কী হচ্ছে, কী হবে? by সাজেদুল হক
৫ই আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনার সরকারের পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে বেশকিছু নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়। দেশে কার্যত কয়েক দিন পুলিশই ছিল না। এ অবস্থায় হামলা, ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। হিন্দু সম্প্রদায়ের ব্যক্তিদের বাড়িতেও কিছু হামলা হয়েছে, যাদের বেশিরভাগ আবার আওয়ামী লীগের নেতা। এই পরিস্থিতিতে নানা গুজব ছড়িয়ে হিন্দু-সম্প্রদায়ের লোকজনকে রাস্তায় নামিয়ে বড় বিক্ষোভের চেষ্টা ছিল একটি মহলের। তবে রাজপথে ছাত্র-জনতার কঠোর অবস্থানের কারণে তা সফল হয়নি। রাষ্ট্রের এমন জটিল পরিস্থিতির মধ্যেই বিভিন্ন সেক্টরে দাবি-দাওয়া পার্টি সক্রিয় হয়ে ওঠে। যদিও এ ব্যাপারে কঠোর অবস্থান নেয়ার জন্য শুরু থেকেই সরকারকে বিভিন্ন মহল থেকে পরামর্শ দেয়া হয়েছিল। আনসার সদস্যরা সচিবালয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরি করে। গত কয়েকদিনে দাবি-দাওয়া পার্টির তৎপরতা কমেছে। তবে তা এখনো পুরো মেটেনি। এসবের মধ্যেই ফেনী-কুমিল্লা অঞ্চলে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা হানা দেয়। এ পরিস্থিতিতে সরকার, সশস্ত্র বাহিনী, শিক্ষার্থী-জনতা বন্যা উপদ্রুত এলাকার মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে।
সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ ব্যাংক বেশকিছু শক্ত পদক্ষেপ নিয়েছে। বিশেষত ব্যাকিং খাত এস আলম মুক্ত করতে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। গুমের ঘটনা তদন্তে গঠন করা হয়েছে কমিশন। বেশকিছু ক্ষেত্রে অবশ্য এখনো কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। নির্বাচন কমিশন বহাল তবিয়তে রয়েছে। ভোট চুরির কারিগর প্রধান নির্বাচন কমিশনার জাতিকে সংবিধান শেখাচ্ছেন। দুর্নীতি দমন কমিশনে এখনো পুরনো মুখ। প্রশাসনে, অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে এখনো গুরুত্বপূর্ণ পদে সাবেক সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা বসে আছেন। সরকারের একটি সূত্র অবশ্য বলছে, পনেরো বছরে যেভাবে দলীয়করণ করা হয়েছে তা থেকে বের হতে সময় লাগবে। তবে সরকার সম্ভবত সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে আছে পুলিশ নিয়ে। কারণ পুলিশ পুরো সক্রিয় না হলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা কঠিন। ঢাকার একজন বিশ্লেষক বলেন, ‘সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দেয়া প্রয়োজন। প্রয়োজনে অ্যাকশন নেয়া। কারণ জনগণের মধ্যে নিরাপত্তাবোধ তৈরি না হলে অন্য সব প্রচেষ্টাই ব্যর্থ হয়ে যাবে।’ মামলাগুলো কেন্দ্র করেও এক ধরনের বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধনের পরামর্শ এসেছে। সংশোধিত আইনে মানবতাবিরোধী অপরাধের স্বচ্ছ বিচার সম্ভব বলে আইনবিদরা মনে করেন।
সরকার যখন একের পর এক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে তখন রাজনীতির পর্দার আড়ালেও চাপান উতোর তৈরি হয়েছে। বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীদের মধ্যে এক ধরনের বাহাস চলছে। জোটে না থাকলেও দল দু’টির মধ্যে দীর্ঘদিন সহমর্মিতা ছিল। নতুন সরকার গঠনের পর বেশ কিছু ইস্যুতে বিএনপি ও জামায়াতের নেতাদের মধ্যে মতভেদের খবর পাওয়া যায়। দল দু’টির সম্পর্ক শেষ পর্যন্ত কেমন হয় সেদিকে গভীর দৃষ্টি রাখছেন রাজনীতির পর্যবেক্ষকরা। বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের কিছু কিছু নেতার বিরুদ্ধে দখলদারিত্ব ও চাঁদাবাজির অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে বিএনপি’র শীর্ষ নেতৃত্ব এসব ব্যাপারে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। যদিও আগামী নির্বাচন ঘিরে দলটির শীর্ষ নেতৃত্বের কৌশল কী হবে তা নিয়ে বিপুল কৌতুহল তৈরি হয়েছে। অনেক বিশ্লেষক বলছেন, দিন যত গড়াবে রাজনীতির হিসাব তত কঠিন ও জটিল হবে। বিএনপি’র নেতৃত্ব নিয়ে পশ্চিমা দুনিয়ার কিছু দেশসহ কিছু কিছু মহলের ভিন্ন অবস্থানের গুঞ্জন তৈরি হয়েছে। সেসব মহল শেষ পর্যন্ত কী অবস্থান নেয় অথবা বিএনপি নেতৃত্ব বিষয়টি কীভাবে মোকাবিলা করে আগামী দিনে সে ব্যাপারে দৃষ্টি থাকবে সবার। এসবের মধ্যে ছাত্র নেতৃত্ব নতুন কোনো দল তৈরি করে কি-না সেটিও এক বড় প্রশ্ন। যদিও বাংলাদেশে নতুন দলের সাফল্যের রেকর্ড কম। কিন্তু এবারের নেতৃত্ব ইতিমধ্যে সবাইকে বিস্মিত করেছে। নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের কথা তারা খোলাখুলিই বলছেন। ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম নেতা, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আব্দুল্লাহ গতকালও যেমন লিখেছেন, ‘এখন সময় জনগণকে সঙ্গে নিয়ে মাস্টারপ্ল্যান করার! জনগণই আমাদের মাস্টারপ্ল্যানার!’ বাংলাদেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ভারতের নীতির কোনো পরিবর্তন হয়েছে এমন ইঙ্গিত এখনো পাওয়া যায় না। পশ্চিমা দেশগুলোর ভূমিকা কী? সাম্প্রতিক সময়ে পশ্চিমা কূটনীতিকদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করা এক রাজনীতিবিদের কাছে জানতে চেয়েছিলাম এ ব্যাপারে। তিনি বলেন, ‘তারা মনে করেন ৫ই আগস্টের পর এটা এক নতুন বাংলাদেশ।’
No comments