এক চীনের জন্য যুদ্ধের হুমকি চীনা প্রেসিডেন্টের

নিরঙ্কুশ ক্ষমতা পেয়েই যুদ্ধের হুমকি দিলেন চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। দেশের পার্লামেন্ট, ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেসের বার্ষিক অধিবেশন মঞ্চে দাঁড়িয়ে মঙ্গলবার পরিষ্কারভাবে জানালেন, চীনকে বিশ্বের সর্বোচ্চ আসনে দেখতে চান তিনি। চীন মানে, ‘এক চীন’। আর বাইরে থেকে যারা সেই ঐক্য ভাঙতে চাইবে, তাদের বললেন— ‘‘চীনের সেনা তৈরি। এ বার তারাও তৈরি থাকুক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের জন্য।’’ নিছক বার্তা নয়, স্পষ্ট হুঁশিয়ারি। কিন্তু কাদের? খোলসা করেননি চীনা প্রেসিডেন্ট। তবে কূটনীতিকদের একাংশ বলছেন, এই হুঁশিয়ারি আদতে তাইওয়ানকে ঘিরেই। স্বশাসিত এই প্রদেশটি বহু দিন ধরেই চীন থেকে আলাদা হতে চাইছে। বেইজিংয়ের সন্দেহ, গোপনে আনুষ্ঠানিক স্বাধীনতা ঘোষণার চেষ্টাও চালিয়ে যাচ্ছে সেখানকার ক্ষমতাসীন ডেমোক্র্যাটিক প্রোগ্রেসিভ পার্টি। এর মধ্যে আবার, আগুনে ঘি ঢেলেছে আমেরিকা। ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের উপর চড়া শুল্ক বসানোয় এমনিতেই তাদের উপর খাপ্পা বেইজিং। তার পর গত সপ্তাহেই মার্কিন প্রেসি়ডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এমন একটি আইনে সই করেছেন, যার বলে উচ্চপদস্থ মার্কিন কর্মকর্তারা দিব্যি তাইওয়ানে গিয়ে বৈঠক করে আসতে পারেন। চীন চটতে পারে ভেবেই, এর আগে কিন্তু প্রকাশ্যে বৈঠক করেনি তাইপেই-ওয়াশিংটন। তাই জিনপিংয়ের জ্বালাময়ী বক্তৃতার নিশানায় আমেরিকাও রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। কূটনীতিকদের একাংশ আলাদা করে দেখিয়ে দিতে চাইছেন চীনা প্রেসিডেন্টের আস্তিন থেকে বেরিয়ে আসা উগ্র জাতীয়তাবাদী তাসকেও। অধিবেশনের শেষ দিনে চীনা প্রেসিডেন্ট যা বললেন, তার একটা বড় অংশ জুড়ে রইল তার চীনকে এক এবং অবিচ্ছেদ্য রাখার স্বপ্ন। জিনপিংয়ের দাবি, ‘‘দেশের সম্পূর্ণ ঐক্য আসলে চীনা নাগরিকদেরই সম্মিলিত আকাঙ্ক্ষা। আর এটা ধরে রাখতে শুধু আমাদের বাহিনী নয়, দেশের প্রতিটি মানুষও রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের জন্য তৈরি। বাইরে থেকে এসে কেউ এক ইঞ্চি জমিও আমাদের থেকে আলাদা করতে পারবে না।’’
এ দিন আবার চীনের প্রধানমন্ত্রী লি খ্যচিয়াং-ও সংবাদ সম্মেলন করে জানান, আন্তর্জাতিক বাজার ধরতে মরিয়া তার দেশ। চীনা বাজারে স্বচ্ছতার সঙ্গে ব্যবসা বাড়াতে তিনি সহযোগিতা চেয়েছেন বাকি বিশ্বেরও। বাণিজ্য আর আর্থিক উন্নয়নের কথা বলতে গিয়ে মঙ্গলবার চীনা প্রেসিডেন্ট কিঞ্চিৎ আশ্বাসও দিয়েছেন প্রতিবেশীদের। তার দাবি— দেশে-বিদেশে তাদের যে সব উন্নয়ন যজ্ঞ চলছে, তার ঝড় কাউকে পোহাতে হবে না। অহেতুক ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই। দ্বিতীয় বারের জন্য প্রেসি়ডেন্ট নির্বাচিত চিনফিংকে অভিনন্দন জানাতে মঙ্গল ফোন করেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বিইজিং জানিয়েছে, ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরো মজবুত করার আশ্বাস দিয়েছেন জিনপিং। ভারতের সঙ্গে সীমান্ত নিয়ে বিস্তর সমস্যা রয়েছে চীনের। আবার দক্ষিণ চীন সাগরে বেইজিংয়ের ‘দাদাগিরি’ নিয়েও ফিলিপাইন, মালয়েশিয়ার মতো দেশের অভিযোগ কম নয়। ‘আজীবনের প্রেসিডেন্ট’ জিনপিং অবশ্য আজ এদের কাউকে নিয়েই কোনো মন্তব্য করেননি। পার্লামেন্টের বার্ষিক অধিবেশনের মঙ্গলবার ছিল শেষ দিন। ১৮ দিনের এই ‘ঐতিহাসিক’ অধিবেশনেই নিরঙ্কুশ ক্ষমতা পেয়েছেন পঁয়ষট্টি ছুঁইছুঁই জিনপিং। দেশের সংবিধানে বদল এনে পার্লামেন্ট জানিয়ে দিয়েছে, ২০৩৩-এর পরেও যত দিন খুশি প্রেসিডেন্ট থাকবেন তিনি। কূটনীতিকদের একাংশ বলছেন, মঙ্গলবার সেই ‘সর্বেসর্বা’ মেজাজেই অধিবেশন কাঁপালেন জিনপিং। যদিও মুখে বলেছেন, চীনে এখন কমিউনিস্ট পার্টিই শেষ কথা। নাগরিকদের নৈতিক অধিকার পাইয়ে দিতে দায়বদ্ধ তার দল। প্রেসিডেন্টের কথায়, ‘‘এমন কিছু করব না যাতে মানুষের বিশ্বাসভঙ্গ হয়।’’

No comments

Powered by Blogger.