রানা জানান দিলেন আমি আসছি

২০০৯, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দেশের বাইরে প্রথম সিরিজ জয়। এরপর কেটে গেছে এক যুগেরও বেশি সময়। অবশেষে পাকিস্তানের মাটিতে ধরা দিলো সেই সাফল্য। পাকিস্তানকে হারিয়ে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ জিতে নিয়েছে বাংলাদেশ। ঐতিহাসিক এ জয়ে নায়কদের অন্যতম একজন নাহিদ রানা। পাকিস্তানের দ্বিতীয় টেস্টে দ্রুতগতির বল করে নতুন রেকর্ড গড়েছেন এ টাইগার পেসার। প্রতি ঘণ্টায় ১৫২ কিলোমিটার গতিতে বল করেছেন তিনি। যা বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে সর্বোচ্চ। এর আগে ১৫০ এর কোটা ছুঁতে পারেননি কোনো বাংলাদেশি বোলার। সর্বোচ্চ ১৪৯.৫ কিলোমিটার গতিতে বল করার রেকর্ড করেছিলেন রুবেল হোসেন।

শুধু গতিতে থেমে থাকেননি এই পেসার। দ্বিতীয় টেস্টের চতুর্থ দিনে বল হাতে ৪ উইকেট শিকার করেছেন। শান মাসু, বাবর আজম, সউদ শাকিল ও আবরার আহমেদের উইকেট তুলে নিয়ে ম্যাচকে এনে দিয়েছেন হাতের মুঠোয়।
২১ বছর বয়সী পেসারের ক্যারিয়ারে এটি তৃতীয় টেস্ট। চলতি বছরের মার্চে সিলেটে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অভিষেক হয়েছিল তার। শুরুতেই নিজের প্রতিভার জানান দিয়েছিলেন তিনি। গতিতে মুগ্ধ করেছেন সবাইকে। অভিষেক টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৩ উইকেট নেয়ার পর দ্বিতীয় ইনিংসে নিয়েছেন ২ উইকেট। পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম টেস্টটি ছিল তার ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক ম্যাচ। ওই ম্যাচে তিনি নেন ১ উইকেট। দ্বিতীয় টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ৪ উইকেট নেয়ার আগে প্রথম ইনিংসে নিয়েছেন ১ উইকেট। সবমিলিয়ে ৩ ম্যাচের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে তার শিকার ১১ উইকেট। অথচ বছর খানেক আগেও তাকে চিনতো না কেউ। সবশেষ বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগে (বিপিএলে) খুলনা টাইগার্সের জার্সিতে ঘণ্টায় ১৪৯.৭ কিলোমিটার গতিতে সাকিব আল হাসানকে একটি বল করেছিলেন নাহিদ রানা। ওই বোলিং দিয়েই দেশের ক্রিকেটাঙ্গনে নিজেকে জানান দেন এই পেসার। চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে উঠে আসা এ পেসার জানিয়েছিলেন ১৫০ কিলোমিটার গতিতে বল করার ইচ্ছার কথা। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সবচেয়ে গতিময় বোলার শোয়েব আক্তার। ঘণ্টায় ১৬১.৩ কিলোমিটার গতিতে বল করে রেকর্ডটি নিজের করে রেখেছেন পাকিস্তানের এই ‘রাওয়ালপিন্ডি এক্সপ্রেস’। শোয়েব আকতারের শহরে রানা গতির ঝড় তুলে জানান দিলেন আমি আসছি। তবে রানার ছোট্ট ক্যারিয়ারে আফসোস হয়ে রইলো এই টেস্ট। তৃতীয় টেস্টেই ক্যারিয়ারের প্রথম পাঁচ উইকেট শিকারের আনন্দ পেতে পারতেন তিনি। সেটি না হলেও ৪৪ রানে ৪ শিকার ধরে ম্যাচটি যে বাংলাদেশের মুঠোয় এনে দিয়েছেন তার আনন্দই বা কম কীসে। সঙ্গে দেশের টেস্ট ইতিহাসে এবারই প্রথম পেসাররা মিলে কোনো ইনিংসে সবগুলো উইকেট পেলেন। হাসান মাহমুদের ক্যারিয়ারের প্রথম ৫ উইকেট ও নাহিদের ৪ শিকারের পর বাকি উইকেটটি নেন তাসকিন আহমেদ। ইউনিট হিসেবে পেসারদের এমন দাপটের খুব গুরুত্বপূর্ণ অংশ নাহিদ রানা।  ৩ টেস্ট শেষে ১১ উইকেট নিয়ে দৌলত উজ-জামান, জাহাঙ্গীর শাহ বাদশা, গোলাম নওশের প্রিন্স, হাসিবুল হোসেন শান্ত, মাশরাফি বিন মুর্তজাদের উত্তরসূরি হিসেবে নিজের আগমনী বার্তাটিও জানিয়ে রাখলেন চাঁপাই এক্সপ্রেস।

No comments

Powered by Blogger.