সাকিব অস্ত্রোপচার করালেন কখন

সাকিব আল হাসান কেন বোলিং করছেন না, বোলিংয়ে কেন ধার নেই! চেন্নাইয়ে বাংলাদেশ-ভারতের প্রথম টেস্টের প্রথম দুইদিনে এ দুটো ছিল অন্যতম আলোচিত প্রশ্ন। গতকাল তৃতীয় দিন সকালে ধারাভাষ্যকার মুরালি কার্তিক মারফত জানা যায়, অস্ত্রোপচারের কারণে সাকিব আঙুলে অস্বস্তি বোধ করছেন। এ কারণেই বোলিংয়ে নেই ধার। কিন্তু এরপর সবচেয়ে বড় প্রশ্ন ওঠে, সাকিব অস্ত্রোপচারটা করালেন কখন।

প্রথম ইনিংসে সাকিব আল হাসানকে মাঠে খুঁজেই পাওয়া যাচ্ছিল না। ৫৩তম ওভারে তার হাতে বল তুলে দেন বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হাসান শান্ত। তবে বল হাতে সাকিবকে যেন খুবই অচেনা লাগছিল। দ্বিতীয় ইনিংসে সেটা আরও প্রকট হলো, ওভার প্রতি রান দিলেন ৫ এর বেশি! তাহলে সমস্যাটা কোথায়? এই প্রশ্নের উত্তর মেলে গতকাল ম্যাচের তৃতীয় দিনে। ধারাভাষ্য কক্ষে চমক জাগানো তথ্যটা দিলেন ভারতীয় ধারাভাষ্যকার মুরালি কার্তিক। এর আগে একটা ভিডিওতে দেখা গিয়েছিল গতকাল সকালে সাকিবের সঙ্গে আলাদা করে কথা বলছেন তিনি।
সাকিবের বোলিংয়ের বিষয়ে প্রশ্ন উঠতেই বেরিয়ে আসে তখনকার আলাপ। কার্তিক বলেন, ‘তাকে আমি দীর্ঘদিন ধরে চিনি। তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, কী কারণে সে কম বোলিং করছে...সে আমাকে যা বলেছে, তা একজন স্পিনার হিসেবে আমি অনুধাবন করতে পারছি।’ এরপরই চমকে দেওয়া তথ্যটা জানান কার্তিক। তিনি বলেন, ‘তার বাঁ হাতের স্পিনিং ফিঙ্গারে একটা অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। সেটি এখন ফুলে গেছে, শক্ত হয়ে আছে। ওই আঙুলে সে বলের অনুভূতিটাও পাচ্ছে না। স্পিনার হিসেবে বলের অনুভূতিটা দরকার। এ ছাড়া তার কাঁধেও অস্বস্তি আছে।’
এর কিছুক্ষণ পরই ধারাভাষ্যে আসেন টাইগারদের সাবেক অধিনায়ক ও সাকিব আল হাসানের সতীর্থ তামিম ইকবাল খান। সাকিবের প্রসঙ্গে টিম ম্যানেজমেন্টের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন ছুড়ে দেন তিনি। তামিম বলেন, ‘মুরালি কার্তিক বলে গেছে, আঙুলের সমস্যার কারণে সাকিব বল গ্রিপ করতে পারছে না। যদি তা-ই হয়, তাহলে বাংলাদেশ চারজন ফ্রন্টলাইন বোলার নিয়ে খেলছে। টিম ম্যানেজমেন্টের অবশ্যই বলা উচিত, তারা এই ইনজুরির কথাটা আগে থেকেই জানতো কি না।’
যেহেতু সাকিব নিজে বলছেন, তাহলে এটা সর্বশেষ তথ্য হিসেবেই ধরতে হবে। তবে অস্ত্রোপচারের চেয়েও বড় চমক সাকিব সেটা কখন করালেন! কারণ, গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ থেকেই সাকিব খেলার মধ্যে আছেন। বিশ্বকাপ শেষে খেলেন মেজর লীগ টি-টোয়েন্টি, এরপর কানাডার গ্লোবাল টি-টোয়েন্টিতেও খেলেছেন সাকিব। সেখান থেকে সরাসরি যোগ দেন পাকিস্তানে জাতীয় দলের সঙ্গে। পাকিস্তানে দুই টেস্ট খেলার পর কাউন্টি ক্রিকেটে সারের হয়ে খেলেন আরও একটি লাল বলের ম্যাচ।
কাউন্টির ম্যাচটি শেষ হয় ১৫ই সেপ্টেম্বর, যে ম্যাচে সাকিব দুই ইনিংস মিলিয়ে বল করেন ৬৪ ওভার, নেন ৯ উইকেট। এর মধ্যে অস্ত্রোপচার করালে নিশ্চয়ই কাউন্টিতে টানা এত ওভার বোলিং করতে পারতেন না।  তবে সেটাও কি আসলে সম্ভব! কারণ সাকিব ভারতে এসেছেন ১৭ই সেপ্টেম্বর, পরের দিন শুরু হয় টেস্ট। এর মধ্যে সময় থাকে ১ দিন, ফলে ভ্রমণ-অস্ত্রোপচার মিলিয়ে এটা বাস্তবসম্মত মনে হয় না। এর আগে অবশ্য ৫-৬ দিন সময় ছিল। যখন পাকিস্তান থেকে ইংল্যান্ডে যান সাকিব। কিন্তু তাতেও তার ভেতর অস্ত্রোপচার করিয়ে কাউন্টিতে এক ম্যাচেই ৪ দিনের ভিতর ৬৪ ওভার হাত ঘোরানো সম্ভবই নয়। তাহলে সাকিব আসলে সার্জারিটা করালেন কখন, যাতে এখন তার হাতের আঙুল ফুলে গেলো। বিসিবির চিকিৎসক অবশ্য এ বিষয়ে কিছুই জানেন না! এ কারণে আলোচনার অবকাশটা আরও বাড়ে। কারণ বিসিবির চিকিৎসকে না জানিয়ে কোনো ক্রিকেটার চিকিৎসা করান না। ভারত সফরে বাংলাদেশ দলে ম্যানেজার রাবিদ ইমাম বলেন, ‘মুরালিতো আমাদের টিমের কেউ না। দুই দিন আগে সে ৭০ ওভার বল করে আসছে, ইনজুরি থাকলে এটা কি সম্ভব? আজকে সে বোলিং করছে, ফিল্ডিং করছে, ব্যাটিং করছে, সব করছে। শতভাগ ফিট। কোনো সমস্যা নেই।’ সাকিব সর্বশেষ অস্ত্রোপচার করিয়েছেন ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপের পর। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচে বাঁহাতির তর্জনী ভেঙে যাওয়ার পর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বাংলাদেশের শেষ ম্যাচে না খেলে দেশে ফিরে আসেন সাকিব। একটি দৈনিককে এ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে দেবাশীষ জানান, ওই অস্ত্রোপচারের কারণেও এখন সাকিবের আঙুলে অস্বস্তি হতে পারে। কিন্তু সেটাই যদি হয় তাহলে সাকিব কেন সেটা উল্লেখ করলেন না। তিনি কেন শুধু অস্ত্রোপচারের কথাই বললেন।

mzamin

No comments

Powered by Blogger.