রুপাই বড় চ্যালেঞ্জ কাবাডি দলের

ভারত বরাবরের মতো সোনা জিতবে। এবারের দক্ষিণ এশীয় গেমস কাবাডিতেও বাংলাদেশের লড়াইটা তাই রুপার।
পাকিস্তান থাকায় রুপাটাও বাংলাদেশের জন্য চ্যালেঞ্জ। দক্ষিণ এশীয় গেমস তো বটেই, এশিয়ান গেমসে বাংলাদেশ যতবার রুপা জিতছে প্রতিবারই পাকিস্তান ছিল শেষ বাধা। সাম্প্রতিক সময়ে বাধাটা টপকানো যাচ্ছে না। শেষ দুটি দক্ষিণ এশীয় গেমসে তো পাকিস্তানের কাছে হেরেই ব্রোঞ্জ পেতে হয়েছে।
এবার দেশের মাটিতে গেমস। পাকিস্তানকে হারাতে পারবে বাংলাদেশ? কাবাডি দলের কোচ আবদুল জলিল বলছেন, ‘পাকিস্তান আগের পাকিস্তান নেই। শক্তি-সামর্থ্যে অনেক এগিয়েছে। কিন্তু আমরা এখনো ওদের হারানোর ক্ষমতা রাখি। গতবার কলম্বোতে ওরা জোচ্চুরি করে আমাদের হারিয়েছে এক পয়েন্টে। আরও অনেক ম্যাচেই জোর করে জিতেছে। এবার আশা করি পারবে না।’
বাংলাদেশ সোনার স্বপ্ন দেখে না? ‘ভারতকে হারিয়ে সোনা জেতার স্বপ্ন দেখা বাড়াবাড়ি। আমরা কখনো ভারতকে হারাতে পারিনি’—বলেছেন জাতীয় দলের সাবেক এই অধিনায়ক।
এসএ গেমসে ৫ দলের পুরুষ কাবাডিতে এবারও ফেবারিট ভারত। বাকি চার দল—বাংলাদেশ, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও নেপাল। খেলা হবে রবিন লিগ পদ্ধতিতে। প্রতি দল একে অন্যের সঙ্গে একবার খেলার পর সর্বোচ্চ পয়েন্ট পাওয়া দুটি দল লড়বে সোনার জন্য। বাংলাদেশকে ফাইনালে খেলতে হলে অবশ্যই হারাতে হবে পাকিস্তানকে।
সেই লক্ষ্যে এবার বাংলাদেশ দলের প্রস্তুতি তুলনামূলক ভালো হয়েছে। বিকেএসপির দিনাজপুর শাখায় ৯-১০ মাস অনুশীলন শেষে বাংলাদেশ দল মাসখানেক আগে ঢাকায় ফিরেছে। যদিও অনুশীলনের জন্য পুরো ম্যাট পাওয়া যায়নি। একমাত্র ম্যাটকে ভাগ করে দিনাজপুরে নিয়ে যাওয়া হয় অর্ধেক, বাকি অর্ধেকে ঢাকায় মহিলা দল অনুশীলন করেছে। তারপরও লম্বা সময়ের এই প্রস্তুতিতে বড় প্রাপ্তি, কিছু নতুন খেলোয়াড়ের উঠে আসা। খেলোয়াড়দের সুযোগ-সুবিধাও আগের চেয়ে ভালো ছিল ক্যাম্পে।
কিন্তু বড় ঘাটতি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলতে না পারা। নিজেদের পরখ করতে দেশের বাইরে কোথাও পাঠানো হলো না দল, যেটা খুবই দরকার ছিল। বড় দুঃসংবাদও আছে একটা—ইনজুরি থেকে সেরে উঠলেও পুরোপুরি ফিট নন বিশ্বসেরা রেইডার জিয়াউর রহমান। জিয়া না থাকা মানে দলের অর্ধেক শক্তিই খর্ব। জিয়াবিহীন দল কতটা কী করতে পারবে, সেই সংশয় প্রকাশ করছেন অনেকেই। ইনজুরি আছে আরও দুই-একজনের। তবে জিয়া সাহস জোগাচ্ছেন দলকে, ‘আমি থাকলে ভালো হতো। কিছু করার নেই। আশা করি দল ভালো করবে।’
সেই ‘ভালো’টা হলো ফাইনালে খেলা। দলের অন্যতম খেলোয়াড় মামুন শিকদার বললেন, ‘জিয়া নেই, এটা বড় ঘাটতি। তবে সর্বশক্তি দিয়ে আমাদের লক্ষ্য ফাইনালে খেলা।’ এনামুল হকের কণ্ঠেও একই প্রতিজ্ঞা, ‘প্রস্তুতি ম্যাচ খেলা হলো না। তারপরও ফাইনালে খেলতে চাইব আমরা।’ ‘ফাইনালে উঠলে অঘটন ঘটিয়ে ফেলা অসম্ভব কিছু নয়’—আবু সালেহ্ মুসার মনোবল আরও তুঙ্গে।
খেলোয়াড়দের চেষ্টা তো আছেই, এর সঙ্গে চাই কর্মকর্তাদের আন্তরিকতা। কখনো কখনো সেটা না থাকায় খারাপ করেছে বাংলাদেশ দল। প্রস্তুতির অভাবসহ নানা কারণে ’৮৯ ও ’৯৩ সাফে ছিল ব্রোঞ্জের সান্ত্বনা। ’৯৮ আর ২০০৬ এশিয়াডেও তাই। ১৯৯৯ সাফে তো পদকই আসেনি (’৯১ সাফে কাবাডি ছিল না)! আবার এই বাংলাদেশই ১৯৯০, ১৯৯৪, ২০০২ এশিয়াডে জিতেছে রুপা। ১৯৮৫, ’৮৭, ’৯৫ সাফে ছিল রুপা। এখন অবস্থা এমন যে রুপা জয়ই কঠিন!
মহিলা কাবাডিতেও বাংলাদেশের লড়াইটা রুপার। গত এসএ গেমসে অভিষেক হয় মহিলা কাবাডির। শ্রীলঙ্কার কাছে হেরে বাংলাদেশ ব্রোঞ্জ জিতেছে। ভারত চ্যাম্পিয়ন, নেপাল চতুর্থ। এবারও এই চার দলই খেলছে এবং রুপার লড়াইয়ে শ্রীলঙ্কাই বাংলাদেশের প্রতিদ্বন্দ্বী।
শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে রুপা জেতা সম্ভব? দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ও সাবেক অধিনায়ক মালেকা পারভীনের বিশ্বাস, ‘এটা অসম্ভব নয়। আমরা রুপার জন্যই খেলব।’ তবে শর্ত দিয়েছেন তিনি, ‘দল নির্বাচন ভালো হতে হবে।’
কাবাডি ফেডারেশনের ক্ষমতার কুরসি বদল হয়েছে সম্প্রতি, তাতে অনেক কিছু বদলে যাওয়াতেই সঠিক দল নির্বাচনের শর্তটা আসছে। এই দলের কোচ বদল হয়েছে, খেলোয়াড়ও যে বদল হতে চলেছে!

No comments

Powered by Blogger.