পিতার কবর সিলেটে আনতে চান হারিছ তনয়া সামিরা চৌধুরী by ওয়েছ খছরু

প্রয়াত পিতা হারিছ চৌধুরীর কবর সিলেটে স্থানান্তর করতে চান কন্যা ব্যারিস্টার সামিরা তানজিন চৌধুরী। এ লড়াই তার এখনকার নয়। এটি তিনি ২০২১ সালের ৩রা সেপ্টেম্বর পিতার মৃত্যুর সময়  করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পারেননি। সে আক্ষেপে এখনো পুড়ছেন সামিরা চৌধুরী। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর আর দেরি করেননি সামিরা চৌধুরী। সামনে পিতার তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী। এ মৃত্যুবার্ষিকীকে সামনে রেখে তিনি ১৮ই আগস্ট বাংলাদেশে এসেছেন। এখন আর শেখ হাসিনার সরকার নেই। কঠিন মুহূর্তও নেই। পিতা বেঁচে থাকলে হয়তো অন্যরকম অনুভূতি হতো। সেই অনুভূতি এখন কঠিন বাস্তবতা। এজন্য নিজের উদ্যোগে সিলেটের হযরত শাহজালাল (রহ.) দরগাহে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেন। এতে উপস্থিতি ছিলেন সিলেট ও কানাইঘাট বিএনপি’র নেতাকর্মীরা। সামিরা চৌধুরী নিজেও উপস্থিত ছিলেন। দোয়ায় অংশ নিয়েছেন, শিরনি বিতরণ করেছেন, কিছুটা মানসিক শান্তিও পেয়েছেন মনে। কিন্তু এখনো পিতা আবুল হারিছ চৌধুরীর শেষইচ্ছা পূর্ণ হয়নি। এটির জন্য তার সামনে অনেক কাজ। সেই কাজে হাত দিচ্ছেন তিনি। আবুল হারিছ চৌধুরী সিলেটের সন্তান। একজন মুক্তিযোদ্ধা। রাজনীতিবিদও। সিলেটের জন্য নিবেদিতপ্রাণ ছিলেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব ছিলেন। সিলেটের মানুষের জন্য কাজ করেছেন। ২০০৭ সালে যখন দেশে জরুরি অবস্থা জারি হয়েছিল তখন থেকেই তিনি আত্মগোপনে। দীর্ঘ ১৫ বছর ছদ্মবেশে রাজধানী ঢাকার পান্থপথেই কাটিয়েছেন। অসুখ-বিসুখে আক্রান্ত হয়েছেন বার বার। একমাত্র পরিবারই জানতো তার আত্মগোপনের খবর। শেষবার ২০২১ সালের আগস্টে যখন তিনি গুরুতর অসুস্থ হন ছদ্মবেশেই তাকে ভর্তি করা হয় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২০২১ সালে ৩রা সেপ্টেম্বর তিনি মারা যান। এ সময় সঙ্গে ছিলেন ব্যারিস্টার মেয়ে সামিরা তানজিন চৌধুরী। মৃত্যুর পর চেয়েছিলেন পিতার শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী সিলেটের মাটিতে লাশ দাফন করতে। পরিস্থিতি অনুকূলে ছিল না। স্বজনরাও পাশ থেকে সরে যান। অনেকটা অসহায় হয়ে ঢাকার সাভারের একটি মাদ্রাসায় গোপনেই দাফন করা হয় হারিছ চৌধুরীর মরদেহ। হারিছ চৌধুরীর আত্মগোপন, মৃত্যু ও দাফনের খবর মানবজমিন অনুসন্ধান করে প্রকাশ করেছিল। পিতার মৃত্যুবার্ষিকী পালন করতে সিলেটে আসা মেয়ে সামিরা চৌধুরীর সঙ্গে সিলেট সার্কিট হাউসে কথা হয় মানবজমিনের এ প্রতিবেদকের। ক্ষোভ ঝাড়েন সামিরা। বললেন, আর মাত্র দু’টা বছর সময় পেলে বাবাকে হয়তো এভাবে মৃত্যুবরণ করতে হতো না। তখন সময় ভিন্ন ছিল। কিছুই করতে পারিনি। বলেন, আমার বাবা মারা গেলেন, তখন স্বেরাচারী সরকারের গোয়েন্দারা নাটক মঞ্চস্থ করেছে। তার মৃত্যুকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করেছে। আমাদের আত্মীয়স্বজনকে দিয়ে বিভিন্ন রকম অপপ্রচার চালানো হয়েছে। একজন মানুষকে বেঁচে থাকতে তার চরিত্র হনন। মিথ্যা মামলায় জর্জরিত করা সবই করা হয়েছে। তার জীবনের বড় একটা সময় অত্যাচার ও নিপীড়নের মধ্যদিয়ে থাকতে হয়েছে। তার পরিবার বঞ্চিত ছিল। সব ধরনের মানবিক অধিকার থেকে তাকে বঞ্চিত করা হয়েছিল। সামিরা জানান, আমার পিতার শেষ ইচ্ছে ছিল সিলেটে যেনো তার দাফন হয়। আমি এখন এটিই চাই। এজন্য প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। আশা করছি সফল হবো এবং অনুমতি পেলে সিলেটে এনে দাফন করা হবে। সিলেটে কোথায় দাফন করা হবে- এ প্রশ্নের জবাবে সামিরা জানান, এখনো জানি না। কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে কানাইঘাটে বাড়ি কিংবা অন্য কোথাও হতে পারে। সেটি নির্ভর করবে সিদ্ধান্তের ওপর। জানান, বিগত শেখ হাসিনার সরকার ব্যক্তিগতভাবে আব্বুর প্রতি প্রচণ্ড হিংসাপরায়ণ ছিল। আওয়ামী লীগের দুর্নীতিগুলো আব্বু প্রচার করেছিলেন। এ কারণে তার প্রতি এত হিংসাপরায়ণ হয়ে উঠেছিল। অথচ তিনি ছিলেন একজন মেধাবী রাজনীতিবিদ। কখনো কারও প্রতি তিনি অবিচার করেননি। তার বিনয়, আচরণ ভালো ছিল। সামিরা বলেন, আমার পিতার জীবদ্দশায় ইন্টারপোল থেকে নাম সরানোর জন্য আবেদন করেছি। রাজনৈতিক কারণে তার নাম ইন্টারপোলে দেয়া হয়েছিল। তার বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার খুবই দুঃখজনক, খুবই নিকৃষ্ট। আমার বাবার মৃত্যুর পর মায়ের এনআইডি করতে আবেদন করেছিলাম। কিন্তু বাবা যে মারা গেছেন তার প্রমাণ ইউনিয়ন চেয়ারম্যান পর্যন্ত চেয়েছিল। সামিরা জানান, একজন সন্তান হিসেবে বলছি; আমার বাবা মারা গেছেন। আজকে দেশ স্বাধীন হয়েছে। সবাই আনন্দ করছে। কিন্তু আমরা আনন্দ করছি না। যদি বাবা আর দুইটা বছর বেঁচে থাকতেন তাহলে দেশের স্বাধীনতা দেখে যেতে পারতেন। নিজের ইচ্ছের প্রসঙ্গ তুলে ধরে সামিরা জানান, আমার নিজের কোনো রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ নেই। আমি চাই, আমার বাবার মানসম্মান আবার পুনর্বহাল হবে। মানুষ জানবে কী রাজনীতি তিনি করে গিয়েছেন সেটি পুনঃপ্রতিষ্ঠা হবে। মানুষ জানবে তিনি আসলে কী ছিলেন। সেসব বিষয় এখন মানুষকে জানানোই আমার কাজ।

No comments

Powered by Blogger.