মর্টার ও বোমা হামলার মধ্যে ভোট হলো ইরাকে

বিদ্রোহী গোষ্ঠীর মর্টার আর বোমা হামলার মধ্যেই গতকাল রোববার ইরাকে পার্লামেন্ট নির্বাচনে ভোট গ্রহণ হয়েছে। সকাল সাতটায় ভোট গ্রহণ শুরু হয়ে বিকেল পাঁচটায় শেষ হয়। ভোট গ্রহণের সময় মর্টার ও বোমার বিস্ফোরণে ২৪ জন নিহত হয়েছে। ইরাকে মার্কিন নেতৃত্বাধীন বাহিনীর অভিযানের পর এটি দ্বিতীয় পার্লামেন্ট নির্বাচন।
স্থানীয় সাংবাদিকেরা জানান, সকাল থেকেই কেন্দ্রগুলোর সামনে ভোটাররা সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে যান। রাজধানী বাগদাদে যথেষ্ট ভোটারের উপস্থিতি লক্ষ করা গেছে। তবে ভোট গ্রহণ শুরু হওয়ার পর বাগদাদে ১০টি মর্টার ও চারটি বোমা হামলা চালানো হয়। উত্তর বাগদাদে একটি রকেট হামলায় ১২ জনের মৃত্যু হয়। আহত হয় ১০ জন। আরেকটি ভবনে বোমা হামলায় আরও চারজন নিহত হয়েছে। বাগদাদে আরও একটি মর্টার ও বোমা হামলায় মারা গেছে আটজন। এতে আহত হয় ৪০ জন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, চারটি মর্টার সুরক্ষিত ‘গ্রিন জোনে’ আঘাত হেনেছে। ওই এলাকায় বিভিন্ন দেশের দূতাবাস ও সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দপ্তর অবস্থিত।
এ ছাড়া ফাল্লুজা, বাকুবা, সামারাসহ বেশ কয়েকটি শহরে মর্টার ও বোমা হামলা চালানো হয়। বেশির ভাগ হামলা হয়েছে ভোট কেন্দ্রগুলোর কাছে। নিরাপত্তা কর্মকর্তারা জানান, বাকুবার একটি কেন্দ্রে পাঁচটি রকেট বিস্ফোরিত হয়। এসব হামলায় আরও ৩০ জন আহত হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। পার্লামেন্ট নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ইরাকজুড়ে ব্যাপক নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া সত্ত্বেও এসব হামলা চালানো হয়। শুধু বাগদাদেই দুই লাখ পুলিশ ও সেনা মোতায়েন করা হয়েছে।
বাগদাদের কেন্দ্রস্থলে ওমর আল মোখতার ভোট কেন্দ্রের প্রথম ভোট প্রদানকারী ৫৭ বছর বয়সী আবু আদেল জানান, ‘গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করা কর্তব্য। প্রত্যেক ইরাকিরই উচিত ভোট দেওয়া।’ সুন্নি অধ্যুসিত ফাল্লুজার একটি ভোট কেন্দ্রে ভোট প্রদান শেষে খালেদ আবদুল্লাহ নামের একজন ভোটার বলেন, ‘আমার আজকের ভোটটি আল-কায়েদার বিরুদ্ধে একটি প্রতিরোধ।’ সুন্নিরা ২০০৫ সালের পার্লামেন্ট নির্বাচনটি বয়কট করলেও এবার ব্যাপক হারে ভোট দিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী মালিকি সকালে বাগদাদের গ্রিন জোনে একটি ভোট কেন্দ্রে ভোট দেন। তিনি জানান, ভোটারদের ভয় দেখাতে এসব হামলা চালানো হয়েছে। কিন্তু ইরাকিরা চ্যালেঞ্জ নিতে ভয় পায় না। এই মর্টার ও বোমা তাদের মনোবল নষ্ট করতে পারবে না।
ইরাকের কুর্দিরাও এবারের নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। তবে তাদের উপস্থিতি ততটা সরব ছিল না। নির্বাচনে কুর্দি অধ্যুষিত অঞ্চলে বেশির ভাগ আসনে জয় লাভের সম্ভাবনা রয়েছে প্যাট্রিয়টিক ইউনিয়ন অব কুর্দিস্তান (পিইউকে) ও কুর্দিস্তান ডেমোক্রেটিক পার্টির (কেডিপি)। এ ছাড়া গোরান দলের কর্মীরা জানিয়েছেন, তাঁরা ২৩ শতাংশের বেশি ভোট পাওয়ার আশা করছেন। কুর্দি অধ্যুষিত সুলাইমানিয়াহ শহরের ভোটার সাদান ওমর মোহাম্মদ জানালেন, তিনি পিইউকের পক্ষে ভোট দিয়েছেন। এদিকে তেহরানে এক সংবাদ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী শিয়া নেতা মুক্তাদা আল সদর দেশকে বিদেশি সেনাদের দখলদারি থেকে মুক্ত করার জন্য ইরাকিদের ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
ইরাকের নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, এবারের পার্লামেন্ট নির্বাচনে ৩২৫টি আসনের বিপরীতে ছয় হাজার ২০০ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ভোটার সংখ্যা প্রায় এক কোটি ৯০ লাখ। এককভাবে সরকার গঠনের জন্য কোনো একটি দলকে কমপক্ষে ১৬৩টি আসন পেতে হবে। আগামী ১৮ মার্চ নির্বাচনের পূর্ণাঙ্গ ফলাফল ঘোষণা করা হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্র আশা করছে এ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ইরাকের গণতন্ত্র জোরদার হবে এবং এ অঞ্চলে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ক্ষেত্রে ইরাক হবে আলোর দিশারী। এ ছাড়া গণতন্ত্র শক্তিশালী হলে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারও নির্বিঘ্নে করা সম্ভব হবে বলে মনে করছে যুক্তরাষ্ট্র।

No comments

Powered by Blogger.