ট্রাম্পকে রিপাবলিকানদের সতর্কতা

নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপ নিয়ে তদন্তকারী স্পেশাল কাউন্সেল রবার্ট মুয়েলারের তদন্তে হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে নিজ দল রিপাবলিকান সদস্যরা সতর্ক করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পকে। ওই তদন্ত নিয়ে রবার্ট মুয়েলারের কড়া সমালোচনা করেছেন ট্রাম্প। গত সপ্তাহান্তে তিনি যথারীতি টুইট করেন। এতে আবারো দাবি করেন নির্বাচন নিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে তার নির্বাচনী দলের কোনো সমঝোতা হয় নি। পাশাপাশি তিনি ওই তদন্তকে ‘উইচ হান্ট’ বা অশুভ উদ্দেশ্য চরিতার্থ বলে অভিহিত করেন। ট্রাম্প আরো বলেন, এই তদন্তে প্রাধান্য বিস্তার করছেন কট্টরপন্থি ডেমোক্রেটরা। এখানে উল্লেখ করার বিষয় যে, রবার্ট মুয়েলারকে দেখা হয় এফবিআইয়ের একজন সাবেক প্রধান হিসেবে। তিনি নিজে একজন রিপাবলিকান। তাকে নিয়ে এমন মন্তব্যের কারণে ট্রাম্পকে সাবধান করেছেন রিপাবলিকান দলের সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম। তিনি বলেছেন, কোনো রকম হস্তক্ষেপ ছাড়া রবার্ট মুয়েলারকে কাজ করতে দেয়া উচিত। তার এ মতের সঙ্গে একমত পোষণ করেন অনেক রিপাবলিকান। পাশাপাশি রবার্ট মুয়েলারকে বরখাস্ত করার গুজব অনেকদিন ধরেই বাতাসে ভাসছে। সে বিষয়েও ট্রাম্পকে সতর্ক করেছেন লিন্ডসে গ্রাহাম। তিনি বলেন, ট্রাম্প যদি মুয়েলারকে বরখাস্ত করার চেষ্টা করেন তাহলে সেটাই হবে তার প্রেসিডেন্সি খতম হওয়ার শুরু। কারণ, মার্কিনিরা আইনের শাসনের অধীনে থাকা একটি জাতি। লিন্ডসে গ্রাহামের সঙ্গে সুর মিলিয়েছেন রিপাবলিকান সিনেটর জেফ ফ্লেক। তিনি ট্রাম্পের একজন কড়া সমালোচক। তিনি বলেছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প টুইটে সর্বশেষ যে মন্তব্য করেছেন তা দেখে মনে হচ্ছে তিনি রবার্ট মুয়েলারকে বরখাস্ত করার প্রাথমিক কাজকর্ম শুরু করেছেন। জেফ ফ্লেক বলেন, তিনি আসলে মুয়েলার ইস্যুকে কি পরিকল্পনা নিচ্ছেন তা আমি জানি না। তবে দেখে মনে হচ্ছে, তিনি সে পথেই যাচ্ছেন এবং আমি আশা করি সেটা ঘটা উচিত নয়। এটা মেনে নেয়া হবে আর আমরা কংগ্রেসে থাকবো তা হতে পারে না। হোয়াইট হাউস এ ইস্যুতে কেন এত কঠোর হচ্ছে সে বিষয়ে আমি তো হতবিহ্বল। এতে কি বেরিয়ে আসবে সে বিষয়েই হয়তো তারা (প্রশাসন) অত্যন্ত শঙ্কিত। ওদিকে প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার পল রায়ানের মুখপাত্র অ্যাশলি স্ট্রং বলেছেন, স্পিকার তো সব সময়ই বলে আসছেন রবার্ট মুয়েলার ও তার টিমকে তাদের কাজ করতে দেয়া উচিত। অন্যদিকে তদন্তকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে নানা রকম বুদবাষ্প ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করছেন ট্রাম্প- এমন অভিযোগ এনেছেন সিনেট ডেমোক্রেট নেতা চার্লস শুমার। তিনি এক বিবৃতিতে বলেছেন, আমাদের রিপাবলিকান সহকর্মী, বিশেষ করে নেতৃত্বের প্রতি দেশবাসীর কিছু বাধ্যবাধকতা আছে। তাদেরকে পরিষ্কার করতে হবে যে, রবার্ট মুয়েলারকে যদি বরখাস্ত করা হয় তা আমাদের গণতন্ত্রের জন্য সীমা অতিক্রম হবে। এটা হবে রেডলাইন অতিক্রম করা। এটা হতে পারে না। উল্লেখ্য, প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের আইনজীবী জন ডোড একদিন আগে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, স্পেশাল কাউন্সেল রবার্ট মুয়েলারের তদন্ত শেষ হতে চলেছে। এর মধ্য দিয়ে তিনি হয়তো বুঝাতে চেয়েছেন মুয়েলার অধ্যায়ের যবনিকা ঘটতে চলেছে। অর্থাৎ মুয়েলারকে বরখাস্ত করা হতে পারে। এ ছাড়া হোয়াইট হাউসের আইনজীবী টাই কোব একটি বিবৃতি দিয়েছেন রোববার। এতে তিনি বলেছেন, মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া খবরের ভিত্তিতে হোয়াইট হাউস আরো একবার নিশ্চয়তা দিচ্ছে। নিশ্চয়তা দিচ্ছে যে, স্পেশাল কাউন্সেলরকে বরখাস্তের বিষয় বিবেচনা বা আলোচনা করছেন না প্রেসিডেন্ট। এসব ঘটনার পর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প রাশিয়া কানেকশন নিয়ে ওই টুইট করেন। এর আগে তিনি এফবিআইয়ের সাবেক উপ-পরিচালক অ্যান্ড্রু ম্যাকাবে’কে বরখাস্ত করেন শুক্রবার। তারও আগে গত বছর বরখাস্ত করেন এফবিআইয়ের সাবেক পরিচালক জেমস কমি’কে। ম্যাকাবে সম্পর্কে ট্রাম্প একটি টুইট করেছেন। এতে তিনি কংগ্রেসে যে শপথ নিয়েছেন তার অধীনে মিথ্যা বলার জন্য ম্যাকাবেকে দায়ী করেছেন। তাছাড়া রাশিয়া তদন্ত নিয়ে তিনি ভুয়া মেমো শেয়ার করছিলেন বলেও অভিযোগ আছে। যুক্তরাষ্ট্রের মিডিয়ার খবরে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে কথোপকথনের মেমো রবার্ট মুয়েলারকে সরবরাহ করেছেন ম্যাকাবে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যে বিচার ব্যবস্থায় বাধা সৃষ্টি করছিলেন তা প্রমাণে যথেষ্ট সমর্থন দিতে পারে ওই মেমো।

No comments

Powered by Blogger.