বাল্যবিয়ে ও গ্রামে আর্থ-সামাজিক সংস্কার by আহমদ রফিক

বালবিয়ে, অপরিণত বয়সে বিয়ে ব্যক্তি ও সমাজের জন্য অভিশাপ বলা চলে। অপরিণত দেহে সন্তানধারণ, সন্তান প্রসব নানা দৈহিক সমস্যার সৃষ্টি করে থাকে। কখনও তা জন্মদাত্রীর জীবনে অভিশাপ বয়ে আনে। দুর্বিষহ হয়ে ওঠে তার জীবনযাত্রা। এ ছাড়াও ব্যক্তিজীবনে বাল্যবিয়ে একাধিক সমস্যা তৈরি করতে দেখা গেছে। অসম বয়সের যৌনজীবন কখনও ট্র্যাজিক ঘটনারও জন্ম দিয়েছে। বিষয়টি আজকের নয়। এসব কারণে ভারতে বিদেশি শাসনামলেই সরকারি উদ্যোগে ১৮৯১ খ্রিষ্টাব্দে 'সহবাস সম্মতি আইন' পাস হয় সমাজের আধুনিক চেতনার বিশিষ্টজনের চেষ্টা ও সমর্থনে। আইন পাস, আর তা সমাজে বাস্তবায়ন ভিন্ন বিষয়। তখনকার রক্ষণশীল সমাজে এ নিয়ে তুমুল আলোড়ন ও প্রতিবাদ উঠেছিল। সমাজপতিদের ডাকে হরতাল পর্যন্ত পালিত হয় এ আইনের বিরুদ্ধে। প্রতিবাদের অন্য প্রকাশ ব্যাপক গণবিয়ে; বলাই বাহুল্য তা বাল্যবিয়ে। এ দেশে একটি ভালো তথা জনবান্ধব আইন বাস্তবায়নও যে কত কঠিন, তার আরও উদাহরণ বিদ্যাসাগর মশাইয়ের চেষ্টায় বিধবা বিয়ের আইন পাসের পরিণাম; এমনকি রাজা রামমোহনের চেষ্টায় সরকার প্রণীত সতীদাহ নিষিদ্ধ করা আইনের বাস্তব ফলাফল। একালের বাংলাদেশে আইন ও তার বাস্তবায়নের ফারাক বহু ঘটনায় লক্ষ্য করা যায়। কখনও এর পেছনে থাকে প্রশাসনিক উদাসীনতা, কখনও সমাজে প্রতিক্রিয়াশীল কায়েমি স্বার্থের প্রভাব। এখানেই শেষ নয় বাল্যবিয়ের নেতিবাচক দিক। এর প্রকাশ ব্যক্তি থেকে সমাজ হয়ে জাতীয় পর্যায়ে বিস্তৃত। অপরিণত বয়সে বিয়ের কারণে মেয়েদের প্রজননকাল দীর্ঘ হয়ে থাকে। স্বভাবতই পরিবারে সন্তানের সংখ্যা হয়ে ওঠে অপরিমিত। সামাজিক সংস্কার এর পক্ষে নৈতিক সমর্থন জোগায়। কিন্তু ভাবা হয় না এর অর্থনৈতিক দিক, এত সংখ্যক সন্তান লালন-পালনের ব্যয়বহুল দিক। এ অর্থনৈতিক সমস্যার প্রভাব ঘুরেফিরে পড়ে পরিবারে ফের কন্যাসন্তানের ওপর। অসচ্ছল বা গরিব পরিবারের চেষ্টা থাকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিয়ে দিয়ে কন্যাকে পরিবার থেকে বিদায় করা, লক্ষ্য পারিবারিক ব্যয়ভার কমানো। অন্যদিকে গ্রামীণ সমাজে, বিশেষ করে কৃষক পরিবারের প্রধান লক্ষ্য একাধিক পুত্রসন্তানের জন্ম, যাতে তারা শৈশব-কৈশোরেই পরিবারে অর্থনৈতিক সহায়তা দিতে পারে কৃষিকর্মে যোগ দিয়ে। পার্থক্য তৈরি হয় পুত্র ও কন্যাসন্তানের ক্ষেত্রে, এর প্রভাব কিছুটা হলেও শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে; উপেক্ষিত হয় কন্যাসন্তানের শিক্ষা। তার অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা লোপ পায়। এর বিরূপ প্রভাব পড়ে তার সমস্যাতাড়িত