আধিপত্য বিস্তারের জেরেই মোহাম্মদপুরে জোড়া খুন
প্রত্যক্ষদর্শী ও হামলায় আহত হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মো. শাওন বলেন, আমি পেশায় একজন মোবাইল মেকানিক। রায়ের বাজার এলাকায় আমার দোকান রয়েছে। নিহত নাসির ও আমার বাসা একই এলাকাতে। শুক্রবার সন্ধ্যার পর আমি বাসা থেকে মোটরসাইকেল নিয়ে বের হওয়ার সময় নাসিরের সঙ্গে আমার দেখা হয়। সে হঠাৎ আমার মোটরসাইকেলের পেছনে ওঠে বলে- ‘আমাকে তোর সঙ্গে নিয়ে যা। তুই যেদিকে যাবি আমিও সেদিকে যাবো।’ এরপর দু’জনে রওনা হই। পথে বুদ্ধিজীবী কবরস্থানের পাশে সাদেক খান কৃষি মার্কেটের সামনে পৌঁছালে দেখি অস্ত্রধারী দুইদলের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলছে। একদল লাঠিসোটা ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে সাদেক খান কৃষি মার্কেটের দোকানের ভেতর অবস্থান করছে, আরেক দল বাইরে। দুই গ্রুপের সংঘর্ষে তখন রাস্তায়ও অনেক যানজট বেঁধে যায়। আমরা তখনো মোটরসাইকেলের উপর বসে ছিলাম। এরই মধ্যে অস্ত্র হাতে দোকানের বাইরে থাকা লোকজনের মধ্যে কয়েকজন আমার পেছনে বসে থাকা নাসিরকে দেখিয়ে ‘ওই যে একটাকে পাইছি রে’-বলেই কোপাতে থাকে। কয়েকটি কোপ দেয়ার পর নাসির জীবন বাঁচাতে মোটরসাইকেল থেকে নেমে দৌড় দেয়। তারপরও তারা নাসিরকে কোপাতে থাকে। নাসিরকে কেন মারছেন- বলে আমি তাদের ঠেকাতে গেলে আমাকেও মারধর করে তারা। এর একপর্যায়ে আশপাশের লোকের সহায়তায় নাসিরকে উদ্ধার করে প্রথমে স্থানীয় শিকদার মেডিকেল নিয়ে যাই। সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়। পরে নাসিরকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে রাত পৌনে ৮টার দিকে চিকিৎসকেরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহত নাসিরের বড় ভাই ইসলাম বিশ্বাস বলেন, মাদারীপুর জেলার কালকিনি উপজেলার বালিগ্রামের বাড়ি হলেও আমরা দীর্ঘদিন ধরে রায়ের বাজার বারৈইখালী এলাকায় বসবাস করি। পাঁচ ভাই, দুই বোনের মধ্যে নাসির ছিল চতুর্থ। তিনি বলেন, নাসির মূলত দিনমজুরির ভিত্তিতে রাজমিস্ত্রির কাজ করতো। সম্প্রতি সে নির্মাণাধীন ভবনের শ্রমিকদের সর্দার বা সুপারভাইজার হিসেবে কাজ করছিল। শুক্রবার বিকালে বাসা থেকে বের হওয়ার পর খবর পাই ১০/১৫ জন সন্ত্রাসী তাকে কুপাইছে। পরে ঢাকা মেডিকেলে গিয়ে ওর লাশ পাই। তিনি বলেন, আমার ভাই কোনো দল করতো না। ওর বন্ধুবান্ধবের ভেতর কেউ কেউ আওয়ামী লীগের সঙ্গে জড়িত ছিল। আর এই কারণেই আমার ভাইকে এভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এদিকে একই ঘটনায় মুন্না নামে আরও একজনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। শুক্রবার রাতে স্থানীয়রা মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে বুদ্ধিজীবী এলাকা থেকে উদ্ধার করে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তারও মৃত্যু হয়।
এ বিষয়ে মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইফতেখার হাসান বলেন, আমরা প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করতেই এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে। ওসি বলেন, বিগত সরকারের নেতাকর্মীদের ছত্রচ্ছায়ায় থাকার কারণে নাসির মোহাম্মদপুর-হাজারীবাগ এলাকায় আওয়ামী লীগের লোক হিসেবে পরিচিত। নাসিরের পেশা রাজমিস্ত্রি হলেও মুন্নার কোনো পেশা নেই। তারা দু’জনে একই গ্রুপের লোক ছিল। তাদের দু’জনের মধ্যে মুন্নার বিরুদ্ধে মাদক, নাশকতার অন্তত ৮টি এবং নাসিরের বিরুদ্ধে দুটি মাদক মামলা রয়েছে। তবে প্রতিপক্ষ গ্রুপে কে রয়েছে, সে বিষয়ে এখনো তেমন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। আমরা তদন্ত করছি। তদন্তের পর এ বিষয়ে বিস্তারিত বলা যাবে।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার সন্ধ্যায়ও মোহাম্মদপুর তিন রাস্তার মোড়ে গ্রীন ভিউ হাউজিং এলাকার বাসায় ঢুকে শাহাদাত হোসেন (২০) নামে এক যুবককে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
No comments