ক্লিনটনের সাথে সম্পর্কটা ছিল ক্ষমতার ভয়াবহ অপব্যবহার : মনিকা

সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের সাথে আলোড়ন সৃষ্টিকারী সম্পর্ক নিয়ে আবার মুখ খুললেন হোয়াইট হাউস ইন্টার্ন মনিকা লিউইনস্কি। তিনি জানিয়েছেন, ঘটনাটি ছিল ক্লিনটনের ক্ষমতার ভয়াবহ অপব্যবহার। তিনি ভ্যানিটি ফেয়ার ম্যাগাজিনে এক আর্টিক্যালে ওই সম্পর্কের ওপর আলোকপাত করেছেন। ঘটনার সময় তার বয়স ছিল ২২ বছর। আর ক্লিনটন ছিলেন তার চেয়ে ২৭ বছরের বড় এবং দুনিয়ার সবচেয়ে ক্ষমতাবান ব্যক্তি। মনিকার বয়স এখন ৪৪ বছর। এ বছরই দু’দশক পূর্ণ হলো মনিকাগেট কেলেঙ্কারির। ওই ঘটনার কারণে তিনি বিখ্যাত হয়ে গেলেও তার মধ্যে পিটিএসডি সৃষ্টি হয়। বিল ক্লিনটন আর মনিকার সম্পর্কটি ১৯৯৮ ও ১৯৯৯ সালে মার্কিন সংবাদমাধ্যমে বিপুলভাবে প্রচাতি হয়। ক্লিনটন প্রথমে অস্বীকার করলেও পরে মনিকার সাথে ‌'অযথার্থ ঘনিষ্ঠ দৈহিক সম্পর্কের' কথা স্বীকার করতে বাধ্য হন। তিনি অল্পের জন্য অভিশংসন থেকে রক্ষা পেয়েছিলেন। মনিকা জানিয়েছেন, #মিটু আন্দোলন তাকে নিজের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে নতুন করে ভাবতে শিখিয়েছে। ৪৪ বছরের টিভি তারকার কথায়, ‘‘প্রেসিডেন্ট আর হোয়াইট হাউসের এক ইন্টার্নের মধ্যে যে ক্ষমতার বিপুল ফারাক থাকবেই, তা তখন না বুঝলেও এখন বুঝতে পারি। আমার মতামত নিয়ে সেই সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল কি না, এই প্রশ্নটা সত্যিই অপ্রাসঙ্গিক।’’ তিনি সাবেক স্পেশ্যাল প্রসিকিউটর কেনেথ স্টার সম্পর্কেও মন্তব্য করেন। দু’জনের কখনো দেখা হয়নি। তাই বলে তারা যে পরস্পরের অপরিচিত, সে কথা একেবারেই বলা যাবে না। কুড়ি বছর আগের কথা। কিন্তু সে সব দিন তো মনিকা এখনো ভোলেননি। ভুলবেনই বা কী করে! আর এখন, ভদ্রলোকের মুখোমুখি হয়ে, তিনি ভেবেই পাচ্ছিলেন না, কী বলবেন। ‘‘জিভের ডগায় যদিও তখন চলে এসেছে— আপনার জন্যই তো আমাকে নরকযন্ত্রণা ভোগ করতে হয়েছিল। কিন্তু রেস্তরাঁয়, সকলের সামনে, তো এ সব কথা বলা যায় না,’’ বললেন মনিকা। তত ক্ষণে অবশ্য করমর্দনের জন্য হাত এগিয়ে দিয়েছেন ভদ্রলোক নিজেই— ‘‘হ্যালো, আমি কেন, কেনেথ স্টার।’’ সাবেক স্পেশ্যাল প্রসিকিউটরের সঙ্গে তার প্রথম মোলাকাতটা এ ভাবেই হয়েছিল, সম্প্রতি জানিয়েছেন মনিকা লিউইনস্কি। হোয়াইট হাউসের ইন্টার্ন মনিকার সঙ্গে তার যৌন সম্পর্ক নিয়ে মিথ্যা সাক্ষ্যের জন্য প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিন্টনের বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়া শুরু করেছিলেন এই কেনেথ স্টার-ই। গত বছর বড়দিনের আগের সন্ধ্যা। নিউ ইয়র্কের একটা রেস্তরাঁয় কেনেথের সঙ্গে হঠাৎ দেখা হয়ে যায় মনিকার। সেই সাক্ষাৎ সম্পর্কে একটি পত্রিকায় মনিকা লিখেছেন, ‘‘টুপি পরা লোকটির মধ্যে বেশ একটা দার্শনিক ভাব রয়েছে। কথাও বলছিলেন যথেষ্ট বাৎসল্যের সুরে। কিন্তু কয়েক মিনিট কথা বলার পরেই একটা অস্বস্তি হতে শুরু করে। যে ভাবে আমার হাত ও কনুই স্পর্শ করছিলেন, সেটাও যথেষ্ট অস্বস্তিজনক।’’ মনিকার কথায়, ‘‘কেনেথ আমায় জিজ্ঞাসা করলেন, আমি ঠিক আছি তো? তার প্রশ্নের মধ্যে যেন একটা খোঁচা লুকিয়ে ছিল, এত কিছুর পরে তো আমার ভালো থাকার কথা নয়!’’ মনিকা লিখেছেন, ‘‘সে দিন রেস্তরাঁয় আমার সঙ্গে আমার পরিবারের বেশ কয়েকজন ছিলেন। সকলের সঙ্গে কেনেথের আলাপ করিয়ে দিই। তাকে বোঝাতে চেষ্টা করছিলাম, শুধু আমি নয়, আমার পরিবারের সকলের জীবনই দুর্বিষহ করে তুলেছিলেন উনি। কিন্তু উনি শুধু বললেন, ‘পরিস্থিতিটা সত্যিই দুঃখজনক ছিল’। আমার মাকে হুমকি দেয়ার জন্য, আমার বাবার ডাক্তারি প্র্যাকটিস সম্পর্কে প্রশ্ন তোলার জন্য এক বারের জন্যও ক্ষমা চাইলেন না।’’

No comments

Powered by Blogger.