দাম্পত্য জীবনে- অসহায় স্ত্রীর পক্ষে সমস্যা থেকে স্বচ্ছ মুক্তি সম্ভব হয় না। পুত্র ও কন্যাসন্তান নিয়ে পারিবারিক পক্ষপাতিত্ব নারীজীবনের নানামাত্রিক অসহায়তা সৃষ্টি করে। কিন্তু বাল্যবিয়ের বড় সমস্যা ব্যক্তি থেকে সমাজ ও জাতি পর্যায়ে প্রধানত জনসংখ্যার বিস্ম্ফোরণে। দেশের অর্থনৈতিক দুর্বলতা, ভূখণ্ডের আয়তন ও সম্পদের তুলনায় অধিক জনসংখা রাষ্ট্রিক ও সামাজিক সমস্যা তৈরি করে। মাথাপিছু আয় ও সম্পদের স্বল্পতাও এর একটি বড় দিক। একটি দেশে তুলনামূলক বিচারে অত্যধিক জনসংখ্যা কখনোই আশীর্বাদ (যা কেউ কেউ বলে থাকেন) নয়, বরং আর্থ-সামাজিক বিচারে অভিশাপ হিসেবে গণ্য হওয়ার তুল্য। আর সে জন্যই উন্নত দেশ বা উন্নয়নশীল আধুনিক চেতনার দেশে জন্মনিয়ন্ত্রণ জরুরি ভিত্তিতে পরিচালিত হয়ে থাকে। পঞ্চাশ থেকে ষাটের দশকে চীন এদিক থেকে অনুসরণযোগ্য এক উদাহরণ সৃষ্টি করেছিল। এর প্রভাব দেখা গেছে স্বল্পকাল স্থায়ী হলেও ষাটের দশকে পূর্ব পাকিস্তানে জন্মনিয়ন্ত্রণ ও পরিবার পরিকল্পনার ব্যাপক কার্যক্রমে। জন্মহার সাময়িক কমে এসেছিল। প্রতিকারের অনেকটা সফল চেষ্টা সত্ত্বেও প্রতিরোধের জায়গাগুলোতে হাত পড়েনি। অর্থাৎ গ্রামাঞ্চলে শিক্ষার প্রসার ঘটানো, সামাজিক কুসংস্কারের গোড়া উচ্ছেদের ব্যবস্থা, সর্বোপরি বাল্যবিয়ে বন্ধ করার দিকে নজর দেওয়া হয়নি- কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ দূরে থাক। দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের বাসস্থান গ্রামে, যেখানে প্রয়োজনীয় মাত্রায় শিক্ষার আলো জ্বলেনি, সেখানে রক্ষণশীল সমাজপতিদের শাসনই প্রধান। গ্রামে গ্রামে ফতোয়াবাজি আর ব্যাপক মাত্রায় বাল্যবিয়ে গ্রামীণ সমাজের বৈশিষ্ট্য হয়ে দাঁড়ায়।
দুই. স্বাধীন বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে উল্লিখিত অবস্থার খুব যে একটা পরিবর্তন ঘটেছে, তা নয়। এমনকি ছোটখাটো শহরে অসচ্ছল বা দরিদ্র শ্রমজীবী পরিবারে নেতিবাচক উপকরণগুলো প্রায় অব্যাহতই থেকে গেছে। এখনও সংবাদপত্রে নিয়মিত খবর- বাল্যবিয়ে, প্রাথমিক শিক্ষাঅন্তে মাধ্যমিকে এসে শিক্ষায়তন থেকে ছাত্রীদের ঝরে পড়া, যা নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজধানীর মধ্যবিত্ত থেকে সচ্ছল ও বিত্তবান পরিবারে শিক্ষা ও বাল্যবিয়ের অবস্থা ভিন্ন হলেও বস্তিবাসী বা শ্রমজীবী পরিবারে সেই পুরনো অভিশপ্ত অবস্থার পরিবর্তন সামান্য, তা বলাই বাহুল্য তাৎপর্যপূর্ণ নয়। এদিক থেকে ব্যতিক্রম রাজধানী ঢাকাসহ আর্থ-সামাজিক বিচারে সমৃদ্ধ শহরগুলোতে। নারী শিক্ষা যেমন অগ্রসর পর্যায়ে, তেমনি বাল্যবিয়ের সংখ্যাও যথেষ্ট মাত্রায় কম। তাই মহানগর