আইসিসি’র পরোয়ানা উপেক্ষা করে মঙ্গোলিয়ায় পুতিন

ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্টের (আইসিসি) গ্রেপ্তারি পরোয়ানা উপেক্ষা করেছে মঙ্গোলিয়া। তারা রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে নির্বিঘ্নে উলানবাটোর ভ্রমণের নিশ্চয়তা দিয়েছে। ফলে আইসিসি’র গ্রেপ্তারি পরোয়ানাকে তোয়াক্কা করেননি পুতিন। তিনি সরকারি সফরে পৌঁছে গেছেন মঙ্গোলিয়ায়। এ খবর দিয়েছে অনলাইন আল জাজিরা। এতে বলা হয়, মঙ্গলবার  সেখানে পৌঁছালে পুতিনকে গার্ড অব অনার দেয়া হয়। কিন্তু মঙ্গোলিয়া আইসিসি’র সদস্য দেশ। ইউক্রেনের শিশুদেরকে জোর করে রাশিয়ায় নিয়ে যাওয়া সহ বিভিন্ন রকম যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে গত বছর পুতিনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আইসিসি। এর ফলে সদস্য দেশগুলো আইসিসি’র ওই রায় মানতে বাধ্য। তা উপেক্ষা করে পুতিনকে উষ্ণ অভিনন্দন জানানো হয়েছে।

পাঁচ বছরের মধ্যে এটাই প্রতিবেশী কোনো দেশে পুতিনের সফর। এদিন রাজধানী উলানবাটোরে চেঙ্গিস খান স্কোয়ারকে মঙ্গোলিয়া ও রাশিয়ার বিশাল পতাকা দিয়ে সাজানো হয়। আগেরদিন মঙ্গোলিয়ায় রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের সফরের প্রতিবাদে ছোটখাটো বিক্ষোভ হয়েছে। তাদের হাতে ছিল ব্যানার। তাতে লেখা- যুদ্ধাপরাধী পুতিনকে এখান থেকে বের করে দাও। ওদিকে পুতিনকে গ্রেপ্তার করে হেগে অবস্থিত আইসিসি’র কাছে হস্তান্তরের আহ্বান জানায় ইউক্রেন। অভিযোগ আছে, ইউক্রেনের শিশুদেরকে জোর করে পুতিন বেআইনিভাবে তার দেশে নিয়ে গিয়েছেন। সেখানে বিভিন্ন পরিবারের কাছে রাখা হয়েছে তাদের। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে আগ্রাসী হামলা চালানোর পর থেকেই এই কাজ করে আসছে মস্কো। এর প্রতিবাদ বা নিন্দা জানানো থেকে বিরত থাকে মঙ্গোলিয়া। এই যুদ্ধ নিয়ে জাতিসংঘে ভোটের সময়ও তারা ভোট দেয়া থেকে বিরত থাকে। সোমবার এক বিবৃতিতে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল মঙ্গোলিয়ার নির্বাহী পরিচালক আলতানতুয়া বাতদোরজ বলেন, ন্যায়বিচার থেকে একজন পলাতক প্রেসিডেন্ট পুতিন। আইসিসিভুক্ত সদস্য দেশগুলোতে সফরের ক্ষেত্রে যদি তাকে গ্রেপ্তার করা না হয়, তাহলে তাতে পুতিনের বর্তমান কর্মকাণ্ড আরও উৎসাহিত হবে। এতে আইসিসি’র কর্মকাণ্ডকে কৌশলগতভাবে হেয় করা হবে। যদি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয় তাহলে দোষী ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারে বাধ্য সদস্য দেশটি। তবে  জোরপূর্বক কোনো মেকানিজম প্রয়োগ করার কিছু নেই। ভ্লাদিমির পুতিনের একজন মুখপাত্র গত সপ্তাহে বলেছেন, সফরের সময় প্রেসিডেন্টকে গ্রেপ্তার নিয়ে তিনি উদ্বিগ্ন নন।
রাশিয়া ও চীনের মধ্যবর্তী অংশে মঙ্গোলিয়ার অবস্থান। তারা জ্বালানি এবং বিদ্যুতের জন্য খুব বেশি নির্ভরশীল রাশিয়ার ওপর। আর দেশের খনিজ শিল্পে বিনিয়োগের জন্য তারা বেশি নির্ভরশীল চীনের ওপর। সোভিয়েত আমলে এটা ছিল মস্কোর অধীনে। ১৯৯১ সালে ভেঙে যায় সোভিয়েত ইউনিয়ন। তারপর থেকেই তারা ক্রেমলিন এবং বেইজিংয়ের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখেছে। জাপানের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে সোভিয়েত এবং মঙ্গোলিয়ান সেনারা ১৯৩৯ সালে যে বিজয় অর্জন করেছিল তার স্মরণ অনুষ্ঠানে মঙ্গলবারই যোগ দেয়ার কথা পুতিন ও খুরেলসুখের। তার আগে মঙ্গোলিয়ার পত্রিকা উন্নুদুর’কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে পুতিন বেশ কিছু অর্থনৈতিক ও শিল্প বিষয়ক প্রকল্পের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এর মধ্যে আছে চীন ও রাশিয়াকে যুক্ত করে ত্রিদেশীয় গ্যাস পাইপলাইনের (ট্রান্স-মঙ্গোলিয়ান গ্যাস পাইপলাইন) নির্মাণকাজ।

No comments

Powered by Blogger.