মার্কিন চার সিনেটরের চিঠি: গণতান্ত্রিক সংস্কার ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার আহ্বান ড. ইউনূসকে

বাংলাদেশে জরুরি গণতান্ত্রিক সংস্কার এবং ব্যাপক ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত ঘটনার জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের চারজন প্রভাবশালী সিনেটর। ২০শে সেপ্টেম্বর তারা এমন আহ্বান জানিয়ে প্রফেসর ড. ইউনূসের কাছে চিঠি লিখেছেন। ওই সিনেটররা হলেন- সিনেট ফরেন রিলেশন্স কমিটির চেয়ার সিনেটর বেন কার্ডিন, সিনেটর ক্রিস মারফি, সিনেটর ক্রিস ভ্যান হলেন এবং সিনেটর জেফ মারর্কলি। চিঠিটি প্রকাশিত হয়েছে ফরেন রিলেশন্স কমিটির ওয়েবসাইটে। এতে তারা বলেছেন, এই সংকটময় সময়ে বাংলাদেশকে সমর্থন করতে প্রস্তুত আমরা। জনগণের কণ্ঠস্বরকে সম্মান জানায় এমন গণতান্ত্রিক সফল রূপান্তরকে নিশ্চিত করতেও প্রস্তুত। চিঠিতে দেশের সংকটময় সময়ে নেতৃত্ব হাতে নেয়ার জন্য তারা ড. ইউনূসকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। দাবি করেছেন সারগর্ভ পরিবর্তন ও প্রাতিষ্ঠানিক পরিবর্তন। একই চিঠিতে হিন্দু ও কক্সবাজারে রোহিঙ্গা সম্প্রদায় সহ ঝুঁকিপূর্ণ সম্প্রদায়ের ওপর হামলার জন্য যারা দায়ী তাদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে এবং আইনের প্রয়োগ শক্তিশালী করার আহ্বান জানিয়েছেন তারা। চিঠিতে তারা লিখেছেন- সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে বিশ্ব প্রত্যক্ষ করেছে কীভাবে বাংলাদেশের জনগণ সাহসের সঙ্গে সামষ্টিক পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে পরিবর্তনের ক্ষমতা প্রদর্শন করেছে। যখন নাগরিকরা একতাবদ্ধ হয় তখন তাদের কণ্ঠস্বর সবচেয়ে আধিপত্যবাদী এমনকি স্বৈরাচার নেতাদের ক্ষমতা ত্যাগ করতে বাধ্য করতে পারে। কিন্তু এই ঐতিহাসিক মুহূর্ত এমনি এমনি আসেনি। তারা চিঠিতে আরও বলেন, বিক্ষোভকারীদের ন্যায্য অধিকারের দাবির সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পরিবর্তে র‌্যাবসহ বাংলাদেশের নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো নিষ্ঠুর শক্তির সঙ্গে সাড়া দিয়েছে। হত্যা করেছে কয়েকশ’ মানুষকে।

গ্রেপ্তার ও আহত করেছে হাজারো মানুষকে। যেসব মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন তাদের জন্য আমরা শোক প্রকাশ করি। একই সঙ্গে আপনার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই নিরাপত্তা সেবার সঙ্গে জড়িতদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে একটি নিরপেক্ষ ও পক্ষপাতিত্বহীন তদন্তের জন্য বিশ্বাসযোগ্য প্রক্রিয়া গ্রহণের। বিক্ষোভকারীদের অধিকারকে সম্মান করার প্রতি আপনার অঙ্গীকার প্রদর্শন এবং তাদের অভিযোগের সমাধান করার জন্য আপনার অন্তর্বর্তী সরকার যে সরল বিশ্বাসে কাজ করার অভিপ্রায়ে কাজ করছে তা উভয় ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ হবে। এই পরিবর্তন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কার, মত প্রকাশ ও শান্তিপূর্ণভাবে সভা-সমাবেশ সহ মানবাধিকার সুরক্ষিত রাখা নিশ্চিত করার জন্য একটি ঐতিহাসিক সুযোগ।  সরকারে সবার অংশগ্রহণ, নাগরিক সমাজ ও নিরপেক্ষ মিডিয়ার প্রতি সমর্থনের একটি সুযোগ। বাংলাদেশের নাগরিকদের বিরুদ্ধে যে সহিংসতা ঘটানো হয়েছে তার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার সুযোগ এটা। বাংলাদেশের জনগণ এমন একটি সরকারের দাবিদার, যে সরকার তাদের কণ্ঠস্বরকে সম্মান জানাবে, তাদের অধিকারকে সুরক্ষিত রাখবে এবং তাদের মর্যাদাকে সমুন্নত রাখবে। চিঠিতে আরও বলা হয়, যখন বাংলাদেশের এই নতুন অধ্যায়কে উদ্‌যাপন করছেন অনেকে তখন এসব উদ্‌যাপন কোনো কোনো ক্ষেত্রে সহিংসতায় রূপ নিচ্ছে। হিন্দু সম্প্রদায়- যাদেরকে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার সরকারের সমর্থক হিসেবে মনে করা হয়, তারাসহ পুলিশকে প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে টার্গেট করার প্রামাণ্য রিপোর্ট আছে। এর ফলে আইন প্রয়োগে ফাঁক এবং সহিংস হামলার মুখে থাকা ব্যক্তিদের সুরক্ষায় অভাব দেখা গেছে। এসব হুমকি এবং সহিংস ঘটনাকে সিরিয়াসলি দেখার জন্য আপনার প্রতি অনুরোধ জানাই আমরা।

mzamin


No comments

Powered by Blogger.