গণঅভ্যুত্থানের পর শ্রীলঙ্কায় প্রথম নির্বাচন: কে হচ্ছেন প্রেসিডেন্ট

অর্থনৈতিক সংকটে দেউলিয়া হয়ে যাওয়ার পর গণঅভ্যুত্থানে সাবেক প্রেসিডেন্ট গোটাবাইয়া রাজাপাকসে ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দ রাজাপাকসের সরকারের পলায়ন এবং তারপর অন্তর্বর্তী সরকারের পর প্রথম প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে গতকাল শনিবার ভোট দিয়েছেন শ্রীলঙ্কার ভোটাররা। ২০২২ সালে ভয়াবহ গণঅভ্যুত্থানে রাজাপাকসে সরকার পালিয়ে জীবন বাঁচায়। তারপর সেই সরকারের বাকি মেয়াদে ক্ষমতায় আসেন রনিল বিক্রমাসিংহে। তার সরকার দেশকে অর্থনীতির গহীন গর্ত থেকে অনেকটাই টেনে তুলেছে। ফলে গতকাল শনিবার যে ভোট হয়ে সেই ভোটকে শ্রীলঙ্কায় অর্থনৈতিক সংস্কারের এক গণভোট হিসেবে দেখা হচ্ছে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি। এই ভোটেও ভারত ও চীন ফ্যাক্টর বড় হয়ে উঠেছে। এশিয়ার এই দুই দেশ শ্রীলঙ্কায় তাদের আধিপত্য বিস্তারের লড়াইয়ে লিপ্ত। কিন্তু ভোটাররা কাকে ভোট দিয়ে ক্ষমতায় পাঠান তা এতক্ষণ ফয়সালা হয়ে যাওয়ার কথা। এখনো দেশটিতে অসংখ্য মানুষ উচ্চ ট্যাক্সের কারণে তাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের যোগান দিতে হিমশিম খাচ্ছে। সরকারের তরফ থেকে ভর্তুকি কমিয়ে দেয়া হয়েছে বা বাতিল করা হয়েছে। সমাজকল্যাণেরও একই অবস্থা।

এই নির্বাচনে মোট ৩৮ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচিত চারজন। তারা হলেন- রনিল বিক্রমাসিংহে, অনুরা কুমারা দিশানায়েকে, সাজিথ প্রেমাদাসা এবং নামাল রাজাপাকসে। এর মধ্যে রনিল বিক্রমাসিংহে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এর আগে দু’বার পরাজিত হয়েছেন। অনুরা দিশানায়েকে বামপন্থি ন্যাশনাল পিপলস পার্টি জোটের প্রার্থী। তিনি দুর্নীতি বিরোধী কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন সুশাসনের। তাকে খুব বেশি চীনপন্থি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। অন্যদিকে সাজিথ প্রেমাদাসা বিরোধী দল সামাগি জানা বালাওয়েগ্যা পার্টির নেতা। তার পিতা শ্রীলঙ্কার দ্বিতীয় এক্সিকিউটিভ প্রেসিডেন্ট ছিলেন। তাকে ১৯৯৩ সালে হত্যা করা হয়। অন্য প্রার্থী নামাল রাজাপাকসে হলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দ রাজাপাকসের ছেলে। মাহিন্দ রাজাপাকসের ক্ষমতার সময়ে শ্রীলঙ্কায় ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকট দেখা দেয়। বাধ্য হয়ে সরকার নিজেদেরকে দেউলিয়া ঘোষণা করতে বাধ্য হয়। এর পুরো দায় দিয়ে মাহিন্দা রাজাপাকসের বিরুদ্ধে ভয়াবহ আন্দোলন শুরু হয়। তাতে গণঅভ্যুত্থানের ফলে তিনি প্রেসিডেন্ট ও তার ভাই গোটাবাইয়া রাজাপাকসে পালিয়ে যান। শুরু হয় শ্রীলঙ্কায় সংস্কার কার্যক্রম।
শ্রীলঙ্কার ভোটাররা তিন প্রার্থীকে র‌্যাংকিং করে একজন প্রার্থীকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করেন। যদি একজন প্রার্থী একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে যান, তাহলে তাকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। যদি কেউই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পান তাহলে দ্বিতীয় দফায় ভোট গণনা শুরু হবে। এ পর্যন্ত শ্রীলঙ্কায় কোনো নির্বাচনের ফলই দ্বিতীয় দফা গণনায় যায়নি। কারণ, প্রথম দফায়ই একজন প্রার্থী পরিষ্কারভাবে বিজয়ী হয়েছেন। তবে এ বছর ব্যতিক্রম হতে পারে বলে মনে করেন আইসিজি’র কিনান। তিনি বলেন, জনমত জরিপ এবং প্রাথমিক প্রচারণা এটাই বলে যে, প্রথমবারের মতো এবারই কোনো প্রার্থী একক সংখ্যাগরিষ্ঠতায় বিজয়ী হতে ব্যর্থ হবেন বলে মনে হচ্ছে। তাই যেকোনো আপত্তি, বিরোধ সামনে এলে সে বিষয়টি মোকাবিলা করার জন্য প্রার্থী, দলীয় নেতাকর্মী ও নির্বাচন কর্মকর্তাদের প্রস্তুত থাকতে হবে।

mzamin

No comments

Powered by Blogger.