ঢাকায় অফিস-আদালতে, ব্যাংকে, বেসরকারি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে এবং গণমাধ্যমের সাংবাদিকতায় (সংবাদপত্রে বা টেলিভিশনে) মেয়েদের যথেষ্ট সংখ্যায় কর্মরত দেখা যায়। তাদের অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতাও প্রশ্নাতীত। কিন্তু এ ছবিটা ঢাকা বা চট্টগ্রামের মতো দু'চারটি শহর-নগরে সত্য হলেও দেশের জনসংখ্যার তুলনামূলক বিচারে গৌণ। বলা যায়, জলে ভাসমান বরফ খণ্ডের সামান্য ওপর অংশমাত্র। দেশে পরিচালিত একাধিক জরিপের পরিসংখ্যান এমন তথ্যই পরিবেশন করে। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাও ভিন্ন নয়। ঢাকার উদাহরণ গোটা দেশের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়, বিশেষ করে ছোট ছোট শহরে ও গ্রামাঞ্চলে। ঢাকায় অবস্থিত বস্তিগুলোর অবস্থাও গ্রামের মতোই। সেখানে রয়েছে বিস্তর 'টোকাই', শিশু শ্রমিক (ছেলেমেয়ে), সর্বোপরি মেয়েদের বাল্যবিয়ে। আর জন্মনিয়ন্ত্রণ ও পরিবার পরিকল্পনা মুখ থুবড়ে পড়ার কারণে একাত্তর সালের ৭ কোটি এখন ১৬-১৭ কোটি জনসংখ্যায় পৌঁছে গেছে।
তিন. আন্তর্জাতিক দিবস উপলক্ষে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন খবরে ও নিবন্ধে বাংলাদেশে বাল্যবিয়ে নিয়ে কিছু লেখালেখি হয়েছে; জনপ্রিয় দৈনিকের প্রথম পাতায় খবরও ছাপা হয়েছে। তাতে হতাশার চিত্রটাই প্রধান। অর্থাৎ বাংলাদেশে এই একুশ শতকেও বাল্যবিয়ের সংখ্যা বেড়ে চলেছে। এই বৃদ্ধির হার ৫২ শতাংশ থেকে বেড়ে ৫৯ শতাংশে পৌঁছেছে। বৃদ্ধির শতাংশ হারে বিশ্বে বাংলাদেশ চতুর্থ স্থানে। শুধু আফ্রিকার তিনটি দেশ বাংলাদেশের ওপরে। অথচ জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ পরিচালিত জরিপের হিসাবে দেখা যায়, বিশ্বে বাল্যবিয়ের হার কমেছে। গত এক দশকে এই বিয়ের হার ২০ শতাংশ এসে দাঁড়িয়েছে। এ ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে অগ্রগতি লক্ষণীয় মাত্রায়। ভারতে মেয়েদের উন্নত শিক্ষা এবং বাল্যবিয়ের কুফল সম্পর্কে জোরালো প্রচার বাল্যবিয়ে হ্রাসের কারণ বলে বিশেষজ্ঞ মহলের ধারণা। আশ্চর্য যে, কৃষ্ণ আফ্রিকার পশ্চাৎপদ দেশ আবিসিনিয়ায় বাল্যবিয়ের হার এক-তৃতীয়াংশ কমেছে। অথচ বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে আবিসিনিয়ারও পেছনে, ভারতের তো বটেই। অবশ্য এই বৃদ্ধি (৫৯ শতাংশ) নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশের সংশ্নিষ্ট বিশেষজ্ঞরা কথিত ৫৯ শতাংশ বৃদ্ধি নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন। যদি পূর্বহার ৫২ শতাংশই সঠিক বলে ধরা হয়, তাহলেও এ সংখ্যা হতাশাজনক সামাজিক চিত্রই তুলে