হারিয়ে যাচ্ছে কাশ্মীরের হাউসবোট

স্বচ্ছ পানিতে ভাসমান ঘর। শ্বেতশুভ্র বরফে ঢাকা কাশ্মীরে ভাসতে ভাসতে এমন ‘নৌকার’ ঘরেই কেটে যায় প্রেমিক-প্রেমিকা কিংবা কোনো নবদম্পতির মধুর মুহূর্তগুলো। ভারতশাসিত কাশ্মীরের হাউসবোটগুলো একরকম স্বপ্নের মতোই সুন্দর মনে হতো। কাশ্মীরে পর্যটকদের কাছে এখনো হাউসবোটগুলো সবচেয়ে বড় আকর্ষণের বিষয়। সেগুলোয় থাকার সময়টাও তারা আগেই ঠিক করে রাখে। কিন্তু হাউসবোট শিল্প সেই পুরোনো ঐতিহ্য আর আকর্ষণ হারিয়ে ফেলছে।
সেই ব্রিটিশ আমল থেকেই পর্যটকদের আনন্দ দিচ্ছিল কাশ্মীরের ডাল লেকের (হ্রদ) হাউসবোট। তবে ২০ বছর ধরে কাশ্মীরে চলা সহিংসতায় হাউসবোট শিল্প এখন হুমকির মুখে। সহিংসতার কারণে কাশ্মীরে পর্যটকের সংখ্যা কমছে। ফলে হাউসবোট শিল্প অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই শিল্পের প্রয়োজনীয় সংস্কার আর উন্নয়নও সম্ভব হচ্ছে না।
তবে আশার কথা, কাশ্মীরের নতুন সরকার হাউসবোট সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে। ‘বোট’ শিল্পের উদ্যোক্তাদের সহজ শর্তে ঋণ দেওয়ার কথা ভাবছে সরকার। হাউসবোটের পয়োনিষ্কাশনের বন্দোবস্ত করার জন্যও পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু যে ডাল লেকের অন্যতম শোভা ছিল হাউসবোট, পরিবেশদূষণের ফলে সেই ডাল লেকের অবস্থাও শোচনীয়। পরিবেশদূষণের কারণে ভূস্বর্গ হিসেবে খ্যাত ও মধুচন্দ্রিমার অন্যতম স্থান হিসেবে বিবেচিত সেই বরফে ঢাকা কাশ্মীরকে এখন আর চেনাই যায় না। কাশ্মীরের বেশির ভাগ এলাকাই এখন দুর্গন্ধ আর আবর্জনায় ভরা থাকে। সময়মতো পানি নিষ্কাশনের অভাবে ডাল লেক এখন আবর্জনায় ভরে গেছে। পলিব্যাগে করে মৃত পশুপাখি ফেলে রাখা হয় এখানে-সেখানে।
হাউসবোট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান কর্মকর্তা মঞ্জুর ওয়াগনু ডাল লেককে দূষণমুক্ত করতে চান। তাঁর মতে, হাউসবোট ছাড়া ডাল লেকের সৌন্দর্য যেমন অসম্পূর্ণ, তেমনি এই হ্রদবিহীন হাউসবোটের সৌন্দর্যও অর্থহীন। তাই ভূস্বর্গ কাশ্মীরের প্রধান দুই আকর্ষণকেই বাঁচিয়ে রাখতে চান মঞ্জুর।
তবে দূষণে যে ডাল লেক ছোট হয়ে আসছে, তা স্বীকার করেননি লেকস অ্যান্ড ওয়াটারওয়েস ডেভেলপমেন্ট অথোরিটির প্রধান ইরফান ইয়াসিন। তিনি আশ্বাস দেন, আর কয়েক মাসের মধ্যেই হ্রদটিতে সব ধরনের সংস্কার করা হবে। লেকে বর্জ্য না ফেলার জন্যও তিনি মানুষকে সচেতন করার চেষ্টা করছেন। তবে হাউসবোট শিল্প রক্ষায় অনেক দেরিতে পদক্ষেপ নিয়েছে কাশ্মীর সরকার। তবে এখন বেশির ভাগ হাউসবোটেরই জীর্ণ দশা। ৩০টিরও বেশি হাউসবোটের মালিক এখন তাঁদের লাইসেন্স বাতিল করতে চান। দারিদ্র্য ও অর্থাভাবের কারণেই তারা বোটগুলো বিক্রি করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন বলে জানা গেছে। তাই অবিলম্বে পদক্ষেপ না নিলে একসময় হয়তো পুরোপুরি হারিয়ে যাবে কাশ্মীরের হাউসবোট শিল্প।

No comments

Powered by Blogger.