গ্রামীণ ব্যাংকের নতুন চেয়ারম্যান আব্দুল হান্নান চৌধুরী

নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির স্কুল অব বিজনেস অ্যান্ড ইকোনমিকসের অধ্যাপক আবদুল হান্নান চৌধুরীকে গ্রামীণ ব্যাংকের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। গতকাল অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের এক প্রজ্ঞাপনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, গ্রামীণ ব্যাংক আইন, ২০১৩ এর ধারা অনুযায়ী, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব বিজনেস অ্যান্ড ইকোনমিক্সের অধ্যাপক ড. আবদুল হান্নান চৌধুরীকে গ্রামীণ ব্যাংকের পরিচালনা বোর্ডের পরিচালক ও চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ড. আবদুল হান্নান চৌধুরী তার যোগদানের তারিখ থেকে পরবর্তী তিন বছরের জন্য এই পদে দায়িত্ব পালন করবেন। জনস্বার্থে জারিকৃত এই আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে।

এর আগে গত ২০শে আগস্ট গ্রামীণ ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান একেএম সাইফুল মজিদের নিয়োগ চুক্তি বাতিল করে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। এরপর থেকে ব্যাংকটির চেয়ারম্যানের পদ শূন্য ছিল। সাইফুল মজিদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের (আইবিএ) শিক্ষক। তাকে ২০২০ সালের ১৬ই মার্চ প্রথম এই পদে নিয়োগ দেয় সরকার। প্রথমে দুই বছরের জন্য নিয়োগ দেয়ার পর তাকে দুই বছর করে আরও দুইবার পুনর্নিয়োগ দেয়া হয়। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সর্বশেষ গত এপ্রিলে তাকে পুনর্নিয়োগ দেয়।

গত রোববার সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ফারহানা ফেরদৌসীকে গ্রামীণ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেয় সরকার। একই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক হিসেবে মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিনের নিয়োগ বাতিল করা হয়।
বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের হাত ধরে ১৯৮৩ সালে গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়।

দারিদ্র্যবিমোচনের মাধ্যমে শান্তি প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখায় ২০০৬ সালে গ্রামীণ ব্যাংক ও ড. ইউনূস নোবেল পুরস্কার পান। পরবর্তী সময়ে বয়সসীমা অতিক্রম করে গেছে-এই যুক্তিতে ২০১১ সালে ড. ইউনূসকে গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে অপসারণ করা হয়।

এরপর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার বিভিন্ন মামলা করে। চলতি বছরের ২রা জানুয়ারি শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের করা মামলায় ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ (গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান হিসেবে) চারজনকে ছয় মাস করে কারাদণ্ড দেয়া হয়। একই সঙ্গে সবাইকে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। যদিও মুহাম্মদ ইউনূসকে কারাগারে যেতে হয়নি। এরপর গত ৭ই আগস্ট শ্রম আদালতের দেয়া কারাদণ্ড থেকে খালাস পান ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

গ্রামীণ ব্যাংকের ওয়েবসাইটের তথ্যানুসারে, ব্যাংকের প্রথম চেয়ারম্যান ছিলেন অধ্যাপক ইকবাল মাহমুদ। এরপর যথাক্রমে মো. কায়সার হোসেন, মো. হারুনুর রশিদ, আকবর আলি খান, অধ্যাপক রেহমান সোবহান, মো. তবারক হোসেন, খন্দকার মোজাম্মেল হক এবং এ কে এম সাইফুল মজিদ এই ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এর মধ্যে খন্দকার মোজাম্মেল হক ২০১১ সালের ২৭শে জানুয়ারি থেকে ২০১৯ সালের ৭ই আগস্ট পর্যন্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন।

প্রতিষ্ঠার পর থেকে ড. মুহাম্মদ ইউনূস ২০১১ সালের ১১ই মে পর্যন্ত গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। তাকে সরানোর পর নুরজাহান বেগম, মো. শাহজাহান, এ এস এম মহিউদ্দিন, রতন কুমার নাগ, বাবুল সাহা, আবুল খায়ের মো. মনিরুল হক, জাহাঙ্গীর হোসেন হাওলাদার, মো. আব্দুর রহিম খান এবং মো. মোসলেম উদ্দিন এই ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন নূর মোহাম্মদ।

No comments

Powered by Blogger.