নিয়ে। প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ জয়ের আশার সমাধি হতে দেখে কেউ কেউ কাঁদল অঝোরে।
আমস্টারডাম স্কয়ারে খেলা দেখতে গিয়েছিলেন ১৯ বছর বয়সী রাফি ফ্রেইডমান। হল্যান্ডের পরাজয়টা তিনি মেনেই নিতে পারছেন না। ‘এটা আমার বিশ্বাসই হচ্ছে না। খুব হতাশার ব্যাপার। অনেক দূর গিয়েছিলাম আমরা। অতিরিক্ত সময়ে নিয়ে যাওয়ার পর বোকার মতো একটা গোলে হারতে হলো’—মুখে কমলা পতাকা আঁকা ফ্রেইডমানের হতাশার বহিঃপ্রকাশটা ছিল এ রকমই।
খেলা দেখে ভাঙা মন নিয়ে বাড়ির দিকে ফিরছিলেন ২৬ বছর বয়সী ভিওলা ভেরহায়েফ। গায়ের কমলা জার্সিটা খুলে ফেলতে ফেলতে বললেন, ‘এখন বাড়ি ফিরে যাব, আর সবকিছু ভুলে যাব!’ এমন অভিমান নেই ফরিদ হামিদির। ২২ বছর বয়সী যুবকের সোনালি সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার কষ্ট, ‘খুব খারাপ লাগছে। এই তৃতীয়বারের মতো আমরা ফাইনালে হারলাম। এবারেরটা এ রকম ছিল যে এখন নয় তো কখনোই নয়।’
ইঁদুর মারার কল থেকে বারবিকিউর তৈজস—সবকিছু কমলা রঙে সাজিয়ে নিয়েছিল ডাচরা। বাড়ি-ঘরে করেছিল কমলা রং। উৎসবের সব আয়োজনই ছিল সম্পন্ন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা হলো না। রটারডামে বড় পর্দায় খেলা দেখতে যাওয়া মানুষগুলো পরাজয়ের হতাশা নিয়ে নীরবেই ফিরেছে বাড়ি। রটারডামের ক্রিস বাড়ি ফেরার সময় সঙ্গে নিয়ে গেছেন একটা উপলব্ধিও, ‘খুব খারাপ লাগছে আমার। তবে এটা সত্য, জয় আমাদের প্রাপ্য ছিল না। খুব লজ্জার ব্যাপার এটা।

No comments

Powered by Blogger.