ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের যত ব্যর্থ অভিযান
মোসাদকে অনেকে ইসরায়েল রাষ্ট্রের ফুসফুসও বলে থাকে। দেশের ভরসা ও শত্রুদের সাক্ষাৎ যমদূত মানেন কেউ কেউ। সশস্ত্র বাহিনীর ক্ষেপণাস্ত্র বাঁচানোর জন্য ইসরায়েল যেভাবে আয়রন ডোম ব্যবহার করে, তেমনি মোসাদ ইসরায়েলের অস্তিত্ব রক্ষায় ঢাল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে বলে দাবি করা হয়।
মোসাদের প্রতিষ্ঠাতা তৎকালীন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী ডেভিড বেন গুরিয়ন মনে করতেন গোয়েন্দাবৃত্তি ইসরায়েলের প্রথম ডিফেন্স লাইন। টার্গেট দেশ থেকে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ, সন্ত্রাস দমন ও অপারেশনের পর এগুলো গোপন রাখা হচ্ছে মোসাদের প্রধান কাজ। এটি ইসরায়েলের প্রধান গোয়েন্দা সংস্থা। তাদের কাজের রিপোর্ট ও গোয়েন্দা তথ্য সরাসরি প্রধানমন্ত্রীকে দিতে হয়। এর নীতিমালা ও কার্যক্রম অনেকটা যুক্তরাষ্ট্রের সিআইএ, যুক্তরাজ্যের এমআই সিক্স ও কানাডার সিএসআইএসের অনুরূপ।
গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মধ্যে অপহরণ, হত্যা, গুমসহ এ ধরনের কর্মকাণ্ডে মোসাদকে সবচেয়ে দুর্ধর্ষ মানা হয়। মূলত ইসরায়েলের নিরাপত্তা প্রশ্নে বিভিন্ন প্রচেষ্টা ও কর্মকাণ্ড মোসাদকে গোয়েন্দাবৃত্তিতে সর্বোচ্চ মান দিয়েছে।
ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের ঝুলিতে অসংখ্য সফল অভিযান যেমন আছে, তেমনই তাদের ব্যর্থতারও নজির রয়েছে। তারই কয়েকটা উল্লেখ করা হলো-
খালেদ মেশালকে হত্যাচেষ্টা
হামাসের রাজনৈতিক নেতা খালেদ মেশালকে হত্যাচেষ্টা মোসাদের অন্যতম ব্যর্থ অভিযান। এ অভিযান একটা বড় কূটনৈতিক সংকটের সৃষ্টি করেছিল। জর্ডানে বিষ প্রয়োগের মাধ্যমে ১৯৯৭ সালে হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর প্রধান খালেদ মেশালকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল।
তাকে হত্যাচেষ্টার সময় ইসরায়েলি এজেন্টরা ধরে পড়ে যান। পরে ইসরায়েলকে এ বিষের প্রতিষেধক সরবরাহের জন্য বাধ্য করা হয়। মোসাদের তৎকালীন প্রধান ড্যানি ইয়াটম হামাসের এ নেতার চিকিৎসার জন্য জর্ডানে গিয়েছিলেন। এ ঘটনায় জর্ডান ও ইসরায়েলের সম্পর্কে উল্লেখযোগ্য প্রভাব দেখা গিয়েছিল।
হামাস নেতা মাহমুদ আল-জাহার
হামাস নেতা মাহমুদ আল-জাহারের বাড়িকে নিশানা করে ২০০৩ সালে গাজায় বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল। দেশটির এ হামলা থেকে তিনি বেঁচে গেলেও তার স্ত্রী ও ছেলেসহ কয়েকজন নিহত হন। ইসরায়েলের এ হামলায় তার বাসভবন পুরো ধ্বংস হয়ে যায়।
ইয়োম কিপ্পুর যুদ্ধ
মিসর এবং সিরিয়া সিনাই উপদ্বীপ এবং গোলান মালভূমি পুনরুদ্ধারের জন্য ১৯৭৩ সালের ৬ অক্টোবর ইসরায়েলের ওপর হামলা চালায়। দেশটিতে এ হামলার জন্য ইহুদিদের প্রায়শ্চিত্তের দিন ইয়োম কিপ্পুরেকে বেছে নেওয়া হয়। ফলে যুদ্ধের প্রাথমিক দিনগুলোতে ইসরায়েল প্রস্তুত ছিল না।
ইসরায়েলকে এ যুদ্ধে মিসর ও সিরিয়া দুই ফ্রন্টে হামলা চালায়। মিসরীয় বাহিনী সুয়েজ খাল অতিক্রম করে। প্রত্যাশিত হতাহতের মাত্র একটা অংশই তাদের আক্রমণের দ্বারা প্রভাবিত হয়। অন্যদিকে সিরিয়ার বাহিনী ইসরায়েলি অবস্থানে আক্রমণ করে এবং গোলান মালভূমিতে প্রবেশ করে।
এ যুদ্ধে রাশিয়া প্রয়োজনীয় সামগ্রী সরবরাহ করেছিল। অন্যদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে একটি অত্যাবশ্যকীয় পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থার জোগান দিয়েছিল। জাতিসংঘের তরফে প্রস্তাব দেওয়ার চার দিন পর যুদ্ধ শেষ হয়েছিল।
৭ অক্টোবরের হামলা
গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে আকস্মিক হামলা চালায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামীদের সংগঠন হামাস। যোদ্ধাদের এ হামলায় প্রায় ১২০০ ইসরায়েলি নিহত হন। তবে তাদের এ হামলার বিষয়ে আগে থেকে কোনো পূর্বাভাস দিতে পারেনি ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা।
মোসাদের লোগোর ওপর গ্রাফিক্স। ছবি : সংগৃহীত |
No comments