ধরবে। বাল্যবিয়ে নিয়ে ইদানীং সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যাদি খুব একটা আশাব্যঞ্জক নয়। এর প্রধান কারণ, আগে যে কথা বলা হয়েছে, ছোট শহর থেকে গ্রামাঞ্চলে নারীশিক্ষার ক্ষেত্রে যথেষ্ট অগ্রগতির অভাব। অবৈতনিক শিক্ষাব্যবস্থা সত্ত্বেও এই যে উৎসাহব্যঞ্জক সাড়ার অভাব, এর মূলে রয়েছে অর্থনৈতিক অসচ্ছলতা- সাধারণভাবে যে বিষয়টি ইতিপূর্বে আলোচিত। এর শিক্ষণীয় দিক হলো, বাল্যবিয়ে কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে শুধু শিক্ষার বিস্তার ঘটালেই চলবে না, সেই সঙ্গে অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতাও জরুরি পূর্বশর্ত। সে ক্ষেত্রে সচ্ছলতা না হয় ধীরেসুস্থেই আসুক। যেহেতু গ্রামাঞ্চল উল্লিখিত পশ্চাদযাত্রার উৎসস্থল; তাই বাল্যবিয়ের আর্থ-সামাজিক ও জাতীয় সমস্যার বিবেচনায়, বক্ততা-বিবৃতি-ভাষণ নয়, নারীশিক্ষা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের কার্যক্রম শুরু করতে হবে গ্রাম থেকে গ্রামকে কেন্দ্র করে। সেই কবে শত বছরের অধিককাল আগে রবীন্দ্রনাথ আক্ষেপের সুরে বলেছিলেন, গ্রাম পড়ে আছে মধ্যযুগে, শহর আধুনিক যুগে; দুয়ের মধ্যে বিশাল ব্যবধান। তার আহ্বান ছিল এই ব্যবধান ঘোচানোর ও প্রকৃত শিক্ষার মাধ্যমে আলোকিত চিত্তের মানুষ তৈরি এবং অর্থনৈতিকভাবে স্বনির্ভর গ্রামীণ সমাজ গড়ে তোলা। এত বছর পরও তার পরামর্শ ও কর্ম এ দুইয়ের যথেষ্ট প্রাসঙ্গিকতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে বাংলাদেশে। এখন নতুন স্লোগান হওয়া উচিত- 'গ্রাম বাঁচলে বা জেগে উঠলে দেশ বাঁচবে।'
একসময় এসব নিয়ে অনেক কথা হয়েছে; কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয়নি। দেশের সমৃদ্ধি বলতে মহানাগরিক একশ্রেণির শ্রীবৃদ্ধি ও সমৃদ্ধি ঘটেছে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জেরে তাদের সমৃদ্ধিরই মাত্রা বাড়ছে, এই যা। যারা দ্রুত বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করার স্বপ্ন দেখেন এবং অন্যদের সেই স্বপ্ন দেখান, তারা শুধু রাজধানীকেন্দ্রিক নগর-মহানগরের এবং সেই সঙ্গে শ্রেণিবিশেষের সমৃদ্ধির কথাই ভাবেন- তারা বৃহত্তর জনসংখ্যার গ্রামাঞ্চলের কথা ভাবেন না। সেখানকার আর্থ-সামাজিক উন্নতির ওপর জোর দেন না। গ্রামীণ কুটির শিল্প বিকাশের কথা ভাবেন না। স্বভাবতই সেখানে শিক্ষা ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন যেমন পিছিয়ে আছে, তেমনি একই অবস্থা নারীশিক্ষা ও নারীর অর্থনৈতিক উন্নতির ও পাশাপাশি আধুনিক প্রগতিশীল সংস্কৃতির বিকাশেও পিছুটান। সেখানে প্রাধান্য সামাজিক রক্ষণশীলতা, ফতোয়াবাজি ও নারী-পুরুষের প্রবল বৈষম্যের। কুসংস্কার ও অনাধুনিকতা গ্রামীণ সমাজের সর্বস্তরে বিরাজ করছে। এ অবস্থা থেকে গ্রামাঞ্চলকে মুক্তি দিতে হবে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে। তা না হলে দেশের যা উন্নয়ন তা সর্বজনের না হয়ে শ্রেণিবিশেষের উন্নতি ও অগ্রগতিতে সীমাবদ্ধ থাকবে। প্রসঙ্গত ৯.