ঢাকার শেয়ারবাজারে বড় ধরনের দরপতন

টানা তিন দিন ছুটির পর লেনদেন শুরুর প্রথম দিনই দেশের শেয়ারবাজারে বড় ধরনের দরপতন ঘটেছে। কমেছে লেনদেনের পরিমাণও।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) গতকাল সোমবার সাধারণ মূল্যসূচক আগের দিনের চেয়ে প্রায় ১৩৮ পয়েন্ট কমে পাঁচ হাজার ৬২২ পয়েন্টে নেমে এসেছে, যা গত পাঁচ বছরের মধ্যে এক দিনে সবচেয়ে বড় পতন। এর আগে ২০০৫ সালের ১১ জানুয়ারি ডিএসইর সাধারণ মূল্যসূচক ১৩৩ পয়েন্টের মতো কমেছিল।
আর চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক ৩৮৫ পয়েন্ট কমে ১৬ হাজার ৩১৪ পয়েন্টে নেমেছে।
বাজার বিশ্লেষকেরা বলছেন, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত সবচেয়ে বেশি পরিশোধিত মূলধনের কোম্পানি গ্রামীণফোনকে স্পট মার্কেট বা নগদ লেনদেনের বাজারে নিয়ে যাওয়ার আদেশ কার্যকর হওয়ার প্রভাবই দরপতনের বড় কারণ।
গ্রামীণফোনের শেয়ারের ‘অস্বাভাবিক’ মূল্য বৃদ্ধি ঠেকাতে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি) গত বৃহস্পতিবার কোম্পানিটিকে স্পট মার্কেটে লেনদেনের নির্দেশ দেয়, যা গতকাল থেকে কার্যকর হয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, স্পট মার্কেটে লেনদেনের জন্য নগদ টাকা প্রয়োজন হওয়ায় সাম্প্রতিক সময়ের তুলনায় গতকাল গ্রামীণফোনের শেয়ারের চাহিদা কম ছিল।
গতকাল গ্রামীণফোনের শেয়ারের দাম আগের দিনের সমাপনী মূল্যের চেয়ে ২৮ টাকা ৬০ পয়সা কমে ৩৩২ টাকা ৬০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে। আর এতেই ডিএসইর সাধারণ মূল্যসূচক কমেছে ১০৮ পয়েন্টের বেশি। একপর্যায়ে অবশ্য শেয়ারটি ৫১ টাকা কমে গিয়েছিল।
এ ছাড়া ব্যাংক খাতের বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দর কমার প্রভাবেও সূচকের পতন আরও ত্বরান্বিত হয়েছে।
এ ব্যাপারে বিশ্লেষকেরা বলেন, এরই মধ্যে বেশ কিছু ব্যাংক লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। অনেক ক্ষেত্রেই এসব ঘোষণা বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশা অনুযায়ী হয়নি। এ কারণে অনেক বিনিয়োগকারীই ব্যাংকিং খাতের শেয়ার বিক্রি করেছেন। এটা এ খাতের দরপতনের একটা কারণ হতে পারে। তবে তাঁরা মনে করেন, বাজারে অন্য যেকোনো খাতের তুলনায় ব্যাংক খাতের শেয়ারের আয় অনুপাতে দাম (পিই) এখনো অনেক কম। ইতিমধ্যে যেসব ব্যাংক চূড়ান্ত আয় ঘোষণা করেছে, সেগুলো হিসাবে নিলে পিই আরও কম হবে। সে হিসেবে বিনিয়োগের জন্য এ খাতটি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহের তালিকায় থাকার কথা।
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত আরেক বহুজাতিক কোম্পানি ম্যারিকো বাংলাদেশের শেয়ারও গতকাল স্পট মার্কেটে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এদিনই আবার কোম্পানিটি তালিকাভুক্তির পর প্রথমবারের মতো লভ্যাংশ দেওয়ায় ‘এন’ শ্রেণী থেকে উন্নীত হয়েছে ‘এ’ শ্রেণীতে। আর কোনো কোম্পানির শ্রেণী পরিবর্তন হলে এসইসির নির্দেশ অনুযায়ী ৩০ কর্মদিবস পর্যন্ত ঋণসুবিধা পাওয়া যায় না।
একই দিন দুটি প্রতিবন্ধকতা তৈরি হওয়ায় এ কোম্পানিটির শেয়ার আগের দিনের চেয়ে ৩৩ টাকা কমে ৪২১ টাকা ৮০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে। দরপতনের হার ছিল সাত শতাংশের বেশি।
বাজার পরিসংখ্যান: ডিএসইতে গতকাল এক হাজার ৯৯ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে, যা আগের কার্যদিবসের চেয়ে ২০৭ কোটি টাকা কম। সিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৯৫ কোটি টাকার মতো।
ডিএসইতে গতকাল ২৩৭টি কোম্পানির শেয়ারের লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দাম বেড়েছে ৬৬টির, কমেছে ১৬৯টির ও অপরিবর্তিত রয়েছে দুটি কোম্পানির শেয়ারের দর। সিএসইতে লেনদেন হয়েছে ১৫৮টি কোম্পানির। এর মধ্যে দাম বেড়েছে ৪০টির, কমেছে ১১৬টির ও অপরিবর্তিত ছিল দুটি কোম্পানির শেয়ার।

No comments

Powered by Blogger.