বিদায়বেলায় হতাশ, আবার খুশিও

১৯৯৬ সালে যখন অভিষেক, তখন কি সুন্দরতম কল্পনাতেও ভাবতে পেরেছিলেন ক্যারিয়ারের শেষটা হবে বিশ্বকাপের ফাইনাল ম্যাচ দিয়ে? এই বছরের মে মাসে দক্ষিণ আফ্রিকা যাত্রার প্রস্তুতিপর্বে যখন ঘোষণাটা দিয়েছিলেন ‘এই বিশ্বকাপই আমার শেষ’, তখনো হয়তো এতটা সুন্দর স্বপ্ন তিনি দেখেননি।
তিনি কল্পনা করুন না করুন, অদৃশ্যে বসে সৃষ্টিকর্তা লিখে রেখেছিল সেটাই। পূর্ব ঘোষণামতো ১৪ বছরের বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচটা হল্যান্ড অধিনায়ক জিওভানি ফন ব্রঙ্কহর্স্ট খেললেন পরশু রাতে, জোহানেসবার্গের সকার সিটি স্টেডিয়ামে। স্পেনের বিপক্ষে যে ম্যাচটি ছিল এবারের বিশ্বকাপের ফাইনাল। বিশ্বকাপের ফাইনাল ম্যাচ দিয়ে ক্যারিয়ারে ইতি, ব্রঙ্কহর্স্ট কোথায় হাসবেন সৌভাগ্যবানের হাসি, না ম্যাচ শেষে তাঁর বুকফাটা আর্তনাদ, ‘হায় ঈশ্বর, লিখলেই যখন, শেষটা আরও সুন্দর করে লিখলে না কেন!’
বিদায়ী ম্যাচ শেষে কাঁদলেন ব্রঙ্কহর্স্ট। কাঁদল তাঁর দেশ হল্যান্ড। ব্রঙ্কহর্স্ট আর ডাচদের হূদয় ভেঙে দিয়ে স্বপ্নের ফাইনালে বিজয়ী স্পেন। বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলতে পারার গর্ব আছে, আনন্দ আছে। কিন্তু অন্তিম সময়ের গোলে জীবনের সবচেয়ে সুন্দর স্বপ্নটির মৃত্যু পুড়িয়ে মারছে তাঁকে, ‘শেষের মাত্র চার মিনিট আগে গোল। তার অর্থ আমরা অনেক কাছাকাছি চলে গিয়েছিলাম...।’ শিরোপাবঞ্চিত হওয়ার হতাশা আছে, তবে ফাইনাল খেলতে পারার গর্ব তাতে মুছে যাচ্ছে না, ‘আমি খুশি, আমি এটা (বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলা) অর্জন করেছি। কিন্তু টুর্নামেন্টের শেষটায় আমরা হতাশ। তবে পুরো টুর্নামেন্টে যা করেছি, তাতে আমরা গর্ব করতে পারি।’
ব্রঙ্কহর্স্টের বিশ্বাস, ম্যাচের ফল অন্যরকমও হতে পারত। কিন্তু এর জন্য গোল করতে হতো আগে, ‘আমরা যদি আগে গোল করতে পারতাম, তবে শেষটা অন্যরকমও হতে পারত। স্পেনের বিপক্ষে আপনি কখনোই বেশি সুযোগ পাবেন না। যে দু-একটি সুযোগ আমরা পেয়েছি, তাতে গোল করতে না পারাটা ছিল হতাশার।’
১০৬ ম্যাচের ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচে হারের সঙ্গে কষ্ট আরেকটা, বিদায়ী ম্যাচের পুরোটা খেলতে পারেননি। নির্ধারিত ৯০ মিনিটের পর অতিরিক্ত সময়েও খেলছিলেন। কিন্তু ৯৮ মিনিটে ইনিয়েস্তাকে ট্যাকল করতে গিয়ে হ্যামস্ট্রিংয়ে ব্যথা পাওয়ায় দৌড়াতে পারছিলেন না। ফলে বাধ্য হয়েই মাঠ ছাড়তে হয় তাঁকে।
৩৫ বছর বয়সী এই ডিফেন্ডারের ভবিষ্যৎটাও প্রায় ঠিক। ডাচ ক্লাব ফেইনুর্দের টেকনিক্যাল স্টাফ হিসেবে যোগ দেবেন। প্রস্তাব আছে হল্যান্ডের অনূর্ধ্ব-২১ দলের সহকারী কোচেরও। বিদায়বেলায় তাঁর প্রার্থনা, আগামী ইউরোতে ভালো করবে হল্যান্ড, ‘আমি দল ছেড়ে যাচ্ছি। আমি মনে করি, সামনের ইউরোতে দল ভালো করবে। দুই বছর কঠোর পরিশ্রম করে আমরা অনেক (বিশ্বকাপ শিরোপার) কাছাকাছি এসেছিলাম। এখন আবার ইউরোর জন্য শুরু করতে হবে।’

No comments

Powered by Blogger.