৩.২০১৮ একটি দৈনিকে জোড়া কলামে শিরোনাম : 'কন্যাসন্তানকে স্বাবলম্বী করে গড়ে তুলুন : প্রধানমন্ত্রী'। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী 'আন্তর্জাতিক নারী দিবস' উপলক্ষে পরিবারের অভিভাবকদের প্রতি এই আহ্বান জানিয়েছেন। দেরিতে হলেও সন্দেহ নেই, সময়োপযোগী আহ্বান। কিন্তু এর সংশ্নিষ্টতা দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির গ্রাম পরিপ্রেক্ষিতের। এ আহ্বান নিশ্চয়ই শুধু শহর বা নগর-মহানগরবাসীদের জন্যই নয়, গ্রামীণ পরিবারের জন্যও বটে। সে ক্ষেত্রে গ্রামের অর্থনৈতিক উন্নতি বিহনে কন্যাসন্তানকে শিক্ষায় কর্মসংস্থান উপযোগী স্বাবলম্বী করে তোলা সম্ভব হবে না সব গ্রামীণ পরিবারের পক্ষে। তাই এ আহ্বান কাজে পরিণত করতে হলে শুধু অভিভাবকই নন, সমাজ ও রাষ্ট্রযন্ত্রের বিশেষ সহযোগিতার প্রয়োজন পড়বে। আর সে সহযোগিতা নিঃসন্দেহে অর্থনৈতিক। অর্থাৎ প্রতিটি গ্রাম অর্থনৈতিক দিক থেকে স্বনির্ভর করে তোলা পূর্বোক্ত আহ্বান বাস্তবায়নের পূর্বশর্ত। এ জন্য দরকার গ্রামের অর্থনীতিতে প্রাণশক্তির সঞ্চার ঘটানো, গ্রামীণ সংস্কৃতিতে প্রকৃত আধুনিকতার বিকাশ ঘটানো, যাতে নারীশিক্ষার প্রসার ঘটে, বাল্যবিয়ে বন্ধ হয়, রক্ষণশীল সমাজপতিদের ফতোয়াবাজি বন্ধ হয়, সর্বোপরি বন্ধ হয় বাল্যবিয়ের সামাজিক ও শাসনতান্ত্রিক চাপ। কিছুদিন থেকে লক্ষ্য করছি কাগজে দু'চারটি করে বাল্যবিয়ে বন্ধের ঘটনা। তাতে ভূমিকা রাখছেন ছাত্রছাত্রী, স্থানীয় প্রগতিশীল তরুণ, ক্ষেত্রবিশেষে শিক্ষক এবং জনপ্রশাসনের কর্মকর্তা। সংবাদ শুভ, সন্দেহ নেই। এ প্রবণতা ও কার্যক্রমের ব্যাপক বিস্তার ঘটানো দরকার। কিন্তু বড় সমস্যা হলো, উল্লিখিত ঘটনাগুলোর অধিকাংশই ছোট-বড় শহরে। আসলে দরকার গ্রামের আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থার আমূল সংস্কার। ওই যে পূর্বোক্ত স্লোগান : 'গ্রাম বাঁচলে দেশ বাঁচবে।' অর্থাৎ গ্রামের উন্নতি ছাড়া দেশের উন্নতি সম্ভব নয়। সম্ভব নয় নারীশিক্ষার প্রকৃত প্রসার ও নারীকে স্বাবলম্বী করা এবং শেষ কথা, বাল্যবিয়ে বন্ধ করা। তা বন্ধ করতে হলে সরকারকে গ্রামোন্নয়নে 'ক্র্যাশ প্রোগ্রাম' নিতে হবে এবং তা যথাসম্ভব আন্তরিকতায়।
ভাষাসংগ্রামী, রবীন্দ্র গবেষক, প্রাবন্ধিক ও কবি

No comments

Powered by Blogger.